দেশে গ্যাসের মজুদ আর কতদিন চলবে?
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৩:২৫ পিএম, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ বুধবার
দেশে গ্যাসের সংকট দিন দিন প্রবল আকার ধারণ করছে। বিশেষ করে শহরাঞ্চলের অনেক বাড়িতে এখন রান্না করা দায় হয় গেছে। পাইপ লাইনের গ্যাসের আশা ছেড়ে দিয়ে অনেকে এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবহার করছেন।
সংকট মোকাবেলায় সরকার এরই মধ্যে বিদেশ থেকে গ্যাস আমদানি শুরু করেছে। এখন প্রশ্ন উঠেছে দেশের গ্যাসের মজুদ আর কতদিন চলবে?
২০১৮ সালের জুলাই মাসে বিদ্যুৎ, জ্বালানী এবং খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সংসদে তথ্য দিয়েছেন, উত্তোলন যোগ্য নিট মজুদের পরিমাণ ১২.৫৪ ট্রিলিয়ন ঘনফুট। এই হিসেব এক বছর আগের কথা। ব্যবহারের কারণে এখান থেকে মজুত আরো কমেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, বাংলাদেশে এখন গ্যাসের মজুদ ১২ টিসিএফ আছে। কিন্তু প্রতিবছর এক টিসিএফ গ্যাস ব্যবহার করা হচ্ছে।
সে হিসেবে আগামী ১২ বছর চলার কথা। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, পরিমাণ গ্যাস এখন মজুত আছে সেটি দিয়ে ১০ বছরের বেশি চলবে না। এমনটাই মনে করেন অনেক জ্বালানী বিশেষজ্ঞ।
তবে জ্বালানী বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ম. তামিম বলেন, বাংলাদেশে এখন সব মিলিয়ে ১০ ট্রিলিয়ন ঘনফুটের বেশি গ্যাস নেই।
তিনি বলেন, ‘মজুত যা আছে, সেটা আমি সবসময় একই পরিমাণে উত্তোলন করতে পারবো সেটা হয় না।’ গ্যাস যত উত্তোলন করা হবে, গ্যাস ক্ষেত্রের চাপ ততই কমতে থাকবে।
ফলে এক পর্যায়ে গ্যাসের মজুত থাকলেও গ্যাস উত্তোলন ক্রমাগত কমতে থাকবে। বর্তমানে গ্যাসের মজুত এবং উত্তোলন হিসেব করলে আগামী ১০ বছরের জন্য গ্যাস আছে বলে ধরে নেওয়া যায়।
অধ্যাপক তামিম বলেন, ‘এটা একটা ইন্ডিকেশন যে আমাদের আরো ব্যাপক হারে অনুসন্ধান করতে হবে। সামনে বিপদ আছে।’
বাংলাদেশে এখন প্রতিদিন যে পরিমাণ গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে সেটি চাহিদা মেটানোর জন্য পর্যাপ্ত নয়। বাংলাদেশে বড় আকারের গ্যাস ক্ষেত্র সর্বশেষ আবিষ্কৃত হয়েছিল হবিগঞ্জ জেলার বিবিয়ানা গ্যাস ক্ষেত্র।
জ্বালানী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বড় ধরণের গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কার হবার জায়গা হচ্ছে গভীর সমুদ্র। ভারত এবং মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের সমুদ্র সীমা নিষ্পত্তি হলেও সমুদ্রে গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের জন্য অনুসন্ধান চালানো হয়নি। যদিও সমুদ্র সীমা নিষ্পত্তির পরে মিয়ানমার বেশ দ্রুততার সাথেই গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কার করেছে।
অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, ‘আমরা মনে করি বাংলাদেশের সাগর বক্ষে যথেষ্ট পরিমাণ গ্যাস আছে। যদি সেগুলো অনুসন্ধান এবং উত্তোলন করা হতো, তাহলে এখন যে গ্যাস ক্রাইসিস আছে সেটা হতোই না।’
তিনি বলেন, ‘এটা একটা হতাশাজনক চিত্র। গত ১০-১৫ বছরে উল্লেখযোগ্য কোন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার হয় নাই।’
তিনি বলেন,গ্যাস সংকট থেকে মুক্তির উপায় দুটি। বিদেশ থেকে এলএনজি গ্যাস আমদানি করা এবং আরেকটি উপায় হচ্ছে গ্যাস খুঁজে বের করা।
‘আমাদের নিজস্ব গ্যাস শেষ হয়ে গেছে, একথা কেউ বলতে পারবে না। নতুন মজুদ আমরা আর পাবো না এটা বলা যাবে না।’
কিন্তু গ্যাস ক্ষেত্র পাওয়ার জন্য যে ধরণের উদ্যোগ দরকার সেটি একেবারেই অনুপস্থিত বলে উল্লেখ করেন অধ্যাপক তামিম।
বাংলাদেশে এখন প্রতিবছর যে পরিমাণ গ্যাস ব্যবহৃত হচ্ছে, সেটির চাহিদা ১০ শতাংশ হারে বাড়ছে। সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধান হচ্ছে না কেন?
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাংলাদেশের গভীর সমুদ্রে গ্যাস প্রাপ্তির যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। বঙ্গোপসাগরে এখন বাংলাদেশের ২৬টি ব্লক রয়েছে। এর মধ্যে ১৩টি অগভীর সমুদ্রে এবং ১৩টি গভীর সমুদ্রে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গভীর সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য অবশ্যই বিদেশি কোম্পানিগুলোর উপর নির্ভর করতে হবে।
বিদেশি কোম্পানিগুলো যাতে বাংলাদেশের সমুদ্র সীমায় গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য আগ্রহী হয়, সেজন্য বাংলাদেশের তরফ একটি তথ্যভাণ্ডার গড়ে তুলতে হবে।
অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, ‘তারা তো একটা খালি মাঠে চোখ বন্ধ করে আসতে চায় না। বিদেশি কোম্পানিগুলো ডাটাবেস-এর উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেয় তারা কোন দিকে যাবে।’
সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধান করতে হলে একটি সার্ভে বা জরিপ করার কথা উল্লেখ করছেন অধ্যাপক তামিম। তিনি বলেন, জরিপের মাধ্যমে যদি কোন তথ্য না পাওয়া যায়, তাহলে বিদেশি কোম্পানিগুলোর আগ্রহ তৈরি হবে না। এ ধরনের জরিপের মাধ্যমে জানা যাবে সমুদ্রে গ্যাস প্রাপ্তির সম্ভাবনা কতটা আছে।
প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানী উপদেষ্টা গণমাধ্যমকে বলেছেন, গ্যাস সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশ এরই মধ্যে এলএনজি আমদানি শুরু করেছে। এখন যে পরিমাণ গ্যাস উত্তোলন করা হয়, আগামী তিন-চার বছর পরে সেটি আরো কমে যাবে।’
জ্বালানী উপদেষ্টা বলেন, এরই মধ্যে কয়েকটি গ্যাস ক্ষেত্র পাওয়া গেছে। মিয়ানমারে কাছে সমুদ্রে গ্যাস প্রাপ্তির সম্ভাবনা আছে বলেও তিনি মনে করেন।
তথ্যসূত্র: বিবিসি
এমএইচ/