ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

বিদ্রুপের শিকার রোনালদো

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০১:১৪ পিএম, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ শুক্রবার | আপডেট: ০২:১৮ পিএম, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ শুক্রবার

তার পায়ে বল গেলেই ওয়ান্ডা মেট্রোপলিটানোর গ্যালারি কান ঝালাপালা করে বাঁশি বাজিয়েছে। বিদ্রুপের বাঁশি। এ হেন ‘অভ্যর্থনা’ সহ্য না হওয়ারই কথা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর।

সময়ের সঙ্গে চিৎকার যত বিকট হয়েছে, ততবারই হাতের পাঁচ আঙুল খুলে পর্তুগিজ তারকা বুঝিয়েছেন, তার ওয়াড্রবে পাঁচটা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ আছে। যেন এ-ও বলতে চেয়েছেন, তোমাদের বিরুদ্ধে ২২ গোল করেছি।

ম্যাচের পরে টানেলে হাঁটার সময় গজগজ করতে করতে বলে গেলেন একই কথা, ‘পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছি। আতলেটিকো দে মাদ্রিদ একবারও নয়।’ তখনই কেউ প্রশ্ন করেন, ‘আর কি কোয়ার্টার ফাইনালের আশা আছে?’ রোনালদোর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া, ‘তুরিনে দ্বিতীয় লেগে ওদের দেখে নেব।’

কিন্তু ‘দেখে নেওয়া’ কতটা সহজ?

গত বুধবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ কোয়ার্টার ফাইনালে ০-২ হেরেছে জুভেন্টাস। তাই তুরিনে চাকা ঘোরাতে ৩-০ জিততেই হবে রোনালদোদের। আতলেটিকো আবার গোল করলে ইতালি ফুটবলে ‘ওল্ড লেডি’র আশা কার্যত শেষ হয়ে যাবে। অথচ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিততে আয়োজনে ত্রুটি রাখেননি জুভেন্টাস কর্তারা। ২৩ বছর পরে ইউরোপ সেরা হতে রিয়াল থেকে রোনালদোকে কিনতেই ১১ কোটি ২০ লাখ ইউরো খরচ করা হয়েছিল। করবে না-ই বা কেন? পর্তুগিজ তারকার শুধু চ্যাম্পিয়ন্স লিগেই যে গোল ১২১!

জুভেন্টাস যেন ধরেই নিয়েছিল, সি আর সেভেন খেলা মানেই গোল এবং জয় আসবে। কিন্তু তুরিনের ক্লাবের জার্সি পরার পরে সেটা হচ্ছে কই? চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলেছেন ছয় ম্যাচ। গোল মাত্র একটা। তবু আশায় বুক বেঁধেছিলেন মাসিমিলিয়ানো আলেগ্রি। অন্তত লা লিগায় যাদের বিরুদ্ধে তিনি শাসন করেছেন, সেই রোনালদোই হারিয়ে দেবেন আতলেটিকোকে, এমনই ধরে নেওয়া হয়েছিল। ম্যাচে একবার বাদে ফল হল ঠিক উল্টো। সেই একবার বুক চিতিয়ে চেনা ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে নিঃশ্বাস ছেড়ে ফ্রি-কিক মেরেছিলেন রোনালদো। খেলা শুরুর ৬ মিনিটে সেই শট আতলেটিকো গোলরক্ষক ইয়ান ওবলাক অসাধারণ ক্ষিপ্রতায় বারের উপর তুলে দেন।

নায়ক অবশ্য পোল্যান্ড জাতীয় দলের গোলরক্ষক ওবলাক নন। ফুটবলে গোলই যদি শেষ কথা হয়, তাহলে বেছে নিতে হবে রোনালদোর দেশ থেকে আকাশ পথে পাঁচ হাজার মাইল দূরের উরুগুয়েকে। আতলেটিকোর হয়ে দু’টি গোল করলেন হোসে মারিয়া হিমেনেস (৭৮ মিনিট) ও দিয়েগো অদিন (৮৩ মিনিট)। দু’জনই উরুগুয়ের ফুটবলার। তার উপর সেন্টার ব্যাক! এবং ২-০ হওয়ার পরে স্টেডিয়ামে যে পরিমাণ উৎসব শুরু হল তাতে মনে হয়েছে, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালই যেন হচ্ছে। ঘটনাচক্রে এবারের ফাইনাল হবে ওয়ান্ডা মেট্রোপলিটানোতেই।

কম গেলেন না আতলেটিকোর ম্যানেজার দিয়েগো সিমিয়োনেও। ওইদিন গোল করার পরে বিশ্রী অঙ্গভঙ্গিতে উৎসব করতে গিয়ে বিপদেও পড়লেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় তার সমালোচনা হল বিস্তর। সিমিয়োনে অবশ্য ক্ষমাও চেয়ে নেন। ‘কাউকে আঘাত করতে চাইনি,’ বলেন আতলেটিকোর ম্যানেজার।

দুই ডিফেন্ডার গোল করে গেলেও এমন নয় যে, আতলেটিকোর স্ট্রাইকাররা সাংঘাতিক ব্যর্থ। বরং উল্টোটাই সত্যি। একবার তো নিশ্চিত গোলের শট জুভেন্টাস ডিফেন্ডার হাত দিয়ে আটকালেন। পেনাল্টিই পাওয়ার কথা লা লিগায় দু’নম্বরে থাকা ক্লাবের। আর একবার আলভারো মোরাতার হেডে করা গোল বাতিল হল। দু’বারই রেফারি ভিডিও প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে সিদ্ধান্ত পাল্টান। ফল ৪-০ হয়ে গেলে কিন্তু তুরিনের ফিরতি ম্যাচটা কার্যত নিয়মরক্ষার হয়ে যেত।

এত কিছুর পরেও আতলেটিকোর জন্য খারাপ খবর, প্রতিযোগিতায় তিনবার হলুদ কার্ড দেখায় ফিরতি ম্যাচে খেলতে পারবেন না দিয়েগো কোস্তা। হয়তো সে জন্যই জুভেন্টাস ম্যানেজার আলেগ্রি বলতে পারলেন, ‘দ্বিতীয়ার্ধে যা খেলেছি তার চেয়ে খারাপ হয়তো আর কোনও দিন খেলব না। সব চেয়ে বড় ভুলটা হয়েছে ফাঁদে পা দিয়ে ওদের অহেতুক তাড়া করতে গিয়ে। ভুল থেকেই শিখতে হবে। এই ফল নিজেদের মাঠে উল্টে দেওয়া সম্ভব।’ 

সূত্র: আনন্দবাজার

একে//