ইলিশের উৎপাদন বাড়লেও কমেনি দাম
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৬:০২ পিএম, ২৫ জানুয়ারি ২০১৯ শুক্রবার | আপডেট: ০৭:১২ পিএম, ২৫ জানুয়ারি ২০১৯ শুক্রবার
(ফাইল ফটো)
দুই বছরের ব্যবধানে প্রাকৃতিক উৎসের মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ চতুর্থ থেকে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে। সেই সঙ্গে খুশির সংবাদ হলো ইলিশ উৎপাদনে বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বে প্রথম। করেছে ইলিশ আহরণেও রেকর্ড। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশে ইলিশ উৎপাদিত হয়েছে ৫ লাখ ১৭ হাজার টন। যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ২১ হাজার টন বেশি। মৎস্য অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। কিন্তু ইলিশের উৎপাদন বাড়লেও সেই তুলনায় কমে নাই দাম। আরেকটি চিন্তার বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে, সার্বিকভাবে ইলিশের উৎপাাদন বাড়লেও পদ্মায় কমেছে ইলিশ। এটা নিয়ে দুঃচিন্তায় পড়েছেন ইলিশ বিশেষজ্ঞরা।
মৎস্য অধিদপ্তরের হিসাবে গত বছর দেশে ইলিশের উৎপাদন হয়েছিল ৫ লাখ ১৭ হাজার টন, যার মধ্যে পদ্মার অবদান ছিল সাড়ে ৩ হাজার টন। গত দেড় যুগে ইলিশের মোট উৎপাদন প্রায় তিন গুণ বাড়লেও পদ্মার অবদান কমছে।
সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী ইলিশের ডিম পাড়া নির্বিঘ্ন করতে এবং মা ইলিশ ধরা বন্ধে বছরের ৭ থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ থাকে। এই সময়ে বঙ্গোপসাগরের মোহনা ও মেঘনায় মা ইলিশের ডিম পাড়ার হার ৫৯ শতাংশ, সেখানে পদ্মায় ১৩ শতাংশ। কিন্তু ১০ নভেম্বরের মধ্যে ৮০ শতাংশ পদ্মার ইলিশ ডিম ছাড়ছে। ওই সময়ে ইলিশ ধরায় কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকায় ডিমওয়ালা এসব মাছ ধরা পড়ছে। পদ্মার ইলিশ কমে যাওয়ার পেছনে এটি বড় কারণ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশ মত্স্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই)-এর তথ্য মতে, ইলিশ মাছ সারা বছরই কমবেশি ডিম ছাড়ে। প্রধান প্রজনন মৌসুম হচ্ছে আশ্বিন (অক্টোবর) মাস। প্রাথমিক গবেষণার ভিত্তিতে ইতিপূর্বে আশ্বিনের ভরা পূর্ণিমার আগে ও পরের ১০ থেকে ১৫ দিন মা ইলিশ আহরণ বন্ধ রাখা হলেও ২০১৬ সালে তা ২২ দিন করা হয়েছে- যা ইলিশ উত্পাদন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রেখেছে।
সংস্থাটির গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২২ দিন মা ইলিশ সুরক্ষিত হওয়ায় ডিম দেওয়া ইলিশের হার ছিল ৪৬.৪৭ শতাংশ - যা ২০১৭-১৮ অর্থবছরে হয়েছে ৪৭.৭৪ শতাংশ। এতে করে ২০১৭-১৮ সালে ৩৬ হাজার কোটি জাটকা ইলিশ পরিবারের সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে। অথচ ২০০৮-০৯ সালে যখন ১১ দিন মা ইলিশ আহরণ বন্ধ ছিল তখন ডিম দেওয়া ইলিশের হার ছিল মাত্র ১৭.৬২ শতাংশ।
ইলিশের উৎপাদন যে তুলনায় বেড়েছে সেই তুলনায় কমেনি দাম। বরং আগের চেয়ে দাম বেড়েেই যাচ্ছে। এ কারণ তেমন খোঁজে না পাওয়া গেলেও বিক্রেতারা অধিক মুনাফা করছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। এছাড়াও পরিবহণ খাতে অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে বেড়ে যায় ইলিশের দাম। ফলে ইলিশের উৎপাদন বাড়ানোতে যেমন সাফল্য রয়েছে তেমনি সাধারণ মানুষের কাছে কম মূল্যে পৌঁছানো বড় দায়িত্ব বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। সাধরণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে ইলিশকে নিয়ে আসতে পারবে সংশ্লিষ্টরা এমনটাই দাবি সাধারণ মানুষের।
গবেষকেরা বলছেন, সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী ইলিশের ডিম পাড়া নির্বিঘ্ন করতে এবং মা মাছ ধরা বন্ধে বছরের ৭ থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ থাকে। এই সময়ে বঙ্গোপসাগরের মোহনা ও মেঘনায় মা ইলিশের ডিম পাড়ার হার ৫৯ শতাংশ, সেখানে পদ্মায় ১৩ শতাংশ। কিন্তু ১০ নভেম্বরের মধ্যে ৮০ শতাংশ পদ্মার ইলিশ ডিম ছাড়ছে। ওই সময়ে ইলিশ ধরায় কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকায় ডিমওয়ালা এসব মাছ ধরা পড়ছে। পদ্মার ইলিশ কমে যাওয়ার পেছনে এটি বড় কারণ হিসেবে বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান জানান, বিজ্ঞানীদের গবেষণা এবং তাদের পরামর্শকে আমলে নিয়ে আমরা দেশের ইলিশ রক্ষায় অনেকগুলো উদ্যোগ নিয়েছি, যার সফলতা হিসেবে দেশে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে। পদ্মায় ইলিশ যদি নভেম্বরে ডিম পাড়ে, তাহলে আমরা অবশ্যই ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময়কাল পদ্মার ক্ষেত্রে নভেম্বরে করব।
এসএইচ/