ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

সাগর-রুনি হত্যার সাত বছর

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০২:৩৯ পিএম, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ রবিবার | আপডেট: ১১:৩৬ এএম, ২২ মার্চ ২০১৯ শুক্রবার

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি। ওইদিন সকালে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে ভাড়াবাসায় মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনির ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার হয়। ঘটনাস্থলে এসে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তার করার কথা বলেছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন। কিন্তু এরপর কেটে গেছে প্রায় সাত বছর। আজও রহস্যের জট খুলছে না।
আগামীকাল সোমবার ১১ ফেব্রুয়ারি। অপেক্ষার সাতটি বছর পার হবে তাদের পরিবারের। কিন্তু বাসার ভেতর চাঞ্চল্যকর এই জোড়া খুনের বিচার তো দূরের কথা, রহস্যের জটই খুলল না এত বছরে। তদন্ত শেষ করে খুনিদের বিচারের মুখোমুখি করতে আর কত অপেক্ষা করতে হবে- সে বিষয়েও তদন্ত-সংশ্নিষ্টদের কাছ থেকে নিশ্চিত কোনো আভাস মিলছে না। এমন পরিস্থিতিতে সাগর-রুনির পরিবার, স্বজনের সঙ্গে তার সহকর্মীরাও হতাশ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ দীর্ঘ সময়ে তদন্ত সংস্থা বদলেছে, তদন্ত কর্মকর্তা বদল হয়েছেন কয়েকবার। ৬১ বার আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার তারিখও বদল হয়েছে। কোটি টাকা খরচ করে বিদেশ থেকে আলামত পরীক্ষাও করা হয়েছে। এতসব কার্যক্রমের মধ্যেও চাঞ্চল্যকর ওই জোড়া খুনের তদন্ত আটকে আছে আগের জায়গাতেই- খুনি চিহ্নিত হয়নি, খুনের রহস্যও ভেদ করা যায়নি দীর্ঘ সাত বছরে। থানা পুলিশ এবং গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ব্যর্থতার পর বর্তমানে আদালতের নির্দেশে মামলাটি তদন্ত করছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ভোরে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া ফ্ল্যাট থেকে সাগর-রুনির ছুরিকাহত ক্ষত-বিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নৃশংস ওই হত্যাকাণ্ডের সময় বাসায় ছিল সাংবাদিক দম্পতির একমাত্র সন্তান মিহির সরওয়ার মেঘ। ওই সময়ে তার বয়স ছিল সাড়ে চার বছর।
চাঞ্চল্যকর ওই জোড়া খুন মামলার সর্বশেষ তদন্তের বিষয়ে র‌্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সাগর-রুনি হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনে সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ চলছে। আদালতে অগ্রগতি প্রতিবেদন দেওয়া হচ্ছে। সেই আলোকে তদন্ত এগিয়ে চলছে।’
তদন্ত-সংশ্নিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহূত ছুরি, বঁটি, ছুরির বাঁট, সাগর-রুনির পরনের কাপড় ও সাগরের হাত-পা বাঁধা কাপড় জব্দ করে ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছিল। হত্যায় সন্দেহভাজন কয়েক ব্যক্তির ডিএনএ নমুনাও বিদেশি ল্যাবে পাঠানো হয়। এসব পরীক্ষার প্রতিবেদন তদন্ত সংস্থার হাতে এসেছে। তবে তা দিয়ে আসামি শনাক্তের জন্য আপাতত তেমন কার্যকর ক্লু মেলেনি।
মামলার বাদী নওশের আলম রোমান বলেন, শুরু থেকে যা ছিল, তদন্ত এখন সে অবস্থাতেই আছে। দীর্ঘদিন তদন্ত সংস্থা তার সঙ্গে যোগাযোগ না করলেও সম্প্রতি নতুন একজন তদন্ত কর্মকর্তা বাসায় গিয়ে তথ্য নিয়েছেন। এর বাইরে তিনি কিছু জানেন না।
রুনির মা নুরুন্নাহার মির্জা বলেন, ‘মেয়ে ও জামাতার হত্যার বিচার চেয়ে কেঁদে কেঁদে সাতটি বছর পার করছেন। সন্তান হারানোর শোকে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আদৌ বিচার পাবেন কি-না, সেই শঙ্কাটাই এখন বড় হয়ে উঠেছে।’

উল্লেখ্য, জোড়া খুনের ঘটনায় রুনির ভাই নওশের আলম রোমান বাদী হয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। শুরুতে মামলাটি তদন্ত করে শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ। চার দিনের মাথায় তদন্তের দায়িত্ব পায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। ৬২ দিনের মাথায় সংস্থাটি আদালতে তদন্তকাজে নিজেদের ব্যর্থতা স্বীকার করলে উচ্চ আদালতের নির্দেশে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল মামলাটি র‌্যাব তদন্ত শুরু করে। ওই বছরের ২৬ এপ্রিল পুনঃময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে সাগর-রুনি দম্পতির লাশ তোলা হয়। লাশের ভিসেরা আলামতসহ আরও কিছু নমুনা সংগ্রহ করে র‌্যাবের তদন্ত দল। তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার ৬ মাসের মধ্যেই র‌্যাব বনানী থানার একটি হত্যা ও ডাকাতি মামলায় গ্রেফতার থাকা পাঁচ আসামি মিন্টু, বকুল মিয়া, কামরুল হাসান অরুণ, রফিকুল ইসলাম ও আবু সাঈদকে গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডে নেয়। এ ছাড়া ওই মামলায় বিভিন্ন সময়ে রুনির কথিত বন্ধু তানভীর রহমান, বাড়ির দারোয়ান পলাশ রুদ্র পাল এবং দারোয়ান এনাম আহমেদ ওরফে হুমায়ুন কবিরকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের মধ্যে অনেকেই এখন জামিনে আছেন।
এসএ/