ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১

পিডব্লিউসির গবেষণা

পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০১:৩১ পিএম, ৩১ জানুয়ারি ২০১৯ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০১:৩৭ পিএম, ৩১ জানুয়ারি ২০১৯ বৃহস্পতিবার

বাংলাদেশের পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো গত এক বছরে বৈশ্বিক গড়ের তুলনায় অনেক বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। আগামীতেও প্রবৃদ্ধির এ ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে বলে প্রত্যাশা করছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক অডিট ও পরামর্শ সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান প্রাইস ওয়াটারহাউজকু পার্সের (পিডব্লিউসি)।

পারিবারিক ব্যবসার বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট নিয়ে এ জরিপ চালিয়েছে পিডব্লিউসি। গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে জরিপ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটির বাংলাদেশ কার্যালয়। প্রতিবেদনে পারিবারিক ব্যবসার বৈশ্বিক চিত্রের পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে।

তারা বলছে, আগামীতে প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য অর্জনে বেশকিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। এর মধ্যে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে— সঠিক দক্ষতা ও সক্ষমতা নিশ্চিত করা, সৃজনশীলতা আনয়ন, স্থানীয় বাজারে প্রতিযোগিতা এবং জ্বালানি ও কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি মোকাবেলা।

জরিপের জন্য ২০১৮ সালের ২০ এপ্রিল থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত ৫৩টি দেশের পারিবারিক ব্যবসা-সংশ্লিষ্টদের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে। গড়ে ৩৫ মিনিটের এসব সাক্ষাৎকার মুখোমুখি ও টেলিফোনে— দুই পন্থাতেই নিয়েছে পিডব্লিউসি। ৫০ লাখ ডলারের বেশি টার্নওভার রয়েছে এমন সেমি-স্ট্রাকচার্ড পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রধান নীতিনির্ধারকদের ২ হাজার ৯৫৩টি সাক্ষাত্কারের ভিত্তিতে জরিপ প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।


প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ক্ষুদ্র থেকে শুরু করে বৃহৎ সব ধরনের প্রতিষ্ঠানেই পারিবারিক ব্যবসা আছে। এ ধরনের প্রায় সব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি অভিন্ন প্রবণতা আছে। তা হলো বৈশ্বিক মানদণ্ডের সঙ্গে তাল মেলাতে ক্রমাগত বিকশিত ও রূপান্তরিত হওয়া। বড় প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ব্যবসা সক্রিয় রাখতে এ প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রমেই প্রাতিষ্ঠানিক এবং সৃজনশীল হতে বাধ্য হয়েছে।

জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, গত অর্থবছর বাংলাদেশে পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর ৮৪ শতাংশই প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। এর মধ্যে ৫৩ শতাংশ প্রতিষ্ঠানই দুই অংকের প্রবৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে একই সময়ে বিশ্বব্যাপী ৬৯ শতাংশ পারিবারিক ব্যবসা প্রবৃদ্ধির মুখ দেখেছে, যার মধ্যে ৩৪ শতাংশ পেয়েছে দুই অংকের প্রবৃদ্ধি।

জরিপের তথ্য অনুযায়ী, আগামী দুই বছরে বাংলাদেশের ২৮ শতাংশ পারিবারিক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান দ্রুত ও আগ্রাসীভাবে প্রবৃদ্ধি অর্জনের পথে এগোচ্ছে। আর ধীরগতিতে প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশা করে ৬৩ শতাংশ প্রতিষ্ঠান। ৫৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের নীতিনির্ধারক প্রবৃদ্ধিকে সহায়তা করার জন্য প্রাইভেট ইকুইটির বিষয়ে ভাবছে। অন্যদিকে বৈশ্বিকভাবে ১৬ শতাংশ পারিবারিক ব্যবসায় দ্রুতগতিতে এবং ৬৮ শতাংশ প্রতিষ্ঠান ধীরগতি প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশা করে।

