ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১৮ ১৪৩১

নরমাল ডেলিভারিতে সাইড কাটা কখন জরুরি 

ডা. কাজী ফয়েজা আক্তার 

প্রকাশিত : ০৭:৪৮ পিএম, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ শুক্রবার

ডা. কাজী ফয়েজা আক্তার 

ডা. কাজী ফয়েজা আক্তার 

আমাদের দেশে সাধারণত দুই পদ্ধতিতে সন্তান প্রসব করানো হয়। একটি হলো স্বাভাবিক সন্তান প্রসব পদ্ধতি। যেটাকে ‘নরমাল ডেলিভারি’ বলা হয়। অন্যটি হলো সিজার। এ পদ্ধতিতে মায়ের শরীর থেকে অস্ত্রোপাচারের মাধ্যমে সন্তান নিয়ে আসা হয়। কখনো কখনো স্বাভাবিক ভাবে সন্তান প্রসব করানোর ক্ষেত্রেও যোনিপথ কিছুটা কাটতে হয়। যা ‘সাইড কাটা’ নামে পরিচিত। ‘সাইড কাটা’ নিয়ে অনেক ভীতিকর কথা প্রচলিত রয়েছে। রয়েছে অনেক ভুল ধারণাও।        

কেউ কেউ বলে থাকেন, সাইড কাটার চেয়ে সিজার ভাল। এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। যোনিপথ কাটা বা সাইড কাটার ব্যাপারটা কী, কেন বা কখন সাইড কাটতে হয়, এর ইতিবাচক দিক কী, কেন সাইড কাটা ক্ষতিকর কিছু নয়, সাইড কাটা ও সিজারের মধ্যে পার্থক্য কী- এসব নিয়ে আজ একুশে টেলিভিশন অনলাইন পাঠকদের জন্য আলাপ করব।   

নরমাল ডেলিভারিতে সবসময়ই যে সাইড কাটা (যোনিপথ কাটা) হয় তা কিন্তু না। সাইড কাটতে হবে তাও এমন জরুরি কিছু না। আবার আমরা সবারই যে সাইড কাটি তাও কিন্তু না।

প্রসবকালীন সময়ে যখন বাচ্চার মাথা আসতে থাকে তখন আমরা (ডাক্তার) বুঝার চেষ্টা করি যে, যোনিপথের যে প্রশস্ততা আছে তা দিয়ে সহজে বাচ্চার মাথা আসবে কিনা। কখনো কখনো দেখা যায় মায়ের যে স্পেস রয়েছে (যোনিপথের প্রশস্ততা) সেই তুলনায় বাচ্চার মাথা বড়। সেক্ষেত্রে মাথা বের করে নিয়ে আসতে গেলে আশপাশের সব ছিঁড়ে যাওয়ার ও ক্ষতবিক্ষত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তখন একটুখানি সাইড কেটে দিলে বাচ্চার মাথাটা সহজভাবে চলে আসে। পরে সেই সাইডটুকু সেলাই করে দিলে তা সহজে শুকিয়ে যায় এবং শারীরিক কোন সমস্যা হয় না।

এখন প্রশ্নহলো সাইড কাটা নিয়ে কেন ভীতি কাজ করে? ভীতির কারণ অনুসন্ধান করতে হলে আমাদেরকে একটু পেছনে ফিরে যেতে হবে। আগের দিনে মায়েরা সন্তান প্রসব করতেন বাড়ীতে। সেখানে কোন প্রশিক্ষিত বা বিশেষজ্ঞ ডাক্তার তাদের ডেলিভারি করাতেন না। সেসময় বেশিরভাগ ডেলিভারি করাতেন মা খালারা বা দাই (সে সময় গ্রামে যারা প্রসব কাজে সহযোগিতা করতেন তাদের দাই বলা হতো)। তারা সাইড কাটতেও জানতেন না বা সেলাই করতেও জানতেন না। ফলে সেসময় বেশীরভাগ বাচ্চা এবড়ো থেবড়ো ভাবে ছিঁড়ে বের হতো। এই মায়েরা পরবর্তীতে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যার মুখোমুখি হতেন। প্রসাব- পায়খানা করতে গিয়ে সমস্যায় পড়তেন। স্বামীর সঙ্গে মেলামেশা করতে গিয়ে কষ্ট পেতেন।

এজন্য আমরা এখন বলি, সন্তান প্রসব অবশ্যই হাসপাতালে করাবেন। হাসপাতালে সন্তান প্রসব এজন্যই নিরাপদ, যখনই আমরা দেখি মায়ের যোনিপথ প্রশস্ত নয় বা বাচ্চার মাথা জোর করে বের করে আনতে গেলে ক্ষতি হবে তখনই আমরা একটুখানি সাইড কেটে দিই। তখন বাচ্চার মাথাটা সহজে চলে আসে। সন্তান প্রসবের পরপরই এই সাইডটা এতো সুন্দর করে সেলাই দেওয়া হয়, দেড়মাস পর মা খুঁজেও পাবেনা কোথায় সাইড কাটা হয়েছিল। তাই এটা নিয়ে ভয়ের কিছুই নেই।

অনেকে বলে থাকেন, সাইড কাটার চেয়ে সিজার ভাল। এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। কেননা, সিজার মানে পেট এপাশ- ওপাশ কেটে ফেলা। সেটার ভোগান্তি সারাজীবন ভুগতে হয়। হাতের আঙ্গুলে কোথাও চামড়া কেটে গেলে সেই চামড়া পরে জোড়া লেগে যায় বা সেলাই করে দিলে হয়। রান্না বান্না করতে গিয়ে বা তরকারি কাটতে গিয়ে অনেক সময় হাত কেটে যায়। কয়েকদিন পর সেই কাটার আর কোন চিহ্ন থাকে না। ঠিক তেমনি সাইড কাটাও এতোটাই সামান্য ব্যাপার যে পরে আর সেই কাটা বা কাটার দাগ বা সেলাইয়ের দাগ কিছুই খুঁজে পাওয়া যায় না। শুধু তাই নয়, পরবর্তীতে প্রসাব- পায়খানা বা স্বামীর সাথে মেলামেশা সহ যে কোন কাজে এই সাইড কাটা নিয়ে কোন ধরনের অস্বস্তিতে পড়তে হয় না।

(আগামী পর্বে: সাইড কাটা মায়েদের পরবর্তীতে করণীয়)

লেখক: ডা. কাজী ফয়েজা আক্তার (এমবিবিএস, এফআরসিপিএস, এমসিপিএস)। কনসালটেন্ট, ইমপালস হাসপাতাল। গাইনী ও প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞ।

আআ/এসি