ক্যান্সার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে কাঁচামরিচ
ইসরাত জাহান
প্রকাশিত : ০৫:১২ পিএম, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ রবিবার | আপডেট: ০৭:২৪ পিএম, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ রবিবার
ইসরাত জাহান
কাঁচামরিচ! তরকারীর স্বাদ যেমন বাড়ায় তেমনি এর পুষ্টিগুণ নিয়েও বলে শেষ করা যাবে না। ধনী-গরীব, শহর-গ্রাম- এ এমন কেউ নেই যারা কাঁচা মরিচ চিনেন না।
কাঁচামরিচ যেহেতু ঝাল তাই অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে কাঁচামরিচ খাওয়া যাবে কি যাবে না? কাঁচা মরিচ স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। মরিচকে ঝাল বানায় এর বিশেষ উপাদান ক্যাপসাইকিন। কাঁচা মরিচের ঝালের কারণে অনেকেই একে কাঁচা খেতে সাহস পায় না।
আমাদের (পুষ্টিবিদ) অনেকে প্রশ্ন করেন কাঁচামরিচ কাঁচা খাওয়া ভাল নাকি রান্না করে খাওয়া ভাল? এর উত্তর হলো, কাঁচা মরিচ কাঁচা খাওয়া ভালো। ৩৭০ ডিগ্রি তাপমাত্রার বেশি তাপমাত্রায় কাঁচা মরিচ সেদ্ধ করলে কিংবা ভেজে খেলে, তাতে থাকা বিদ্যমান ভিটামিন সি নষ্ট হয়ে যায়। তাই এর আসল উপকারিতা পেতে প্রতিদিন খাবারের সঙ্গে কাঁচা মরিচ কাঁচা খেতে অভ্যাস করুন।
আপনি যদি প্রতিদিন একটি কাঁচা মরিচ খান, তাহলে আপেল খেতে হবে না। আর যাদের প্রতিদিন ভাতের সাথে একটি কাঁচা মরিচ না খেলে চলেই না তাদের জন্য সুখবর হচ্ছে কাঁচা মরিচ স্বাস্থ্যের জন্য অনেক কার্যকারী উপাদান। কাঁচা মরিচ সাধারণত কাঁচা, রান্না কিংবা বিভিন্ন ভাজিতে দিয়ে খাওয়া হয়। এতে আছে ভিটামিন এ, সি, বি-৬, আয়রন, পটাশিয়াম এবং খুবই সামান্য পরিমাণে প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট।
ঝাল স্বাদের সব্জিগুলোতে থাকে বিটা ক্যারোটিন ও আলফা ক্যারোটিন, বিটা ক্রিপ্টোক্সানথিন ও লুটেইন জিয়াক্সানথিন ইত্যাদি উপাদান। এই উপাদানগুলো মুখে লালা আনে, ফলে খেতে মজা লাগে। এছাড়াও এগুলো ত্বক ও স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। আসুন জেনে নেই কাঁচা মরিচের স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলো।
ক্যান্সার প্রতিরোধী
কাঁচা মরিচে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকার কারণে তা শরীরের জন্য ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিক্যাল থেকে আমাদের সুরক্ষা যোগায়। প্রোস্টেটের সমস্যা দূর করতেও সাহায্য করে মরিচ।
চোখ ও ত্বকের জন্য উপকারী
বেশি পরিমাণে ভিটামিন সি ও বেটা ক্যারোটিন বিদ্যমান থাকায় চোখ ও ত্বকের জন্য কাঁচা মরিচ অত্যন্ত উপকারী। তবে দীর্ঘক্ষণ তাপ, আলো ও বাতাসের সংস্পর্শে থাকলে মরিচের ভিটামিন সি নষ্ট হয়ে যায়। তাই এ ব্যাপারে সাবধান থাকতে হবে।
শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে
গবেষণায় দেখা গেছে, কাঁচা মরিচ শরীরে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। ফলে ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য এটি অত্যন্ত উপকারী।
ইনফেকশন রোধকারী
কাঁচা মরিচে ইনফেকশনরোধী উপাদান থাকায় তা ত্বকের নানা ধরণের ইনফেকশন প্রতিরোধ করে।
আয়রন সমৃদ্ধ
আয়রন কাঁচা মরিচের একটি প্রধান পুষ্টি উপাদান। তাই শরীরে আয়রনের অভাব থাকলে এটি গ্রহণ করলে উপকার পাওয়া যায়।
ব্যথানাশক
কাঁচা মরিচ গ্রহণ করার পর এটি থেকে এন্ডোরফিন নামক এক ধরনের উপাদান নিঃসরিত হয়, যা শরীরের ব্যথা উপশমে সাহায্য করে থাকে।
এবার জেনে নেই আমাদের শরীরে প্রতিদিন কতটুকু ভিটামিন সি গ্রহণ করা উচিত:
শিশুদের জন্য ২০ মিলিগ্রাম, প্রাপ্ত বয়স্কদের ৩০ মিলিগ্রাম এবং গর্ভবতী মায়েদের জন্য ৫০ মিলিগ্রাম! একটি কাঁচা মরিচে অন্যান্য ভিটামিনের সাথে শুধুই ভিটামিন সি আছে ১০৯.১৩ মিলিগ্রাম তাই ভয় পাবেননা খাদ্যের মাধ্যমে দেহে ভিটামিন বেশি প্রবেশ করলে তা স্বাভাবিকভাবেই নিষ্কাশিত হয়ে যায়।
এবারে আসি ভিটামিন কি মরিচের বিচিতে নাকি চামড়ায়? দুটোতেই রয়েছে ভিটামিন। তবে আপনি দৈনিক তিন বেলায় ৩টা কাঁচা মরিচ খেলে আপনার প্রতিদিন ভিটামিন সি এর প্রয়োজন মিটেও অতিরিক্ত থেকে যাবে যা আপনার কোন ক্ষতির কারণ হবেনা । তবে রান্না করা কাঁচা মরিচের ভিটামিন সি সহ অন্যান্য ভিটামিন ও পুষ্টি চলে যায় তাই মরিচ কাঁচাই খাওয়াই উত্তম।
(লেখক: ইসরাত জাহান, ডায়েটিশিয়ান ও নিউট্রিশিয়ানিস্ট, বিআরবি হাসপাতাল, ঢাকা। তিনি নিয়মিত একুশে টেলিভিশন অনলাইনে স্বাস্থ্য পরামর্শ দিয়ে থাকেন।)
আআ/এসি