শেষ ঘাঁটিগুলো ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে আইএস যোদ্ধারা
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৯:৫৯ পিএম, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ বৃহস্পতিবার
আগামী সপ্তাহের মধ্যেই সিরিয়া ও ইরাক থেকে ইসলামিক স্টেট জঙ্গীদের "শতভাগ" উচ্ছেদ করা হবে - মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এমন ঘোষণার পর আইএস সদস্য এবং তাদের পরিবারগুলো এলাকা ছেড়ে পালাতে শুরু করেছে।
মার্কিন-সমর্থিত মিলিশিয়ারা এখন আইএসের দখলে থাকা পূর্ব সিরিয়ার ক্ষুদ্র দুটি এলাকার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। মার্কিন সামরিক বাহিনী বলছে, আইএস গোষ্ঠীর দখলে থাকা এলাকার পরিমাণ এখন মাত্র ২০ বর্গমাইলের মতো হবে।
এই এলাকাটি থেকে এখন নারী-পুরুষ ও শিশুদের পালানোর খবর আসছে, এবং তাদের অনেকে গুরুতর আহত অবস্থায় এবং অন্য অনেকে খাদ্যবিহীন অবস্থাতেই পালিয়ে যাচ্ছে।
তারা মার্কিন সমর্থিত কুর্দিপ্রধান সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস বা এসডিএফ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করার জন্য বাঘুজ নামে একটি গ্রামে এসে পৌঁছাচ্ছে।
গত দু`সপ্তাহে মরুভূমি এলাকা থেকে যারা আত্মসমর্পণ করতে আসছে তারা প্রধানত আইএস জঙ্গীদের স্ত্রী ও সন্তানরা।
তাদের পরিচয় যাচাই করে উত্তর সিরিয়ায় বন্দীশিবিরে পাঠিয়ে দিচ্ছে এসডিএফ। এদের মধ্যে ইউরোপীয় নারীও রয়েছে। এর মধ্যে দু`জন হলেন সাবিনা (বয়েস ৩৪) এবং লিওনোরা (বয়েস ১৯) । এরা হচ্ছেন জার্মান জিহাদি মার্টিন লেমকের তিন স্ত্রীর মধ্যে দু`জন।
তারা জানালেন, তাদের জিহাদি স্বামী পালিয়ে গেছেন এবং এবং এসডিএফের হাতে ধরা পড়েছেন।
বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেন, সিরিয়া ও ইরাকে ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠীর দখলে থাকা এলাকাগুলো আগামি সপ্তাহের মধ্যেই `১০০ ভাগ` মুক্ত হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, ``আগামী সপ্তাহেই এ ঘোষণা আসা উচিত`` তবে তিনি সরকারি ভাষ্য আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চান।
আইএসএর যারা আত্মসমর্পণ করার জন্য বাঘুজ আসছে - তাদের অনেকেই এগিয়ে আসতে থাকা বাহিনীগুলোর গোলাবর্ষণে আহত হয়েছে।
পালাতে থাকা আইএস যোদ্ধাদের মধ্যে সিরিয়ান, ইরাকি এবং ইউরোপ ও অন্য নানা দেশ থেকে আসা বিদেশীরাও রয়েছে।
এদের কাউকে কাউকে বন্দী শিবিরে এবং অন্যদের কারাগারে নেয়া হয়েছে।
নিউ ইয়র্ক টাইমস রিপোর্ট করছে যে আইএসের সাথে এখন এসডিএফ কমান্ডারদের একটা দরকষাকষি চলছে - যাতে জঙ্গীরা উত্তর পশ্চিম সিরিয়ার ইদলিব প্রদেশে চলে যাবার একটা নিরাপদ পথ পেয়ে যায়, কারণ ওই এলাকাটি সিরিয়ার সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন নয়।
এর বিনিময়ে আইএস তাদের হাতে বন্দী থাকা এসডিএফ সদস্যদের মুক্তি দিতে পারে।
ইসলামিক স্টেট কি আসলেই সম্পূর্ণ পরাজিত হয়েছে?
ইসলামিক স্টেট তাদের কথিত খিলাফতের ৯৯ শতাংশ এলাকাই হারিয়েছে। একসময় ইরাক ও সিরিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা তাদের দখলে ছিল।
তবে মার্কিন গোয়েন্দা এবং সামরিক কর্মকর্তারা বলেন, সন্ত্রাস বিরোধী কার্যক্রমের চাপ অব্যাহত রাখা না হলে আইএসের আবার পুনরুত্থান ঘটতে পারে।
ট্রাম্প কিছুদিন আগে সিরিয়া থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে সবাইকে বিস্মিত করেছিলেন।
তবে আমেরিকার বিদেশী মিত্ররা থেকে শুরু করে রিপাবলিকান পার্টি এবং নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সমালোচনার পর তিনি সেই প্রক্রিয়া ‘বিলম্বিত’ করেন। কয়েকজন কর্মকর্তা ট্রাম্পের ঘোষণার পর পদত্যাগও করেছিলেন।
কয়েকদিন আগে মার্কিন কেন্দ্রীয় সামরিক কমান্ডের প্রধান জেনারেল জোসেফ ভোটেল বলেন, ইরাক-সিরিয়া সীমান্তে মাত্র ২০ কিলোমিটার জায়গার মধ্যে প্রায় ১,৫০০ আইএস জঙ্গী অবস্থান করছে।
তবে তিনি সিনেটের এক কমিটিকে বলেন, আইএস গোষ্ঠীটির নেতারা এখনো আছে - আছে যোদ্ধা, সহযোগী, সম্পদ এবং তাদের মতাদর্শ, যা তাদের কর্মকান্ডে ইন্ধন যোগায় ।
মার্কিন একটি বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠান তাদের রিপোর্টে বলেছে, আইএসের ওপর চাপ অব্যাহত রাখতে না পারলে ৬ থেকে ১২ মাসের মধ্যে সিরিয়ায় তাদের পুনরুত্থান ঘটতে পারে। বিবিসি বাংলা
এসি