ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪,   পৌষ ৯ ১৪৩১

দিল্লির কুয়াশাই দক্ষিণ এশিয়ার উষ্ণায়নের কারণ: গবেষণা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:৪৫ পিএম, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ শনিবার

ভারতের দিল্লির কুয়াশার ধাক্কায় ‘প্রাণ যায় যায়’ অবস্থা হয়েছে বাংলাদেশের ভোলার। উষ্ণায়নে হাঁসফাঁস করছে মলদ্বীপের হানিমাধু। দিল্লিসহ উত্তর-পশ্চিম ভারতের সর্বনাশা কুয়াশা আক্ষরিক অর্থেই, দক্ষিণ এশিয়ার আবহাওয়া, জলবায়ুর পক্ষে অভিশাপ হয়ে উঠেছে। বিষিয়ে দিচ্ছে গোটা দক্ষিণ এশিয়ার বাতাস। প্রকৃতি ও পরিবেশ। উৎসাহ দিচ্ছে উষ্ণায়নে। গা আরও গরম করে দিচ্ছে বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, মায়ানমারসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর। উড়তে উড়তে গায়ের রং বদলে যাচ্ছে বাতাসের কার্বন কণাদের!

এমনটাই বলছে হালের একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা। ওই গবেষণা বলছে, স্থলভাগের উপর থেকে সমুদ্রের দিকে উড়ে যেতে যেতে কুয়াশার মধ্যে থাকা সাবানের ফেনার মতো পানিকণাগুলোর জাত বদলে যাচ্ছে। তাদের গায়ে লেগে থাকা কার্বন কণাদের গায়ের রং বদলে যাওয়ার জন্য। তাদের সূর্যালোক শুষে নেওয়ার ক্ষমতার বাড়া-কমায়। কুয়াশায় থাকা কার্বন কণাগুলো কালো থেকে হয়ে পড়ছে বাদামি। গবেষণাপত্রটি বেরিয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘সায়েন্স অ্যাডভান্সেস’-এর ৩১ জানুয়ারি সংখ্যায়।

কুয়াশার মধ্যে থাকা ওই কার্বন কণারা সূর্যালোকের সাতটি রংকেই প্রায় পুরোপুরি শুষে নিতে পারে বলে তাদের কালো দেখায়। কিন্তু দিল্লি ও উত্তর-পশ্চিম ভারত থেকে স্থলভাগের উপর দিয়ে সমুদ্রকে লক্ষ্য করে দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর দিকে উড়ে যেতে যেতে কুয়াশার মধ্যে থাকা সেই কার্বন কণাদের আলো শুষে নেওয়ার ক্ষমতা কমে যায়। ফলে তাদের গায়ের রং আর কালো থাকে না। হয়ে পড়ে বাদামি।

সাম্প্রতিক গবেষণা জানাল, আলো শুষে নেওয়ার ক্ষমতা কমে গেলেও কুয়াশায় থাকা ওই কার্বন কণারা আরও বেশি দিনের আয়ু পেয়ে যায় সমুদ্রের উপর দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর দিকে যেতে যেতে। যার অর্থ, ওই বাদামি রঙের কার্বন কণাগুলোর যতটা আয়ু (আরও সঠিক ভাবে বললে, অর্ধায়ু বা হাফ-লাইফ) হয় দিল্লিসহ উত্তর-পশ্চিম ভারতে (৩ দশমিক ৬ দিন), দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোতে তার আয়ু বেড়ে যায় অন্তত তিন থেকে পাঁচগুণ (৯ থেকে ১৫ দিন)। ফলে কুয়াশায় থাকা বাদামি রঙের কার্বন কণাগুলো আরও বেশি দিন থাকে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশে। গবেষকরা দেখেছেন, এটাই ওই অঞ্চলে উষ্ণায়নকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

