ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

বিদ্যুৎ সংযোগের অভাবে ব্যাহত হচ্ছে হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটের কাজ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:৪৩ পিএম, ২৫ জানুয়ারি ২০১৯ শুক্রবার

রাজধানী ঢাকায় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারিতে বিশ্বমানের চিকিৎসা ব্যবস্থা রেখে নির্মাণ করা হয়েছে শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউট। গত বছর ২৪ অক্টোবর এটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু শুধু বিদ্যুৎ সংযোগের অভাবে থমকে আছে এই প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রায় সব যন্ত্রপাতি চলে এলেও, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও ডিপিডিসির প্রশাসনিক জটিলতায় মিলছে না বিদ্যুৎ সংযোগ বলে অভিযোগ রয়েছে।

তবে, মেয়র বলছেন, রাস্তা কাটার অনুমতি দেওয়া হয়েছে কয়েক মাস আগেই। কিন্তু ডিপিডিসি বলছে, প্রকল্পে নির্ধারিত খরচের চেয়ে কয়েকগুন বেশি খরচ চাওয়ায়; কাজ শুরু করা যাচ্ছে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অবকাঠামোর কাজ শেষ হলেও, ভবনটিতে এখন পর্যন্ত মেলেনি বিদ্যুৎ সংযোগ। শতকোটি টাকায় আনা যন্ত্রপাতিও বাক্সবন্দি।

বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য কাঁটাবন সাবস্টেশনের সঙ্গে ঢাকা মেডিকেল সাবস্টেশন সংযোগ করতে হবে। সেজন্য দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাছে রাস্তা কাটার অনুমতি চাওয়া হয়েছে বছর দেড়েক আগে। ডিপিডিসি বলছে, এজন্য সিটি করপোরেশন যা খরচ ধরেছে তা প্রকল্পে নির্ধারিত ব্যয়ের কয়েকগুন। ফলে বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ শুরুই হয়নি। চলছে চিঠি চালাচালি।

তবে মেয়র বলছেন, কোনো টানাপোড়েন নেই। রাস্তা কাটার অনুমতি দেওয়া হয়েছে কয়েকমাস আগেই। শুকনো মৌসুমের জন্য কিছুদিন অপেক্ষা করতে বলা হয়েছিল।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সংলগ্ন চানখাঁরপুল এলাকায় মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের পাশে ১২ তলা ‘শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট’ এ ৫০০ শয্যা, ৫০টি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) এবং ১২টি অপারেশন থিয়েটার রয়েছে। ইনস্টিটিউটের তিনটি ব্লকে বার্ন ইউনিট, প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট এবং অ্যাকাডেমিক ভবন রয়েছে।

এই ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়কারী সামন্ত লাল সেনই যে এ ধরনের একটি চিকিৎসা ও শিক্ষাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছিলেন, সে কথা প্রধানমন্ত্রী বলেন।

১৯৮৬ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একটি ওয়ার্ডে ছয়টি বেড নিয়ে বার্ন বিভাগ চালু করেন দেশের প্রথম প্লাস্টিক সার্জন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ। অধ্যাপক সামন্ত লালের চেষ্টায় ২০০৩ সালে সেটি ৫০ বেডের পূর্ণাঙ্গ ইউনিট হিসেবে কাজ শুরু করে।

২০১০ সালের ৩ জুন পুরান ঢাকার নিমতলীতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১২৭ জনের মৃত্যুর পর বার্ন ইউনিটের সক্ষমতা আরও বাড়ানোর বিষয়টি গুরুত্ব পায়। এ ইউনিটের বেড বেড়ে প্রথমে ১০০ ও পরে ৩০০ হয়।

এরপর দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বর্ষপূর্তি ঘিরে বিএনপির আন্দোলনের মধ্যে দেশগুড়ে পেট্রোল বোমায় দগ্ধ হাজার হাজার রোগী এই বার্ন ইউনিট থেকেই চিকিৎসা নেন। সে সময় এই ইউনিটের সক্ষমতা আরও বাড়ানোর বিষয়টি আলোচনায় আসে।

এর ধারাবাহিকতায় চানখাঁরপুলের পুরনো টিবি হাসপাতালকে মহাখালীর বক্ষব্যাধি হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত করে ওই জমিতে ৫০০ শয্যার এই ইনস্টিটিউট গড়ে তোলার প্রাথমিক পরিকল্পনা নেওয়া হয়।

২০১৫ সালের ২৪ নভেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পায় ওই প্রকল্প। এসব বিষয় বিবেচনা করেই ২০১৫ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় প্লাস্টিক সার্জারিবিষয়ক এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে আন্তর্জাতিক মানের একটি বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট স্থাপনের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সারা দেশের কয়েক লাখ পোড়া রোগীকে সেবা দিতে দেড় হাজার বিশেষজ্ঞ সার্জন তৈরির লক্ষ্য নিয়ে ২০১৬ সালের ৬ মার্চ এই ইনস্টিটিউটের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন তিনি।

উদ্বোধনী আনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এ ইনস্টিটিউটের জন্য অনেক আধুনিক যন্ত্রপাতি কেনা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে আমরা এটা করে যাব এবং বিশ্বমানের একটা ইনস্টিটিউট হিসাবে যেন গড়ে ওঠে, সেই ব্যবস্থা অবশ্যই আমরা করব। এই চিকিৎসা কেন্দ্রের নার্সদের জন্যও বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার কথা বলেন ওই অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা।

এসএইচ/