ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১

তামাক ব্যবহারে বছরে ৩১ হাজার কোটি টাকা স্বাস্থ্যক্ষতি

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৭:২৪ পিএম, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ শনিবার

তামাকজনিত ব্যাধি ও অকালমৃত্যুর কারণে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে বাংলাদেশ। শুধু তামাক ব্যবহারজনিত আর্থিক ক্ষতি বছরে ৩০ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা বা ৩.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জাতীয় আয়ের (জিডিপি’র) ১.৪ শতাংশ। আর ২০১৮ সালে তামাকজনিত রোগে প্রায় ১ লাখ ২৬ হাজার মানুষের অকাল মৃত্যু হয়েছে, যা দেশের মোট মৃত্যুর ১৩.৫ শতাংশ।

আজ ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, শনিবার ঢাকা ক্লাবে অনুষ্ঠিত তামাকের অর্থনৈতিক ক্ষতি বিষয়ক গবেষণার ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়। গবেষণায় আরো বলা হয়, যারা তামাক ব্যবহার করেন না, তাদের চাইতে তামাক ব্যবহারকারীদের মধ্যে তামাকজনিত প্রধান ৭টি রোগের একটিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ৫৭ শতাংশ বেশি এবং তামাকজনিত ক্যান্সারের ক্ষেত্রে ঝুঁকি ১০৯ শতাংশ বেশি।

গবেষণায় তামাক চাষের পরিবেশ ও স্বাস্থ্যগত ক্ষতি, তামাক চাষে দূলর্ভ কৃষিজমি ব্যবহারের ফলে খাদ্য নিরাপত্তার হুমকি, অগ্নিকান্ডের আশংকা ও ক্ষতি, পরিবেশ দূষণ এবং অন্যান্য ক্ষতি পরিমাপ করা হয়নি। তামাকের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় শিশুরা। দেশের অর্ধেকের বেশি অর্থাৎ ২কোটি শিশু পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছে।

সকাল ৯.০০ থেকে বিকালে ৪.০০ পর্যন্ত ঢাকা ক্লাবের স্যামসন এইচ চৌধুরী হলে দিনব্যাপী গবেষণার ফল উপস্থাপনের উদ্বোধন পর্ব, কারিগরি অধিবেশন, গ্রুপ ডিসকাশনসহ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি, আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটি, ক্যান্সার রিসার্চ ইউকে ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ যৌথভাবে Economic Cost Of Tobacco Use in Bangladesh: A Health cost approach এ গবেষণা পরিচালনা করে। তামাক গ্রহনের কারণে অসংক্রামক সাতটি রোগের অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি বিষয়ক একটি গবেষণাকর্মে দশ হাজার বাড়িতে সর্বোচ্চ মান বজায় রেখে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এতে বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি গবেষণাটির নেতৃত্ব দিয়েছে।

দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মোঃ মুরাদ হাসান। আরো উপস্থিত জাতীয় অধ্যাপক ব্রি: জে: (আবঃ) আবদুল মালিক, স্বাস্থ্য সচিব মোঃ আসাদুল ইসলাম, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. নাসিরউদ্দিন আহমেদ, ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এম এ হাই, ভাইটাল স্ট্রাটেজিস এর হেড অব প্রোগ্রমস মো. শফিকুল ইসলাম, আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির পরিচালক অধ্যাপক ড. নিগার নারগিস ও গ্রেগ হাইফলে, ক্যান্সার রিসারর্চ-ইউকে’র প্রিসিলা টিগা, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সমন্বয়কারী (যুগ্মসচিব) মো. খলিলুর রহমান প্রমুখ।

উদ্বোধনী পর্বে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক মোল্লা ওবাদুল্লাহ বাকী। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন গবেষণা প্রকল্পের পরিচালক ও বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির যুগ্ম-মহাসচিব অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক।
স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা: মুরাদ হাসান এমপি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে তামাকমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন। এ লক্ষ্যে সরকার তামাক নিয়ন্ত্রণকে গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় প্রত্যাশা করে না কোন তামাক কোম্পানিতে সরকারের শেয়ার থাকুক। বৃট্রিশ আমেরিকান ট্যোবাকোতে বাংলাদেশ সরকারের শেয়ার রয়েছে তা পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহার করা হবে।

ড. নাসিরউদ্দিন আহমেদ বলেন, তামাকের দাম বাড়াতে হবে এবং তা ক্রয় ক্ষমতার বাইরে নিয়ে গেলে তামাকের ব্যবহার ক্রমান্বয়ে কমে আসবে। তামাকের কর বৃদ্ধিতে অন্যতম প্রতিবন্ধকতা কতিপয় রাজনৈতিক ব্যক্তি ও উর্ধ্বতন সরকারী কর্মকর্তা, যারা তামাকের কর না বাড়ানোর জন্য তামাক কোম্পানির পক্ষে লবিস্ট হিসেবে কাজ করেন। তিনি আরও বলেন, বৃট্রিশ আমেরিকান ট্যোবাকো থেকে সরকারের শেয়ার প্রত্যাহার করা প্রয়োজন। তামাক কোম্পানীগুলো প্রচুর রাজস্ব ফাঁকি দেয়। রাজস্ব বিভাগকে তামাক কোম্পানি থেকে রাজস্ব আদায়ে আরো বেশি সক্ষমতা বাড়াতে হবে।

স্বাস্থ্য সচিব মোঃ আসাদুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার আলোকে ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে তামাকমুক্ত করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এ ধরণের গবেষণা ও এর ফলাফল আমাদের সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

আরকে//