ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১৩ ১৪৩১

ভোলাহাটে রেকর্ড পরিমাণ রেশম উৎপাদন

ফারুক আহমেদ চৌধুরী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

প্রকাশিত : ১২:০৮ পিএম, ২২ জানুয়ারি ২০১৯ মঙ্গলবার

চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলায় চলতি অর্থবছরে রেশমের উৎপাদন রেকর্ড ছাড়িয়েছে। রেশমের আশানুরূপ ফলনে চাষীদের মুখে হাসি ফুটেছে। এ বছর ২২ হাজার ডিম থেকে গুটি উৎপাদন হয়েছে ১৭ হাজার ৬০০ কেজি।

ভোলাহাট রেশম বীজাগার সূত্রে জানা গেছে, ভোলাহাট উপজেলায় অগ্রহায়ণী ক্রপে ২২৩ রেশম চাষি রয়েছেন। এ অঞ্চলের মাটি রেশম চাষের জন্য খুবই উপযোগী। প্রায় বিনা খরচে অধিক লাভ হওয়ায় চাষিরা রেশম চাষে ঝুঁকছেন। রেশম চাষের জন্য বিনা মূল্যে তুঁত গাছের চারাসহ সব ধরনের উপকরণ বিনা মূল্যে প্রদান করছে রেশম বোর্ড। তুঁত গাছ পরিত্যক্ত জায়গা ও বিভিন্ন সড়কের ধারে চাষ করা যায়। যে কারণে ভূমিহীন মানুষও এর চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। বাণিজ্যিক সম্ভাবনা থাকায় এর মাধ্যমে তারা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, হচ্ছেন স্বাবলম্বী।

ভোলাহাট আঞ্চলিক রেশম গবেষণা কেন্দ্রের অধীন আগ্রহী চাষিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে ২২৩ চাষি তুঁত চাষ করেছেন। তাদের মধ্যে ২২ হাজার ডিম বিতরণ করে ভোলাহাট রেশম বীজাগার। এ ডিম থেকে গুটি উৎপাদন হয়েছে ১৭ হাজার ৬০০ কেজি। প্রতি কেজি গুটি ৩৫০ টাকা হারে গবেষণা কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ ও বিভিন্ন সিল্ক মিলের মালিকরা কিনে নিয়ে যান। এ বছর উৎপাদিত রেশম গুটির দাম প্রায় ৬৬ লাখ টাকা।

চরধর্মপুর গ্রামের রেশম চাষি সমিরুদ্দিন জানান, এ বছর রেশমের ভালো ফলন হয়েছে। অগ্রহায়ণী ক্রপে গত বছরের থেকে এ বছর তিনগুণ ফলন বেশি হয়েছে। দামও ভালো। মণপ্রতি ১৫ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে রেশম গুটি। এ বছর ভালো লাভ হওয়ায় বেশ খুশিতে রয়েছে তারা। ভোলাহাট রেশম বোর্ড থেকে তারা ঘর ও তুঁত চারাসহ বিভিন্ন সহযোগিতা পেয়েছেন।

রেশম চাষীরা বলছেন , অন্য ফসলের সাথে বছরে চারবার আমরা রেশম চাষ করে আর্থিকভাবে অনেকটা লাভবান হয়েছি। সামনেও আমরা রেশম চাষ অব্যাহত রাখব। তারা বলেন, রেশম গবেষণাকেন্দ্র থেকে আমাদের বিনামূল্যে রেশম পোকা সরবরাহ করা হয়। রেশম চাষে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। নিয়মিত পরামর্শ ও দেখভাল করা হয়। যে কোনো প্রয়োজনে খবর জানানোর সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসেন। আমরা কিভাবে অল্প চাষে এবং স্বল্প পরিসরে অধিক মুনাফা পেতে পারি সে ব্যাপারে পরামর্শ দেন। তবে তুঁত জমির অভাব থাকায় রেশম চাষে আগ্রহ কমছে।

এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কৃষি গবেষক ড. মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রাকৃতিক রেশম বস্ত্রকে বস্ত্রের রাণী বলা হয়। এক সময় বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে বিপুল পরিমাণ রেশম রপ্তানী হতো। তবে নানান কারণে সম্ভাবনাময় এ খাতটির অবস্থা ভালো নেয়। বাংলাদেশ বছরে প্রায় ৫৫ লাখ বেল (১৭০ কেজিতে এক বেল) কার্পাস আমদানি করে থাকে, যার ৭০ শতাংশই ভারত থেকে আসে।

প্রয়োজনীয় কার্পাস আমদানি করতে হচ্ছে ফলে দেশের টাকা চলে যাচ্ছে বিদেশে। তিনি বলেন রেশম খাতে সঠিক উদ্যোগ ও দীর্ঘমেয়াদী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা গেলে রেশম বস্ত্রখাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তাছাড়া গ্রামীণ অর্থনীতিতে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে এই রেশমের। অন্যান্য উৎপাদনকারী দেশের তুলনায় বাংলাদেশী রেশম অধিক টেকসই, উজ্জ্বল ও আরামদায়ক। প্রত্যান্ত অঞ্চলের কৃষকদের রেশম চাষে সম্পৃক্ত করা গেলে ঐতিহ্যবাহী রেশম উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন সম্ভব।
জেলা রেশম সম্প্রসারণ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক কাজী মাসুদ রেজা জানান, খরচ কম হওয়া এবং অল্প সময়ের চাষে বেশি মুনাফা পাওয়া যায় বলে জন্য গ্রামাঞ্চলের মানুষ রেশম চাষে আগ্রহী হচ্ছে । একে আরও উন্নত করতে সরকারীভাবে চাষের নানা সরঞ্জাম, সার, কীটনাশক দেওয়া হচ্ছে। সঙ্গে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। রেশম পোকার বেড়ে ওঠার জন্য ঘর তৈরিতেও সাহায্য করছে সরকার। রেশম চাষের সাফল্যে খুশি এখানকার চাষিরা। ভোলাহাটে পর্যাপ্ত তুঁত গাছ লাগানোর জমি না থাকায় বাম্পার উৎপাদন হওয়া সত্ত্বেও চাষীরা রেশম চাষে পিছিয়ে পড়ছেন। তিনি বলেন সরকারী ব্যবস্থাপনায় তুঁত গাছ লাগানোর উপযুক্ত জমির ব্যবস্থা করা গেলে আগামীতে রেশমের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

আরকে//