ঢাকা, সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১

কবে হবে জাকসু নির্বাচন?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০১:৫৩ পিএম, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৩:২০ পিএম, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ মঙ্গলবার

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (জাকসু) নির্বাচন আয়োজন করার কোনো উদ্যোগ নেই প্রশাসনের। এমন অভিযোগ প্রতিষ্ঠানটির সাধারণ শিক্ষর্থীদের

১৯৯৩ সালের ২৯ জুলাই এক হামলার ঘটনায় জাকসু ভেঙে যায়। এরপর থেকে আর কোনো নির্বাচন হয়নি। এই সুদীর্ঘ সময়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দাবিদাওয়া, গণমাধ্যমে আলোচনা এবং অজস্র সংবাদে ঘুরেফিরে জাকসু নির্বাচনের কথা আসলেও নির্বাচন হয়নি।

মাঝে মধ্যে এই নির্বাচনের দাবিতে বামদলগুলোর পক্ষ থেকে দাবি ও মানববন্ধন করা হলেও কোনো ফল আসেনি। অথচ এই নির্বাচনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় শিক্ষার্থীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অংশগ্রহণের প্রক্রিয়া। এই সময়ে বিভিন্ন মেয়াদে বেশ কয়েকজন উপাচার্য দায়িত্ব পালন করলেও কেউই নির্বাচনের জন্য দৃশ্যমান এবং কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেননি।

প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালের ১২ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরুর পরের বছরই প্রথম জাকসু নির্বাচন হয়। এরপর বিভিন্ন মেয়াদে বিরতি দিয়ে আরও আটবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ ১৯৯২ সালে বিএনপি সরকারের সময় নির্বাচন হয়। এতে সহ-সভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হন মাসুদ হাসান তালুকদার এবং সাধারণ সম্পাদক (জিএস) হন শামসুল তাবরীজ।

১৯৯৩ সালের ২৯ জুলাই শিক্ষক ক্লাবে ছাত্ররা শিক্ষকদের ওপর হামলা চালান। এর জের ধরে প্রশাসন কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ভেঙে দেয়। এরপর আর কোনো নির্বাচন হয়নি।

নির্বাচন না হওয়ার কারণে শিক্ষার্থীরা ভুলতে বসেছে নিজেদের অধিকারের কথা। তৈরি হচ্ছে না যোগ্য ছাত্র নেতৃত্ব। ফলে প্রভাবশালী ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতারা জড়িয়ে পড়ছে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে। বাড়ছে ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দূরত্বও।

বিষয়টি নিয়ে ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ৪৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মোস্তাইন বিল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ক্যাম্পাসে আসার পর থেকেই জাকসু নিয়ে অনেকের মুখে অনেক কথা শুনেছি। অথচ আমার আসার চার বছর হলেও এখনো জাকসু নির্বাচনের কোনো অস্তিত্ব দেখিনি।’

সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষার্থী আফরিন মিম বলেন, ‘প্রশাসনের উদাসীনতা এবং ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের দৌরাত্ম্যসহ বেশ কিছু কারণেই এত দিন জাকসু নির্বাচন হয়নি বলে আমার মনে হয়।’

তিনি মনে করেন, ‘জাকসু নির্বাচন হলে প্রশাসনের সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীর একটা মেলবন্ধন তৈরি হবে, শিক্ষার্থীদের পক্ষে কথা বলার একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি হবে। বিশ্ববিদ্যালয় হলো গণতন্ত্র চর্চার অন্যতম একটি জায়গা। কিন্তু জাকসু না থাকায় সেই চর্চা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।’

পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী তানভীর আহমেদ পিয়াস বলেন, ‘একজন সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে আমি অনেক আগে থেকেই জাকসু নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি। সঠিক যোগ্য নেতা নির্বাচনে জাকসু নির্বাচন অতি জরুরি।’

জাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জুয়েল রানা বলেন, ‘জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের যেকোনো পদক্ষেপকে আমরা সাধুবাদ জানাব।’

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. অজিত কুমার মজুমদার বলেন, ‘জাকসু নির্বাচন নিয়ে ইতিমধ্যে আমরা আলোচনা করেছি এবং নীতিগতভাবে সবাই নির্বাচনের বিষয়ে একমত পোষণ করেছি। সামনে আমাদের কার্যনির্বাহী পরিষদের সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব।’

প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও চায় জাকসু নির্বাচন হোক। শুধু প্রশাসনই নয়, সবাই চায় জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। কারণ ছাত্রসংসদের মাধ্যমেই নেতৃত্ব তৈরি হয়। তবে দীর্ঘদিন যেহেতু জাকসু নেই, কাজেই জাকসু নির্বাচনের আগে আমাদের কিছু কাজ করতে হবে। জাকসুর পূর্বশর্তগুলো বজায় রেখে নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়ে ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে আমরা শিগগিরই বসব।’

এমএইচ/