প্রথমবার মায়ের কাছে টাকা পাঠাতে চেয়েছিল রাজু
আলী আদনান
প্রকাশিত : ০৫:০৬ পিএম, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ বৃহস্পতিবার
ঢাকা মেডিকেলে মর্গের সামনে ভাইয়ের লাশের জন্য অপেক্ষা করছে মাসুদ রানা। পরনে লুঙ্গি। অতিরিক্ত পরিশ্রমে ভেঙ্গে যাওয়া শরীর। কাঁদতে কাঁদতে ফোলে গেছে চোখ। খবরটা শোনার পর থেকে পেটে এক ফোটা পানি পড়েনি। কাঁদতে কাঁদতে বলছে, আমি আমার ভাইয়ের মৃত্যুর খবর মাকে কীভাবে জানাব। লাশ নিয়ে গ্রামে গেলে মাকে কী বলব!
আরও অনেকের মতো মাসুদ রানা কান্নায় ভারী হয়ে আছে ঢাকা মেডিকেল এলাকা। আরও অনেকেই এসেছে রাজধানীর চকবাজার এলাকায় অগ্নি দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া স্বজনদের লাশ নিতে। সবাই কাঁদছে। কে কাকে সান্ত্বনা দেবে।
অভাবের সংসারে জন্ম হয়েছিল রাজু`র। দিন মজুর বাবা মারা গেছে অনেক আগেই। দুই ভাই, তিন বোন। ক্লাস এইটে পড়া অবস্থায় অভাবের কারণে স্কুল ছাড়তে হয় তাকে। মাকে বলত, মা আমি ঢাকায় গিয়ে চাকরি করলে তোমার কোন অভাব থাকবে না।
মায়ের অভাব মেটানোর জন্য বড় ভাই মাসুদ রানার সঙ্গে দুই মাস আগে ঢাকায় আসে রাজু। ফ্রেব্রুয়ারির এক তারিখে চকবাজারে এক জুতার দোকানে চাকরি নেয়। গতকাল দুপুরে মার সঙ্গে শেষ কথা হয়েছিল। তখন বলেছে, মা কয়েকটা দিন অপেক্ষা কর। মাস শেষ হলে আমি বেতন পাব। তখন তোমার কাছে টাকা পাঠাব।
দোকানের মালিক ইসলামের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সিলিন্ডার বিস্ফোরণের সময় সে জুতার ভ্যান নিয়ে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু রাস্তা খুব সরু ও মানুষ বেশী হওয়ায় সে বের হতে পারেনি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আগুন লাগার সময় চুরিহাট্টা মোড়টি যানজটে ঠাসা ছিল। এ কারণে রাস্তাতেই অনেকে পুড়ে মারা গেছে।
বুধবার রাত ১০টা ১০ মিনিটে নন্দ কুমার দত্ত সড়কের শেষ মাথায় মসজিদের পাশে ৬৪ নম্বর হোল্ডিংয়ের ওয়াহিদ ম্যানসনে আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে তা আশপাশের ভবনেও ছড়িয়ে পড়ে।
খবর পেয়ে অগ্নি নির্বাপক বাহিনীর ৩৭টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। পরে হেলিকপ্টারে করে পানি ছিটিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়।
অবশেষে ১০ ঘণ্টার চেষ্টায় বৃহস্পতিবার সকালে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এখন পর্যন্ত ৮১ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। লাশের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
এসএইচ/