প্রবৃদ্ধি নিয়ে ইতিবাচক পূর্বাভাস দিলেও তা অর্জনে চ্যালেঞ্জও রয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো। তারা বাংলাদেশে দুর্বল সৃজনশীলতা, অভ্যন্তরীণ বাজারে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি, জ্বালানি ও কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে জানিয়েছে। জরিপে অংশ নেয়া ৬৬ শতাংশই সঠিক দক্ষতা ও সক্ষমতা নিশ্চিত করাকে আগামীর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ মনে করে। অন্যদিকে ৬৩ শতাংশ পারিবারিক ব্যবসায় সৃজনশীলতার বিকাশ, স্থানীয় বাজারে প্রতিযোগিতা এবং জ্বালানি ও কাঁচামালের দাম বৃদ্ধিকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে। এছাড়া জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৫৩ শতাংশ ডাটা ম্যানেজমেন্টকে, ৪৭ শতাংশ ব্যবসায় পেশাদারিত্বকে, ৪৪ শতাংশ আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা ও অর্থ জোগানোকে চ্যালেঞ্জ মনে করে। দেশের ব্যবসায় পরিবেশ ও দুর্নীতিকে চ্যালেঞ্জ মনে করে ৪১ শতাংশ পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নীতিনির্ধারক। এছাড়া ৩১ শতাংশ প্রতিষ্ঠান সাইবার নিরাপত্তাকে, ৩১ শতাংশ নীতিমালাকে, ২৫ শতাংশ ডিজিটালাইজেশন ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে, ১৯ শতাংশ আন্তর্জাতিক কর ব্যবস্থায় সংস্কার ও পরিবারের সদস্যদের বিরোধকে এবং ১৩ শতাংশ ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়াকে ব্যবসার জন্য ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মনে করে।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, পারিবারিক ব্যবসায় ৯৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধির মূলে থাকবে প্রতিভাবান কর্মীদের আকৃষ্ট করা ও ধরে রাখা। প্রবৃদ্ধি নিয়ে আশাবাদী হলেও মাত্র ৩৪ শতাংশ পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নীতিনির্ধারকরা বলেছেন, তারা প্রবৃদ্ধি অর্জনে আনুষ্ঠানিক ও নথিগতভাবে মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা করেছে। ৫০ শতাংশ বলেছে তাদের অনানুষ্ঠানিক পরিকল্পনা রয়েছে। বাংলাদেশে পারিবারিক ব্যবসার সংখ্যা বাড়ছে এবং তারা উপলব্ধি করেছে, ব্যবসায়ী সমাজে সামাজিক সম্পদ হিসেবে প্রতিষ্ঠানের শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ মূল্যবোধের গুরুত্ব রয়েছে। এ সামাজিক সম্পদ উচ্চহারের মুনাফা ও সম্পদ ধরে রাখার মাধ্যমে প্রতিযোগিতায় বাড়তি সুবিধাও দিতে পারে।

বাংলাদেশের পারিবারিক ব্যবসা পরিচালনা পর্ষদের ২৫ শতাংশে নারীরা রয়েছে, কিন্তু ব্যবস্থাপক দলে রয়েছে মাত্র ১৪ শতাংশ। বাংলাদেশের পারিবারিক ব্যবসাগুলো মূলত প্রথম প্রজন্মের উদ্যোক্তাদের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে।

জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশকালে পিডব্লিউসি বাংলাদেশের ম্যানেজিং পার্টনার মামুন রশীদ বলেন, দেশ গঠনের পাশাপাশি বাংলাদেশের পারিবারিক ব্যবসাগুলো সম্পদ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এ প্রতিষ্ঠানগুলো দেশে বিদেশী বিনিয়োগ নিয়ে আসতেও ভূমিকা রেখেছে। উত্তরাধিকার নিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর কাঠামোগতভাবে পরিকল্পনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর মাধ্যমে দেশে তাদের ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি ও উদ্যোক্তাসুলভ সক্রিয়তা বজায় রাখা সম্ভব হবে।

জরিপে দেখা গেছে, পারিবারিক ব্যবসার খুবই ছোট একটি অংশ সুনির্দিষ্ট প্রযুক্তি বুঝতে পারে। মাত্র ১৯ শতাংশ ডিজিটাল রূপান্তরের প্রভাব সম্পর্কে সচেতন। এ প্রেক্ষাপটে দক্ষ প্রতিভাবান নিয়োগ দেয়া এবং পরিবারের পরবর্তী সদস্যকে ক্ষমতায়ন ব্যবসা টেকসই করার ব্যবসায়িক মডেল হিসেবে ভূমিকা রাখবে।

বাংলাদেশের ৭২ শতাংশ পারিবারিক ব্যবসার মধ্যে নীতি বা পদ্ধতিগত প্রথা রয়েছে। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটের সঙ্গে তুলনায় বাংলাদেশের এ হার কিছুটা কম। এক্ষেত্রে বৈশ্বিক গড় হলো ৮৪ শতাংশ। বিরোধ নিষ্পত্তিসংক্রান্ত বিষয়ে জরিপে দেখা গেছে, তাত্ক্ষণিকভাবে পরিবারের মধ্যেই বিরোধ সামাল দেয়া হয় বাংলাদেশের ৬৩ শতাংশ পারিবারিক ব্যবসায়। মাত্র ৬ শতাংশ তৃতীয় পক্ষের কাছ থেকে বিরোধ নিষ্পত্তিসংক্রান্ত সেবা নেয়। ৭৮ শতাংশ পারিবারিক ব্যবসা জনসেবামূলক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত। মাত্র ৩৮ শতাংশ তাদের সামাজিক সম্পদের প্রভাব নির্ণয় করে।

অনুষ্ঠানে পিডব্লিউসির এন্ট্রাপ্রেনিউরিয়াল অ্যান্ড প্রাইভেট বিজনেস লিডার গণেশ রাজু কে বলেন, বাংলাদেশের পারিবারিক ব্যবসাগুলো ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধি নিয়ে ইতিবাচক, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

 

টিআর/