‘প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি ছাড়া আর কোনও উপায় নেই’
আলী আদনান
প্রকাশিত : ০৭:২৬ পিএম, ২৮ জানুয়ারি ২০১৯ সোমবার | আপডেট: ১১:০২ পিএম, ২৮ জানুয়ারি ২০১৯ সোমবার
শিল্পী অধ্যাপক গোলাম ফারুক
সারা জীবন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র পড়িয়েছেন। ছবি এঁকেছেন। ছবির প্রদর্শনী, গ্যালারি এসব নিয়ে কাজ করেছেন। মুক্তচিন্তা মুক্তবুদ্ধির প্রসারে সাধনা করেছেন। জীবনে কখনো কোন জটিলতাকে প্রশ্রয় দেননি। তিনি হলেন- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের কর্মরত অধ্যাপক গোলাম ফারুক। বর্তমানে যারা দেশে চিত্রকলা নিয়ে কাজ করছেন তাদের অন্যতম তিনি। ছাপচিত্রে এই মুহুর্তে তাকে অপ্রতিদ্বন্দ্বী মনে করেন কেউ কেউ। শিল্পী মর্তুজা বশীরের এই গুণী ছাত্র সারা জীবন রং তুলিতে মানুষের কষ্টের চিত্র তুলে ধরলেও আজ তিনিই তিনি কষ্টের সাগরে ডুবে আছেন। প্রতিযোগিতাময় এ সমাজে তার দিকে তাকানোর সময় কারো নেই। শুধু টাকার অভাবে আটকে আছে এই গুণী শিল্পী- শিক্ষকের চিকিৎসা।
শিল্পী অধ্যাপক গোলাম ফারুক ১৯৫৮ সালে জামালপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ভাই-বোন ছিলেন দশ জন। স্কুল শিক্ষক বাবা চেয়েছিলেন ছেলে উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা হোক। প্রাচুর্য্যের পেছনে ছুটুক। কিন্তু গোলাম ফারুক ছবিকে ভালোবেসে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে। প্রিন্ট ম্যাকিং গ্রুপে তিনি প্রথম ব্যাচের ছাত্র। শিক্ষক হিসেবে পেয়েছেন মর্তুজা বশীর, আমিনুল ইসলাম, মোহাম্মদ কিবরিয়া, শফিউদ্দিন আহমেদ, আবুল বারাক আলভী -এর মতো দেশ বরণ্য শিল্পীদের।
গোলাম ফারুকের জীবনটাও ব্যস্ত ও কর্মময়। ১৯৭৮ সালে তরুণ বয়সেই তিনি জাতীয় পুরুস্কার পান। পদক, সম্মাননা, প্রদর্শনী, ফেলোশীপ, ওয়ার্কশপ- সব মিলিয়ে তিনি সারাজীবনই তিনি ছুটেছেন কাজের পেছনে। আপাদমস্তক এ শিল্পী শিল্পের ছোঁয়ায় পৃথিবীকে রাঙাতে চাইলেও নিজের জীবনটা শৈল্পিক হয়নি। আর তাই হয়তো টাকার অভাবে আটকে গেছে তার চিকিৎসা। অভাবের বিশাল দরজা দিয়ে দৈত্যাকারে ধেয়ে আসছে মৃত্যু।
২০১৬ সালে প্রথম অধ্যাপক গোলাম ফারুকের হার্টে ব্লক ধরা পড়ে। সেই বছর জুলাই মাসে তার বাইপাস সার্জারী হয়। সম্প্রতি তিনি আবার অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ভারতের চেন্নাইতে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। তখন ডাক্তাররা জানান, তার দুটো কিডনীই অকেজো হয়ে গেছে। একই সময়ে তার ব্রেন স্ট্রোক হয়। কিন্তু টাকার অভাবে এই প্রবীণ অধ্যাপক চিকিৎসা না করিয়েই দেশে ফিরে আসেন।
শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হওয়ায় তাকে নিয়ে যাওয়া হয় স্কয়ার হাসপাতালে। বর্তমানে তিনি একই সঙ্গে প্যারালাইসিস, নিউমোনিয়াসহ আরও কয়েকটি রোগে আক্রান্ত।
অধ্যাপক গোলাম ফারুক- এর মেয়ে সাদিয়া আমরিন লিউনি জানান, বিকল হয়ে যাওয়া কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করতে শুধু অপারেশন খরচ হবে সতের লাখ টাকা। এছাড়া কিডনির আলাদা মূল্য ও অন্যান্য খরচ তো রয়েছেই।
অধ্যাপক গোলাম ফারুক বর্তমানে স্কয়ার হসপিটালে নেফ্রোলজি বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. এমএ ওহাব খানের অধীনে চিকিৎসাধীন আছেন।
তিনি জানান, অনেকগুলো রোগের চিকিৎসার ব্যয় ভার মেটাতে গিয়ে প্রতিমাসে এই শিল্পীর খরচ হয় এক লাখ টাকা।
শিল্পী ও অধ্যাপক গোলাম ফারুক-এর স্ত্রী কামরুন্নাহার স্বপ্না জানান, ভারতের চেন্নাইতে যাওয়া, বাইপাস সব মিলিয়ে গত আট মাসে খরচ হয়েছে ২৩ লাখ টাকা। পুরো টাকাটাই ঋণের টাকা।
তিনি আরও জানান, তিনি (অধ্যাপক গোলাম ফারুক) কখনো টাকা জমাননি বা জমানোর সুযোগও তার ছিল না। যেহেতু তিনিই পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ছিলেন। তাই ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ থেকে শুরু করে সব কিছুই তাকে করতে হয়েছে। আমরা শুধু ঋণে জর্জরিত হচ্ছি তাই নয় বরং তিনি সুস্থ না হলে এক পর্যায়ে ছেলে মেয়ে নিয়ে আমার রাস্তায় নামা ছাড়া উপায় থাকবে না।
এই প্রতিবেদকের সামনে কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন অধ্যাপক গোলাম ফারুক। তিনি বলেন, আমি আবার ছবি আঁকতে চাই। একজন শিল্পী হিসেবে শিল্পের ক্ষুধা আমার মেটেনি। আমি সেই ক্ষুধা মেটাতে চাই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিকতা ও উদারচিত্তের কারণে বিশ্বে খ্যাতি অর্জন করেছেন। অধ্যাপক গোলাম ফারুকের পরিবার মনে করনে এই বিপদের দিনে প্রধানমন্ত্রীর ভালোবাসায় পারে তাকে সহায়তা করতে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টিই পারে এই শিক্ষককে নতুন জীবনের আলোয় ফিরিয়ে আনতে।
আ আ//