ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১

বন্ধ্যাত্বের জন্য কি শুধু নারীই দায়ী?

তবিবুর রহমান

প্রকাশিত : ০৫:৩১ পিএম, ২১ জানুয়ারি ২০১৯ সোমবার | আপডেট: ০৭:০৮ পিএম, ২১ জানুয়ারি ২০১৯ সোমবার

বন্ধ্যাত্বের কারণে অনেক পরিবারে আজ হাসির চিহৃ মিলিয়ে যাচ্ছে। সন্তান না হওয়ার ফলে নারী পুরুষ একে অপরকে ক্রমাগত দায়ী করছে। বহু দম্পতির কাছে বন্ধ্যাত্ব এখন বড় ধরনের একটি সমস্যা। এর প্রভাব শুধু দাম্পত্য জীবনেই নয়- শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক ক্ষেত্রেও পড়ছে।          

তাহলে সন্তান না হওয়ার পেছনে বা বন্ধ্যাত্বের জন্য দায়ী কে? শুধু কী নারী দায়ী? বন্ধ্যাত্বের মূল কারণ নির্ণয়  করতে গেলে নারী পুরুষ উভয়কে আলাদাভাবেই ভাগ করে নিতে হবে। এর জন্য এককভাবে কেউ দায়ী নয়। অনেক সময় দেখা যায় বন্ধ্যাত্বের জন্য নারীকে দায়ী করা হয়। এক্ষেত্রে সঠিক কারণ নির্ণয়ে দেখা যায় পুরুষ দায়ী। সবমিলে নারী-পুরুষ উভয়েরই সমস্যা থাকতে পারে।      

এছাড়া আরও কিছু কারণে বন্ধ্যাত্ব দেখা দিতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ একটু সচেতন হলে বন্ধ্যাত্বের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। বন্ধ্যাত্বের সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় অবস্ এন্ড গাইনী বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. নুসরাত আফরীন নীলা সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন একুশে টিভি অনলাইন প্রতিবেদক তবিবুর রহমান

একুশে টিভি অনলাইন: বন্ধ্যাত্বের জন্য কি শুধু নারী দায়ী ?

ডা. নুসরাত আফরীন নীলা: বন্ধ্যাত্বের কারণসমূহের মধ্যে মহিলা ও পুরুষ দুজনকেই অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। শুক্রানুর (XY) মাধ্যমে ফার্টিলিটি হয়। সিমেন এনালাইসিস এর মাধ্যমে শুক্রানু পর্যবেক্ষণ করা হয়। এর মাধ্যমে বন্ধ্যাত্বের জন্য দেখা হয় নারী বা পুরুষ দায়ী কি না।   

একুশে টিভি অনলাইন: স্বাভাবিক শুক্রাণুর বৈশিষ্ট্য কেমন হবে?

ডা. নুসরাত আফরীন নীলা: স্বাভাবিক শুক্রাণুর বৈশিষ্ট্য হলো,
I. সিমেন ভলিউম দুই মিলিলিটার অথবা এর থেকে বেশি।
II. বিশ মিলিলিটার শুক্রাণু এক মিলিলিটার এ থাকতে হবে।
III. ৪০ মিলিলিটার শুক্রাণু প্রতি বীর্যপাতের পর থাকতে হবে।
IV. ৫০ শতাংশ শুক্রাণুর গতিবিধি সচল থাকতে হবে।
V. অন্তত ৩০ শতাংশ শুক্রাণু গঠনগতভাবে ঠিক থাকতে হবে।

একুশে টিভি অনলাইন: আমরা জানি নারীর পাশাপাশি পুরুষও বন্ধ্যাত্বের জন্য দায়ী। পুরুষের বন্ধ্যাত্বের কারণগুলো বলবেন কি?

ডা. নুসরাত আফরীন নীলা: I. অলিগোস্পারমিয়া: বিশ মিলিয়ন শুক্রাণু যদি এক মিলিলিটার-এর মধ্যে না থাকে।
II. Asthenozoospermia (or Asthenospermia): শুক্রাণুর গতিশীল কর্মক্ষমতা যদি ৫০ শতাংশ কম হয়।
III. টেরাটোসপেরমিয়া: গঠনগতভাবে ঠিক শুক্রাণুর সংখ্যা যদি ৩০ শতাংশের কম হয়।
IV. Azoospermia: বীর্যপাতের পরে যদি কোন শুক্রাণু না আসে।
V. শুক্রাণু তৈরি হতে যে সব হরমোন প্রয়োজনীয় সেগুলোতে সমস্যা থাকতে পারে।
যেমনঃ
• Follicle-stimulating hormone (FSH)
• Luteinizing Hormone (LH)
• Testosterone
• Prolactin
VI. Follicle-stimulating hormone (FSH) বেশী থাকলে শুক্রাণু তৈরি হতে পারে না।
VII. FSH কম কিন্তু LH ঠিক তাহলে hypogonadotropic hypogonadism বলে।
VIII. FSH ঠিক থাকলে কিন্তু শুক্রাণু নেই (Azoospermia) তাহলে ধরে নিতে হবে প্রতিবন্ধকতা।
IX. LH বেশী কিন্তু testosterone কম তাহলে Leydig cell ঠিকমত কাজ করতে পারছে না।
X. শুক্রাণুর জীনগত সমস্যা থাকতে পারে (X- Chromosome Depletion) যাকে আমরা Klinefelter Syndrome বলি।

XI. পূর্বে Mumps Influenza, Sexual Transmitted Disease ( Chlamydia ) হয়েছিলো কিনা।
XII. কোন ধরণের ঔষুধ সেবন করছে কিনা। যেমন
• Steroid
• Spironolactone
• Anticancer MTX sulfasalazine
• Antihypertensive – reserpine
XIII. Testis-এ কোন ধরণের অসুস্থতা আছে কিনা
• Tuberculosis
• Tumour
• Syphilis
XIV. কখনো কোন রেডিয়েশন পেয়েছে কিনা।
XV. এখন ডায়াবেটিস মেলিটাস,থাইরয়েড ডিসঅর্ডার- এ আক্রান্ত কিনা।
XVI. গরম তাপমাত্রায় কাজ করে কিনা।
XVII. স্মোকিং অথবা আলকোহলিজম- এর বদঅভ্যাস আছে কিনা।

যদি কারণগুলো খুজে বের করে রোগ অনুযায়ী বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ গ্রহণ করা যায় তাহলে পুরুষদের কারণে যে বন্ধ্যাত্বকরণ তা ৫০ শতাংশ পর্যন্ত দূরীকরণ সম্ভব।

একুশে টিভি অনলাইন: আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। 

ডা. নুসরাত আফরীন নীলা: একুশে টিভি পরিবারকেও ধন্যবাদ।

 

টিআর/