ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

মানুষের অস্থিতেও রক্তনালীর সন্ধান

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:৫৫ পিএম, ২৪ জানুয়ারি ২০১৯ বৃহস্পতিবার

এই প্রথমবারের মতো জানা গেল, মানবদেহে অস্থির ভেতরেও আছে শিরা, ধমনি। এগুলোকে বলা হয় রক্তনালি। সেই রক্তনালী থাকে যে কোনও অস্থির পিঠের দিকে (সারফেস)। সেখান থেকে সেই রক্তনালীগুলো চলে যায় অস্থির ভিতরের দিকের গহ্বরে (ক্যাভিটি)।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, অস্থির ভিতরেও ওই রক্তনালী আবিষ্কৃত হওয়ার ফলে এবার অস্টিওপোরোসিসের মতো অস্থির বিভিন্ন ধরনের জটিল অসুখ কেন হয়, তা কীভাবে বাড়ে, তার উপর আলোকপাত সম্ভব হতে পারে। মানবদেহের নিজস্ব প্রতিরোধী ব্যবস্থা ঠিকঠাক কাজ করছে কি না, তা বুঝতেও ওই রক্তনালীগুলো সহায়ক হয়ে উঠতে পারে। এই আবিষ্কারের গবেষণাপত্রটি বেরিয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘নেচার-মেটাবলিজম’-এ।

জার্মানির ডুইসবার্গ-এসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ম্যাথিয়াস গানঝার বলেছেন, ‘আমরা অবাক হয়ে যাচ্ছি এটা দেখে যে, এখনও মানব শরীরের বহু অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কথা আমরা জানি না। আমরা মানবদেহের এমন একটা জায়গায় রক্তনালী আবিষ্কার করেছি, যার হদিস এর আগে মেলেনি।’ গত বছর আমাদের শরীরে পিত্তনালীর কাছে এক ধরনের নালী আবিষ্কৃত হয়েছিল। তার ভিতর দিয়ে পানি ও বিভিন্ন ধরনের তরল যাওয়া-আসা করে। ওই নালী ক্যানসার চিকিৎসায় কার্যকর ভূমিকা নিতে পারে বলে জানিয়েছিলেন শারীরতত্ত্ববিদরা।

গানঝার ও তার সহযোগী গবেষকরা বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক প্রয়োগ করে ইঁদুরদের অস্থিতে প্রথম ওই বিশেষ ধরনের রক্তনালীর হদিস পান। ইঁদুরের পায়ের অস্থিতে। যার আকার দেশলাই কাঠির মতো। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় এই রক্তনালীগুলোকে বলা হয়, ‘ট্রান্স-কর্টিকাল ভেসেল্‌স’।

এর আগে অস্থিতে যে রক্তনালীর হদিস মিলেছিল, সেগুলো হয় থাকে অস্থির দু’টি প্রান্তের দিকে অথবা থাকে অস্থির মাঝামাঝি অংশ পর্যন্ত। কিন্তু সদ্য আবিষ্কৃত রক্তনালীগুলো থাকে গোটা অস্থিতে। আর তাদের মাধ্যমেই গোটা অস্থিতে রক্ত সংবহন হয়।

পরে আমাদের জঙ্ঘা (থাই)-র অস্থিতেও এই রত্তনালীর হদিস মিলেছে বলে জানিয়েছেন গানঝার। তবে মানবদেহের বিভিন্ন অস্থিতে এমন রক্তনালী ঠিক কতগুলো রয়েছে, সেই সংখ্যাটা এখনও জানা যায়নি।

অস্থির মধ্যে যেখানে মজ্জা থাকে, সেই অংশটির গায়েই লেগে থাকে এই রক্তনালীগুলো। আর এই অস্থিমজ্জাতেই গড়ে ও বেড়ে ওঠে আমাদের দেহের প্রতিরোধী ব্যবস্থার কোষ, কলাগুলো।

গবেষকরা এও দেখেছেন, ইঁদুরের ক্ষেত্রে এই সদ্য আবিষ্কৃত রক্তনালীগুলো ধরেই প্রতিরোধী কোষ, কলাগুলো বেরিয়ে এসে শত্রু-প্রতিরোধে সক্রিয় হয়ে ওঠে। গানঝারের ধরাণা, মানবদেহেও প্রতিরোধী ব্যবস্থার কোষ, কলাগুলো ওই রক্তনালী ধরে বেরিয়ে আসতে পারে।

গত বছর আর এক দল গবেষক দেখেছিলেন, ইঁদুরের মস্তিষ্কের কলাগুলোর মধ্যেও রয়েছে এই রক্তনালীগুলো। যা দিয়ে ইঁদুরের খুলি তৈরি হয়, সেই প্লেটগুলোর ভিতরের অংশে থাকা অস্থিমজ্জাতেও এই রক্তনালীগুলোর হদিস মিলেছিল।

সূত্র: আনন্দবাজার

একে//