যে কারণে গ্রামের চেয়ে শহরের শিশুদের চোখের সমস্যা বেশি
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৮:৩৫ পিএম, ২৭ জানুয়ারি ২০১৯ রবিবার
শিশুদের মাইয়োপিয়া বা চোখের ক্ষীণ দৃষ্টি রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন এই সংখ্যা বাড়ছে বেশি। তবে, কেনো শিশুরা চোখের সমস্যায় বেশি পড়ছেন এটা এখন বেশ আলোচনার বিষয়। বেশ কয়েক জন চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে এই সমস্যার কারণ জানা গেছে।
কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- ফোনে, ইউটিউবে বিভিন্ন ভিডিও দেখা এবং গেম খেলা। বিশেষ করে দীর্ঘ সময় ধরে টেলিভিশন দেখা অন্যতম কারণ। তবে, চোখের এই সমস্যা দেখা যাচ্ছে গ্রামের চেয়ে শহরেই বেশি। এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, শহরে শিশুদের খেলাধুলার মাঠ না থাকায় তারা খেলাধুলা করতে পারে না। এতে তারা ঘরে বন্দি হয়ে সাধারণত টেলিভিশন দেখা কিংবা মোবাইল বা ট্যাবে গেম খেলেন। ফলে অতিরিক্ত সময় স্কিনে চোখ রাখায় তাদের এই সমস্যা দেখা দিয়েছে।
জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের কনসালট্যান্ট ডা. খায়ের আহমেদ চৌধুরী বলেন, এই প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন গড়ে আমরা ২৫০ জন রোগী দেখি। এর মধ্যে ক্ষীণ দৃষ্টি বা মাইয়োপিয়ার আক্রান্ত শিশু আসে গড়ে ৫০ জন। যারা বিভিন্ন ধরনের চশমাজনিত ক্রটি নিয়ে আসেন। যারা দূরে দেখতে পারে না, এ ধরনের চোখের ক্রটিকে বলে ক্ষীণ দৃষ্টি বা মাইয়োপিয়া, যে শিশুরা দূরেও কম দেখে কাছেও কম দেখে, এ ধরনের ক্রটিকে বলা হয়—‘হাইপারমেট্রপিয়া’, আরেক ধরনের চোখের সমস্যা নিয়ে শিশু আসে, যাদের আমরা বলি ‘এস্টিগমেটিজম’, যাদের সিলিন্ডার পাওয়ার বা এঙ্গেল পাওয়ারে ক্রটি থাকে।
তিনি আরও বলেন, আজকাল শিশুরা অনেক বেশি গ্যাজেট ব্যবহার করছে। ফলে গ্রামের চেয়ে শহরের শিশুদের এ ধরনের চোখের সমস্যা বেশি দেখা দিচ্ছে। এ বিষয়ে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। টেকনোলজি শিশু ব্যবহার করবে তবে সেটা এক ঘণ্টার বেশি অবশ্যই নয়।
চোখের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ছোটবেলা থেকে স্মার্টফোন, ট্যাবে ভিডিও গেমসের আসক্তি শিশুদের চোখের বিভিন্ন ধরনের সমস্যাসহ নানা ধরনের মানসিক সমস্যার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এসবের জন্য খেলার মাঠ বন্ধ হয়ে যাওয়া, লেখাপড়ার বাড়তি চাপ, সূর্যের আলোয় শিশুর না আসা, দিগন্তে সবুজের দিকে তাকিয়ে না থাকাকেই দায়ী করা হচ্ছে।
জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. গোলাম মোস্তফা বলেন, আমরা বিভিন্ন স্কুলে শিশুদের চোখ পরীক্ষা করে থাকি। এতে দেখা যাচ্ছে গ্রামের চেয়ে শহরের শিশুদের চোখের সমস্যাটা বেশি। তবে অবিভাবকদের সচেতন হতে হবে। শিশু যদি টিভির সামনে গিয়ে টিভি দেখে, বোর্ডের লেখা ঝাপসা দেখে তাহলে চিকিত্সকের কাছে যেতে হবে।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আনিসুর রহমান আনজুম বলেন, শিশুদের খেলার জায়গা নেই। তারা চার দেয়ালে আবদ্ধ থাকে। ঘরে বসে বসে তারা ট্যাব, মোবাইল ফোন এবং ল্যাপটপের স্ক্রিনে আসক্ত হয়ে পড়ছে। আমরা খাওয়া-দাওয়ার কথা বলি, কিন্তু সেটা অতো গুরুত্বপূর্ণ নয়। স্কুলে মাঠ নেই এটাও শিশুদের এই ক্ষীণ দৃষ্টির একটি কারণ।
এসএইচ/