কেমন ছিল ডিজিটাল যুগের আগের প্রেম?
আলী আদনান
প্রকাশিত : ০৪:০৯ পিএম, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ বৃহস্পতিবার
আমাদের সময়ে গ্রামে `প্রেম` কে বলা হত `লাইন`। কেউ যখন কারো সাথে `লাইন` করত, অন্যরা তখন স্কুলের দেওয়ালে তাদের দু`জনের নাম যোগ চিহ্ন দিয়ে লিখে সেই লাইনের প্রচার ও প্রসারে ভূমিকা রাখত। যেমন: আদনান+................।
অধিকাংশ ছেলেই নিজে একা গিয়ে প্রপোজ করার সাহস রাখত না। সে ক্ষেত্রে সাহায্য করত মেয়ের বান্ধবী। প্রেমিকার চাইতে প্রেমিকার বান্ধবীকে বেশী তেল দিতে হতো। কখনো কখনো এক্ষেত্রে প্রেমিকার বান্ধবীর সাথেও প্রেম হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিত।
প্রেমপত্র লিখা ছিল সবচেয়ে বড় যোগ্যতা। যে যতো বেশী আবেগ দিয়ে লিখতে পারত, তার প্রেম টিকে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল তত বেশী। আর প্রেমিক চিঠির বিনিময়ে পাল্টা চিঠি যখন পেত, তখন তার আনন্দ ছিল পরীক্ষার আগের রাতে প্রশ্ন পেয়ে যাওয়ার মতো।
মেয়েরা তখন যেসব প্রেমপত্র লিখত তাতে দু`চার লাইনের কবিতা থাকতো। যেমন:
"মরিচ গাছে সাদা ফুল
আমার লেখায় অনেক ভুল
চিঠি পড়ে হাসবে না
আমার কথা ভুলবে না"
এসব কবিতার কবি কে তা এখনো আবিষ্কার করা কঠিন কাজ।
কোন ছেলে বা মেয়ে যখন প্রেম করতো তাকে তার আশেপাশের বন্ধুমহল ঈর্ষার দৃষ্টিতে দেখত। মেসেঞ্জার, ইমু, ভাইবার যেহেতু ছিলনা তাই দেখা করার সবচেয়ে বড় উপায় ছিল স্কুলে যাওয়ার সময় রাস্তায় অপেক্ষা করা। সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে হাতে চিঠি বা চিঠির উত্তর ধরিয়ে দেওয়া।
খুব গ্রামের দিকে প্রেমিকরা প্রেমিকার বাড়ীর সামনে ঘুরাঘুরি করতে দেখা যেত। প্রেমিকাকে ডাকার জন্য তারা দু`চার লাইন গানের কলি কোড ল্যাংগুয়েজ হিসেবে ব্যবহার করতো। প্রকাশ্য ডেটিংয়ের কথা কেউ কল্পনাও করতে পারতো না। সেক্ষেত্রে পাড়া প্রতিবেশী বা আত্মীয় স্বজনের গায়ে হলুদ বা বিয়ের অনুষ্ঠাণ ছিল নিরাপদ জায়গা। গায়ে হলুদ বা বিয়ের অনুষ্ঠাণে নতুন প্রেমের সূচনা হয়েছে সেই প্রেম পুণরায় বিয়ে পর্যন্ত গড়িয়েছে- এমন জুটি আমার বন্ধু তালিকায় আছেন।
এখনকার মতো তখন গোপনে একাধিক প্রেমিক রাখার কথা অনেকে কল্পনাও করতে পারতো না। কাউকে কথা দিলে সে কথা রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করা হতো।
তবে হ্যাঁ, এখন সব ছেলে প্রপোজ করে ও সব মেয়ে প্রপোজ পায়। তখন প্রপোজ করার জন্য বুকের পাটা লাগত। আর প্রপোজ পাওয়ার জন্য কিছু না কিছু একটা আলাদা গুণ লাগতো।
আর কারো `লাইন` ভেঙ্গে যাওয়াকে বলা হত `ছ্যাঁক` খাওয়া। এখন অনেকে দিন একবার করেও ছ্যাঁকা খায়। কেউ সেই ছ্যাঁকার খবর জানেনা। আমাদের সময়ে কেউ ছ্যাঁকা খেলে গ্রামবাসী তাকে `দেবদাশ` নামকরণ করে শরৎচন্দ্রের কর্মের স্বার্থকতা ধরে রাখত।
ছ্যাঁকা খাওয়া তরুন ব্লেড দিয়ে নিজের হাত কেটে প্রেমিকার নাম লেখার ঘটনা মাঝে মধ্যে ঘটত। তবে মেয়েরা এ ব্যাপারে খুব সচেতন ছিল। চামড়া কাটা তো দূরের কথা একটা ফোস্কাও পড়তে দিতো না।