সন্দ্বীপে সাবমেরিন ক্যাবলে বিদ্যুৎ উদ্বোধন হচ্ছে বুধবার
কাজী ইফতেখারুল আলম তারেক
প্রকাশিত : ১১:৩৫ পিএম, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ মঙ্গলবার | আপডেট: ১১:৪৮ পিএম, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ মঙ্গলবার
সাগরের তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিড থেকে দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপে বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সেবার কার্যক্রম ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার (০৬ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয় সম্মেলন কক্ষে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ কর্মসূচি উদ্বোধন করবেন।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সূত্র গেছে, সাগরের তলদেশে সন্দ্বীপ চ্যানেলের ভূ-পৃষ্ঠ হতে ১০ থেকে ২০ ফুট গভীরতায় দুটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ক্যাবল নেটওয়ার্ক সমুদ্র তীরবর্তী চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড অংশে ও সন্দ্বীপ চ্যানেলে যুক্ত করা হয়। উপকূল থেকে ১৬ কিলোমিটারের দুটি ক্যাবল স্থাপনের মাধ্যমে এ সংযোগ দেওয়া হয় ।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রাম দক্ষিণ অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী প্রবীর কুমার সেন বলেন, সন্দ্বীপবাসীর বহুল প্রতীক্ষিত বিদ্যুৎ কর্মসূচি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করবেন। এছাড়া ৫টি পাওয়ার স্টেশন ও ৯টি গ্রিড উপকেন্দ্রও তিনি উদ্বোধন করবেন।
বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, উপকূল থেকে ১৫ কিলোমিটারের ৩৩ কেভির দুইটি ক্যাবল স্থাপনের মাধ্যমে গ্রিড সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া সন্দ্বীপে ১৬ ও সীতাকুণ্ডে ১০ কিলোমিটার ওভার হেড লাইন (মাটির ওপর) স্থাপন করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে একটি ক্যাবলের মাধ্যমে ১০ মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ সঞ্চালনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ চাহিদা বাড়লে বিকল্প ক্যাবলটির মাধ্যমেও বিদ্যুৎ সঞ্চালন করা যাবে। দুই ক্যাবলের মাধ্যমে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সঞ্চালন করা সম্ভব হবে। এগুলোর স্থায়ীত্বকাল ৫০ বছর।
পিডিবি জানিয়েছে, বিদ্যুৎ সুবিধার মধ্য দিয়ে সন্দ্বীপের মানুষের কাছে পৌছে যাচ্ছে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সুবিধা।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ দেশের অন্যতম এক উপজেলা। সাগরের করাল গ্রাসে সন্দ্বীপ নদী ভাঙ্গনের ফলে আয়তন ১২০ বর্গমাইলে এসে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু শিক্ষা-সংস্কৃতিতে অগ্রসর এই জনপদের প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থ দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরণের যোগান দিলেও এখানে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি লাগেনি। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপে ব্যাপক উন্নয়নের ছোঁয়া লাগে। এর মধ্যে সাবমেরিনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ অন্যতম।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে ১৪৪ কোটি টাকার প্রকল্পটি একনেক বৈঠকে অনুমোদন দেন। এরপর ঠিকাদার কাজ পায় চীনা কোম্পানি জেডটিটি।
চট্টগ্রাম জোনে বিদ্যুৎ বিতরণ সিস্টেম উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সন্দ্বীপে বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের দুটি সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন করা হয়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য সন্দ্বীপে ইতোমধ্যে একটি সাবস্টেশন ও ৭০ কিলোমিটার বিতরণ লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। সাবমেরিন ক্যাবলে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বর সর্বপ্রথম জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সুবিধা পায় সন্দ্বীপবাসী। বিদ্যুত পেয়ে এই দ্বীপের মানুষ স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। ফলে দিন দিন বদলে যেতে শুরু করেছে এই জনপদ।
এর আগে সন্দ্বীপে ডিজেল জেনারেটর দিয়ে শুধু পিক আওয়ারে সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছিল পিডিবি। এখন সন্দ্বীপের বিদ্যুতের চাহিদা গড়ে এক দশমিক ৮০ মেগাওয়াট।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রী আরও উদ্বোধন করবেন- পাওয়ার স্টেশনের মধ্যে ভোলা ২২৫ মেগাওয়াট (কম্বাইন্ড সেকেন্ড) বিদ্যুৎ কেন্দ্র, চাঁদপুর ২০০ মেগাওয়াট, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ ১৫০ মেগাওয়াট, খুলনার রূপসার ১০৫ মেগাওয়াট ও চট্টগ্রামের পটিয়ার জুলধার ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
এছাড়া ৯টি গ্রিড উপকেন্দ্রের মধ্যে রাঙামাটির (১৩২/৩৩ কেভিএ) উপ-কেন্দ্র, মহেশখালির মাতারবাড়ি (১৩২/৩৩ কেভিএ) উপকেন্দ্র, সুনামগঞ্জ (১৩২/৩৩) উপকেন্দ্র, সিলেটের বিয়ানীবাজার (১৩২/৩৩ কেভিএ) উপকেন্দ্র, ঢাকার জলঢাকা (১৩২/৩৩ কেভিএ) উপকেন্দ্র, চট্টগ্রামের শিকলবাহা (২৩০/১৩২) কেভিএ) উপকেন্দ্র, চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের বারিয়ারহাট (১৩২/৩৩ কেভিএ) উপকেন্দ্র, বরিশাল (১৩২/৩৩ কেভিএ) উপকেন্দ্র ও লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ (১৩২/৩৩ কেভিএ) উপকেন্দ্র।
এসি