ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

অস্থিরতা- উদ্বেগ বাড়ায় স্মার্টফোন: গবেষণা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:২১ এএম, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ মঙ্গলবার

স্মার্টফোনের জনপ্রিয়তা দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ল্যারি রোজেন বলেন, একজন মানুষ সাধারণত প্রতি ১৫ মিনিটে একবার ফোন চেক করে। এর মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি সংখ্যকবার এই চেক সে করে এমনি এমনি। অর্থাৎ এলার্ট বাজুক না বাজুক, নোটিফিকেশন আসুক না আসুক- শুধু শুধুই সে মোবাইলটা হাতে নিয়ে টাচ করে বা চেক করে।

প্রফেসর রোজেন বলেন, আসলে এ সময় তার ব্রেনে অনবরত বাজতে থাকে কিছু কথা। যেমন, ‘আচ্ছা, অনেকক্ষণ ধরে তো আমি ফেসবুক চেক করছি না; টুইটার ফিডও তো দেখছি না বহুক্ষণ হলো। আচ্ছা ইনস্টাগ্রাম পোস্টে নতুন কোনও কমেন্ট পড়েনি তো?’

তিনি বলেন, আর এ সব চিন্তা কিছুক্ষণের মধ্যেই তার ভেতর টেনশন সৃষ্টি করে, শরীরে তৈরি হয় কর্টিসল নামক স্ট্রেস হরমোন, আর এ থেকে মুক্তি পেতেই সে হাতে তুলে নেয় ফোন!

কানাডার ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে একটি পরীক্ষা করা হয়, মোবাইল ফোন আমাদের মনোযোগের ক্ষমতাকে কতটা প্রভাবিত করেছে এবং আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার প্রবণতাকে কতটা বাড়িয়েছে তার ওপর। গবেষণাটি চালান ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি কানাডার প্রফেসর ববি স্টয়নস্কি।

এ গবেষণায় যে স্বেচ্ছাসেবী অংশ নিয়েছেন, প্রথমেই তার কাছ থেকে তার মোবাইল ফোনটি নিয়ে নেওয়া হলো। তারপর তাকে যুক্ত করা হলো একটি হার্ট মনিটরের সঙ্গে। মজার ব্যাপার হলো, মোবাইল ফোন নিয়ে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দেখা গেল স্বেচ্ছাসেবীর হার্টরেট বেড়ে গেছে। এরপর তাকে একটা অ্যাপ ব্যবহার করতে দেওয়া হলো যাতে ভালো করতে হলে তাকে বেশ মনোযোগ দিতে হবে। এ সময় স্বেচ্ছাসেবীর মোবাইল ফোনটা তার কাছ থেকে দূরে ছিল এবং পাওয়ার অফ করা ছিল। কাজেই প্রথম রাউন্ডে সে বেশ ভালো করল। মজার ব্যাপার ঘটল, দ্বিতীয় রাউন্ডে। ফোনটা হাতের কাছে না থাকলেও এটাকে অন করা হলো এবং এমন দূরত্বে রাখা হলো যাতে রিং হলে  স্বেচ্ছাসেবী শুনতে পায়। দেখা গেল, ফোন বেজে উঠলেই স্বেচ্ছাসেবীর মনোসংযোগ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এরপর তৃতীয় রাউন্ড! এ রাউন্ডে স্বেচ্ছাসেবীকে বলা হলো, তার কাছে যে সব নাম্বার থেকে টেক্সট মেসেজ আসবে, সেই নাম্বারগুলো বলতে হবে। কিন্তু এখানেই শেষ হলো না। প্রতিযোগিতার প্রায় শেষের দিকে প্রফেসর ববি যা করলেন, তা হলো একজনকে দিয়ে স্বেচ্ছাসেবীর ফোনে কল করানো। গভীর মনোযোগ দিয়ে ডেভিড যখন খেলাটা প্রায় গুছিয়ে এনেছে, ঠিক তখনই একেবারে অপ্রাসঙ্গিকভাবে ফোনটা এসে সব লণ্ডভণ্ড করে দিল! স্বেচ্ছাসেবী বার বার কেটে দিচ্ছে, সাইলেন্ট মোডে নিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু সেই মনোযোগ আর সে ফিরে পায়নি।

মনিটর কী বলে? স্বেচ্ছাসেবীর ভারবাল কমে গেছে প্রায় ২০ শতাংশ। মানে মনোযোগ কমে গেছে!

স্মার্টফোন আধুনিক মানুষের এ সর্বনাশটাই করছে। দিনের একটা বড় সময়ই যখন একজন মানুষ এ রকম বিক্ষিপ্ততার মধ্যে কাটায়, একটু পর পর মোবাইল চেক করার অবসেশনে আক্রান্ত হয়, তখন এটা স্থায়ীভাবেই কমিয়ে দিতে পারে তার মনোযোগকে। তার মানে সমাজের জন্যে, দেশের জন্যে অবদান রাখতে হলে মেধা এবং সৃজনশীলতার যে চর্চা একজন মানুষের করা উচিত স্থায়ীভাবেই তা নষ্ট হয়ে যেতে পারে যদি স্মার্টফোনের অতি ব্যবহারে কেউ আসক্ত হয়। আর আমাদের শিশুদের নিয়ে উদ্বেগটা এখানেই। আধুনিক যে শিশু-কিশোরদের সামাজিক এবং আবেগিক বিকাশের প্রায় পুরোটাই ঘটছে ইন্টারনেট এবং সেলফোনে বসে, ভবিষ্যত নেতৃত্বে তারা আসলেই কতটা ভূমিকা রাখতে পারবে তা সত্যিই প্রশ্নবিদ্ধ!