জেনে নিন ওজন বাড়ার অজানা কারণ
সোনিয়া শরমিন খান
প্রকাশিত : ০৪:০১ পিএম, ৩১ জানুয়ারি ২০১৯ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০২:৩৩ পিএম, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ শনিবার
আমার রোগীদের অনেকেই বলেন আমি খুব কম পরিমান খাই। কিন্তু স্বাস্থ্য এত বেড়ে যাচ্ছে কেন? আমরা জানি খাদ্যের সাথে ওজন বাড়ার প্রত্যক্ষ সম্পর্ক আছে। তাই আজ আলোচনা করব ওজন বাড়ার অন্যতম কিছু অজানা কারন নিয়ে।
প্রথমতঃ কিছু হরমোনের অতিরিক্ত উৎপন্ন হওয়া বা না হওয়া, যেগুলো বিশেষ করে ক্ষুধা, চর্বি তৈরি এবং ওজন নিয়ন্ত্রন এর সাথে সম্পর্কিত। যেমন, "লেপটিন" নামক হরমোন আমাদের মস্তিষ্কে সিগন্যাল পাঠায় আমাদের পাকস্থলী খাদ্যে পূর্ণ হয়েছে বা পূর্ণ হয় নাই কিনা। এর ঘাটতি বা আধিক্য ওজন বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
যদি হঠাৎ দেহের ফ্যাট সেল দ্রুত ভাংতে থাকে, তখন লেপটিন হরমোনও দ্রুত কমে যেতে থাকে। এক্ষেত্রে এই হরমোনের ঘাটতি থেকে পাকস্থলী খাদ্যে পূর্ণ হবার সঠিক সিগন্যাল মস্তিষ্কে যায় না। ফলে ব্যাক্তি খাদ্য গ্রহণ চালিয়ে যান। আবার অতিরিক্ত ফল খেলে ফ্রুক্টোজ নামক শর্করার আধিক্যে শর্করা গুলো ফ্যাটে রূপান্তরিত হয়ে দেহে জমতে থাকে। ফলে লেপটিন ও বেশি উৎপন্ন হয় এবং দেহ এর প্রতি সহ্য ক্ষমতা হারায়। ফলে ব্রেইনের সিগন্যাল সঠিক নিয়মে হয় না এবং খাদ্য গ্রহণ বেড়ে যায় অর্থাৎ ওজন বেড়ে যায়।
দ্বিতীয়তঃ শারীরিক ও মানসিক স্ট্রেস থেকে সৃষ্ট হরমোন "কর্টিসল" ওজন বাড়াতে অনেক বেশি ভুমিকা রাখে এবং দেহে চর্বিকে বেশি সময়ের জন্য সঞ্চয় করতে সহায়তা করে। কর্টিসল হরমোন বেড়ে গেলে সরল শর্করা অধিক সময়ের জন্য চর্বি তে পরিণত হয়। অতিরিক্ত মানসিক অবসাদে শক্তি অর্জনের জন্য দেহ মূলত জমাকৃত চর্বির উপর নির্ভর করে।
চর্বি জমাকারী হরমোন কে কমাতে শারীরিক ও মানসিক স্ট্রেস বা চাপ কমানো খুবই জরুরি। এছাড়াও দুধ চা এবং কফি খাওয়ার পরিমান কমিয়ে দিলেও কর্টিসল হরমোন বাড়ার প্রবনতা কমে যায়।
তৃতীয়তঃ ফ্যাটসেল ও রাসায়নিক মেসেঞ্জার উপাদান এস্ট্রোজেন হরমোন, যা বিশেষ করে স্বাভাবিক মাত্রায় ইনসুলিন নামক হরমোনকে উৎপন্ন করে। ইনসুলিন হরমোন রক্তের গ্লুকোজ এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ এর মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রনে গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা রাখে।
আমরা যখন শর্করা জাতীয় খাবার খাই, ইনসুলিন, দেহের প্রয়োজনের বাড়তি গ্লুকোজকে লিভারে পাঠায়, শক্তির জন্য পেশীতে পাঠায় এবং খুব অল্প পরিমানে ফ্যাট সেলে রুপান্তরিত হয়। কিন্তু যখন এস্ট্রোজেন এর মাত্রা বেড়ে যায়, ইনসুলিন তৈরির কোষগুলো দূর্বল হয়ে পরে এবং দেহ এর প্রতি সহ্যক্ষমতা হারায়। ফলে, গ্লুকোজ বেশি পরিমানে ফ্যাটে রুপান্তরিত হয় এবং অবধারিত ভাবে ওজন বৃদ্ধি পায়।
চতুর্থতঃ টেস্টোস্টেরন হরমোন এর মাত্রা কমে যাওয়া এবং বিপাক ব্যহত হওয়া জনিত কারন। ২০ বছর বয়সের পর থেকে টেস্টোস্টেরন হরমোন এর কার্যক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে। এছাড়াও জন্ম নিয়ন্ত্রণ এর ওষুধ সেবনের কারণেও এটি হ্রাস পায়। এটি মূলতঃ আমাদের পেশীর বৃদ্ধি, বিপাককার্য এবং খাদ্যের টক্সিক উপাদান , এমনকি বাতাসের টক্সিক উপাদান কে হ্রাস করতে সহায়তা করে।
আর টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমে গেলে দেহের বিপাক কমে যায় এবং দেহে টক্সিক উপাদান এর পরিমান বেড়ে যায় ফলশ্রুতিতে দ্রুত ওজনও বেড়ে যায়। আর বিপাক হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে আমাদের গৃহীত খাদ্য পাচন, শোষণ ইত্যাদির মাধ্যমে দেহে শক্তি ও পুষ্টি যোগায়। সুতরাং বিপাক ব্যাহত হলে স্বাভাবিকভাবেই দেহের ওজন বাড়ার প্রবনতাও বেড়ে যায়। অর্থাৎ টেস্টোস্টেরন এর মাত্রা কমে যাওয়া এবং একইসাথে বিপাক কাজ ধীরে হলে ওজন বেড়ে যায়।
তাই সবার উচিত সঠিক খাদ্যাভ্যাস করা, খাদ্যে সব পুষ্টি উপাদান এর সরবরাহ নিশ্চিত করা, সঠিক নিয়মে খাদ্য গ্রহন অর্থাৎ সময়মত খাওয়া, চাহিদা অনুযায়ী পরিমান ঠিক রেখে খাওয়া অর্থাৎ খুব বেশি বা কম না খাওয়া, ধীরে এবং চিবিয়ে খাওয়া, খাওয়ার সাথে সাথে পানি না খাওয়া ইত্যাদি মেনে দেহে হরমোনের সামঞ্জস্যতা রক্ষা করা। যাতে করে হরমোনজনিত কারনে দৈহিক ওজন বেড়ে না যায়।
লেখকঃ সোনিয়া শরমিন খান
নিউট্রিশনিস্ট ও ক্লিনিক্যাল ডায়েটিশিয়ান
সিটি হেলথ সার্ভিসেস লিমিটেড
টিআর/