ঢাকা, বুধবার   ২৭ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১

জনমত সমীক্ষা: মমতার মহাজোটের কারণে দুঃচিন্তায় মোদি

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:১৩ পিএম, ২৬ জানুয়ারি ২০১৯ শনিবার

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক ফর্মুলাতেই বিজেপি নাজেহাল হেয়ে পড়েছে বলে অনেকেই মনে করছেন। ব্রিগেডে গোটা দেশের বিরোধী দলগুলিকে এক করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জোটযাত্রার সূচনা। আর নতুন করে যুক্ত হয়েছে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী সক্রিয় রাজনীতি। যাবতীয় এই সমীকরণই ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএকে। সর্বভারতীয় কয়েকটি চ্যানেলের করা জনমত সমীক্ষায় দেখাচ্ছে, তীরে এসে তরী ডুবতে পারে মোদির।

এবিপি নিউজ-সি ভোটারের সমীক্ষা অনুযায়ী, বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ আসন্ন ভোটে ৫৪৩টি আসনের মধ্যে পেতে চলেছে ২৩৩টি। কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএর জন্য তারা ধরেছে ১৬৭টি আসন। পাশাপাশি আঞ্চলিক দলগুলির ঝুলিতে রয়েছে ১৪৩টি। অর্থাৎ কংগ্রেসের সঙ্গে আঞ্চলিক দলগুলির মহাজোট হলে হেলায় তারা নরেন্দ্র মোদির বিজেপিকে হারিয়ে দেবে। একই ছবি দেখা যাচ্ছে ইন্ডিয়া টুডে-কার্বির সমীক্ষাতেও। এক্ষেত্রে জনমত অনুযায়ী, এনডিএর ভাগ্যে জুটছে ২৩৭টি আসন। ইঙ্গিত স্পষ্ট, এই সমীকরণে কংগ্রেস এবং আঞ্চলিক দলগুলির মহাজোটই শেষ পর্যন্ত দিল্লির মসনদের বাজি মাত করবে। শুধু রিপাবলিক টিভির সমীক্ষায় বিজেপির আসন সংখ্যা কমলেও শেষমেশ মোদির জন্য প্রধানমন্ত্রীর আসনটি বরাদ্দ রয়েছে। কারণ তাদের সমীক্ষা অনুযায়ী, বিজেপি লোকসভা ভোটে এককভাবে পেতে চলেছে ২১৮টি আসন। সেক্ষেত্রে টিআরএস, বিজেডি এবং আর কয়েকটি ছোট দলের শক্তি যোগ করলেই এনডিএর আসন সংখ্যা হয়ে যাবে ২৮৪। এই সমীক্ষা অনুযায়ী কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ এবং অন্যান্য আঞ্চলিক দলগুলি মিলেও সংখ্যাটা না কি ২৫৭ ছাড়াতে পারবে না।

ভোট সমীকরণ যে পথে যাচ্ছে, তাতে বিজেপি সবচেয়ে বড় ধাক্কা খেতে পারে উত্তরপ্রদেশে। গত লোকসভা নির্বাচনে এই রাজ্য থেকেই ৮০টির মধ্যে ৭১টি আসন দখল করেছিল। অর্থাৎ মোদিকে চারভাগের একভাগ আসন জুগিয়েছিল উত্তরপ্রদেশ। শুধু তাই নয়, সমগ্র উত্তর ভারত তথা গোবলয় থেকে প্রচুর ভোট পেয়েছিল বিজেপি। ব্যতিক্রম ছিল জয়ললিতা এবং অবশ্যই মমতার পশ্চিমবঙ্গ। উচ্চবর্ণের হিন্দু তো বটেই, দলিত এবং মুসলিম ভোটও মোদির ঝুলি ভরাতে কার্পণ্য করেনি।

এবার কিন্তু চিত্রটা অনেকটাই ভিন্ন। প্রথমত, মোদিঝড় বলে এই মুহূর্তে আর তেমন কিছু নেই। তার ওপর অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিজেপি সরকার সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা অনেকটাই হারিয়ে ফেলেছে। পেট্রল ও ডিজেলের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আগুন লেগেছে সাধারণের রান্নাঘরে। তার ওপর নোট বাতিল এবং জিএসটি। যা নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং পর্যন্ত বলেছেন, জিএসটি নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই। কিন্তু কোনও রকম প্রস্তুতি ছাড়াই এটি কার্যকর করে মোদি সরকার অপরিণামদর্শিতার পরিচয় দিয়েছে। একেবারে গোড়াতেই এই গলদটা ধরে ফেলেছিলেন মমতা। তাই তার দাওয়াই, যে রাজ্যে যে দল শক্তিশালী, তারাই প্রার্থী দিক। বাকিরা সমর্থন করুক। শুধু এই ফর্মুলাতেই প্যাঁচে ফেলা যাবে মোদিকে। না হলে বিরোধীদের ভোট ভাগ হয়ে সুবিধা পেয়ে যাবে বিজেপি। উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টি ও বহুজন সমাজ পার্টির আসন রফা হয়ে গিয়েছে। এখন কংগ্রেস সে রাজ্যে ভোট প্রচারে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে নামিয়েও দর কষাকষি করছে সপা-বসপার সঙ্গে। যদি এই দুই মুখ্য দলের সঙ্গে রাহুল গান্ধী সমঝোতায় আসতে পারেন, তাহলে মোদির সঙ্কট বাড়বে।

মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় ও রাজস্থান হারানোর পর মোদি-অমিত শাহ জুটি বিলক্ষণ বুঝে গিয়েছে, এই তিন রাজ্য থেকেও লোকসভা ভোটে আগের মতো বেশি নম্বর তোলা কঠিন হবে। অর্থাৎ গোটা উত্তর ভারতেই সমস্যার সিঁদুরে মেঘ দেখছে বিজেপি। আর পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিপুল জনপ্রিয়তার জোয়ারে বিজেপি পায়ের তলায় জমি পাবে কি না, সেই সন্দেহ তো রয়েছে। সব মিলিয়ে সর্বভারতীয় সমীক্ষাগুলির ফল লোকসভা ভোটের শেষে মান্যতা পাবে বলেই ধারণা বিশেষজ্ঞ মহলের। যদি না মোদির পক্ষে অলৌকিক কিছু ঘটে, অথবা মহাজোটের সমীকরণ ধাক্কা খায়।

তথ্যসূত্র: ভারতীয় বর্তমান।

এসএইচ/