কুয়াশাকে আবহবিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয়, ‘অ্যাটমস্ফেরিক ব্রাউন ক্লাউড’ (এবিসি)। যানবাহনের ধোঁয়া, জীবাশ্ম জ্বালানি ও অন্যান্য উৎস থেকে যে বিষাক্ত কার্বন মৌল ও যৌগের কণা বেরিয়ে আসে তারাই মূলত থাকে এবিসিতে। বায়ুমণ্ডলের একটি বিশেষ স্তরে থাকে ওই কার্বন কণারা। যারা সূর্যালোকের সাতটি রঙের বেশির ভাগটাই শুষে নেয়। ব্লটিং পেপারের মতো। বিচ্ছুরণও (স্ক্যাটারিং) করে, তবে তা খুবই সামান্য পরিমাণে।

ওই আন্তর্জাতিক গবেষকদলের অন্যতম সদস্য বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্সের অধ্যাপক শ্রীধরন সতীশ জানান, কুয়াশার সময় বাতাসে ‘অ্যাটমস্ফেরিক ব্রাউন ক্লাউড’-এ থাকা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণাদের মধ্যে মূলত আলো শুষে নেয় দু’ধরনের কার্বন কণা। এক ধরনের কার্বন কণার গায়ের রং হয় কালো। অন্য ধরনের কার্বন কণার গায়ের রং হয় বাদামি। কালো রঙের কার্বন কণাগুলো আসে মূলত ডিজেলে চলা যানবাহন বা যন্ত্রাদি থেকে। আর বাদামি রঙের কার্বন কণাগুলো আসে জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর জন্য।

গবেষকরা কাজ করেছেন বাদামি রঙের কার্বন কণাদের নিয়ে। তারা দেখতে চেয়েছিলেন, সমুদ্রের উপর দিয়ে উড়ে যেতে যেতে সূর্যালোক শুষে নেওয়ার ক্ষমতা তাদের বাড়ে-কমে কি না। দেখতে চেয়েছিলেন, সেই বাড়া-কমাটা হয় কতটা।

শ্রীধরন জানিয়েছেন, তারা তিনটি জায়গা- গাঙ্গেয় সমতলে (ইন্দো-গ্যাঞ্জেটিক প্লেন বা, আইজিপি) থাকা দিল্লি, বাংলাদেশের ভোলা (যা আইজিপি-র কিনারে পড়ে) এবং মালদ্বীপের হানিমাধুতে ক্লাইমেট অবজারভেটির বাতাসের নমুনা পরীক্ষা করেছিলেন। দিল্লিসহ উত্তর-পশ্চিম ভারতের কুয়াশার মধ্যে থাকা কার্বন কণাগুলো সমুদ্রের উপর দিয়ে উড়ে গিয়ে পৌঁছায় ভোলা, হানিমাধু আর তার আশপাশের এলাকায়। তারা দেখেছেন, দিল্লি থেকে ভোলা আর হানিমাধু যাওয়ার পথে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশায় থাকা সাবানের মতো পানিকণাগুলোর (অ্যারোসল) রাসায়নিক গঠন পুরোপুরি বদলে যায়। বদলে যায় তাদের চরিত্র। আচার, আচরণ। বাদামি রঙের কার্বন কণাগুলো কুয়াশার পানিকণায় দ্রবীভূত হয়ে যায়। আর সেটা সবচেয়ে বেশি পরিমাণে থাকে দিল্লির কুয়াশায়। সমুদ্রের উপর দিয়ে উড়ে তা বাংলাদেশের ভোলায় পৌঁছালে সেই বাদামি রঙের কার্বন কণার সংখ্যা কমে যায় কুয়াশায়। তা সবচেয়ে কমে যায় মালদ্বীপের হানিমাধুতে। সেই কার্বন কণাগুলোর সূর্যালোক শোষণের ক্ষমতাও উত্তরোত্তর কমে যায় দিল্লি থেকে ভোলা হয়ে হানিমাধুতে পৌঁছে গিয়ে।

গবেষকরা জানিয়েছেন, তারা শুধু শীতের আবহাওয়া ধরেই করেছেন কাজটা। তারা দেখতে চাইছেন, বাতাসে থাকা ওই কার্বন কণাদের সূর্যোলোক শুষে নেওয়ার ক্ষমতার তারতম্যে শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষার মতো মৌসুমগুলো কতটা বদলাচ্ছে বা তাদের মেয়াদ কতটা বাড়ছে বা কমছে।

সূত্র: আনন্দবাজার

একে//