আবাসিকে আগুন থেকে রক্ষা পেতে করণীয়
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৫:৫৮ পিএম, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ রবিবার | আপডেট: ০৫:৫৯ পিএম, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ রবিবার
বাংলাদেশের পুরনো ঢাকার চকবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর আবারো আলোচনা হচ্ছে আবাসিক ভবনের অগ্নি নিরাপত্তা নিয়ে। ফায়ার সার্ভিস বলছে, প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাবে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে ভবনগুলোতে অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপণ ব্যবস্থা আছে তদারক করা সম্ভব হয়না। আর এ সুযোগেই ফায়ার ছাড়পত্র ছাড়াই গড়ে উঠছে বহুতল ভবন, বাণিজ্যিক, বিভিন্ন ধরণের কারখানা।
যদিও এসব অনুমোদনহীন কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়তই নানা ধরনের অভিযান চালানোর খবর আসে গণমাধ্যমে কিন্তু বাস্তবতা হলো দেশে প্রতিনিয়ত নিজ উদ্যোগে বাড়িঘর তৈরির কাজ চলছেই।
আর সেগুলোর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্থপতি কিংবা প্রকৌশলীদের সংশ্লিষ্টতা থাকেনা। ফলে অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপণ ব্যবস্থা উপেক্ষিতই থেকে যায়।
স্থপতি ইকবাল হাবিব বলছেন, শুরুতেই নিজের বাড়ির নিরাপত্তার বিষয়টিতে নিজেকেই গুরুত্ব দিতে হবে। এক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয়কে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন তিনি। এগুলো হলো:
১. ভবন অনুমোদন প্রক্রিয়াকে না এড়িয়ে যাওয়া। অর্থাৎ ভবনটিতে নিরাপদ করতে একটি নকশা তৈরি করে সেটি যথাযথভাবে অনুমোদন।
২. স্থপতি ও প্রকৌশলীদের না এড়ানো। ভবন নকশা প্রণয়ন ও সে অনুযায়ী বাড়ি নির্মাণে যথাযথ ব্যক্তিদের জড়িত রাখলে দুর্ঘটনার ভয় এমনি কমে যায়। এক্ষেত্রে ব্যয় কমানোর চিন্তার কারণে অনেক সময় পুরো বাড়িই ঝুঁকির মুখে থাকে।
৩. ভবনের প্রকৌশলগত বিষয়গুলোকে অবহেলা না করা। যেমন কোথায় সিঁড়ি হবে, আগুণ লাগলে কোন পথ দিয়ে কিভাবে নিরাপদে বের হবে।
৪. নিরাপত্তার খাতিরে দমকল বাহিনীর পরামর্শ অনুযায়ী সুরক্ষা ব্যবস্থা নেয়া এবং সেগুলো ব্যবহারবিধি জানা থাকতে হবে।
৫. ভবন তৈরি এখন বেশি মাত্রায় প্রযুক্তি নির্ভর হওয়ার কারণে সতর্ক থাকা ও যথাযথ পেশাজীবীদের সহায়তা নেয়া।
বাংলাদেশের ন্যাশনাল ফায়ার কোড প্রণয়নের সাথে জড়িত ছিলেন বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো: মাকসুদ হেলালী। তিনি বলছেন, ২০০৬ সালেই বাংলাদেশে একটি আইন হয়েছে এবং পরে সেটি সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হলেও এখনো তা বাস্তবায়িত হয়নি।
তিনি আরও বলছেন, সাধারণত আবাসিক ভবনের ক্ষেত্রে দু`ধরণের বিষয় আছে : একটি হলো ছয় তলা বা তার চেয়ে কম কিংবা ছয় তলার বেশি। ছয় তলার বেশি হলে সেখানে অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপণের জন্য অনেক কিছু থাকতে হবে।
"সাধারণভাবে কয়েকটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো ভবন থেকে বেরিয়ে আসার পথ। অর্থাৎ আগুন লাগলে মানুষ যাতে বেরিয়ে আসতে পারে সেটি নিশ্চিত করতে হবে"।
এক্ষেত্রে বেরিয়ে আসার এই পথ সিঁড়ির একটি নির্দিষ্ট সাইজ আছে। এছাড়া এক ভবন থেকে আরেক ভবনের দূরত্ব।
আবার দেখতে হবে একটি ফ্লোরে আগুন লাগলে অন্য ফ্লোরগুলো থেকে যেনো সবাই সহজেই বেরিয়ে আসতে পারে।
"সিঁড়ি করার যেমন নির্দিষ্ট নিয়ম মানতে হবে, তেমনি লিফট থাকলে সেটার জন্য আলাদা ব্যবস্থা নিতে হবে।"
তিনি জানান, "এর বাইরে জানালার গ্লাসসহ এমন অনেক বিষয় আছে যেগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে অগ্নি প্রতিরোধের বিষয়গুলো বিবেচনা নিতে হবে।"
হেলালীর মতে, "এখানে বাড়ি নির্মাণের সময় আকর্ষণীয় করতে গিয়ে এমন অনেক কিছু সংযুক্ত করা হয় যেগুলো আগুন লাগলে বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে"।
তাছাড়া অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা সম্পর্কে জানা থাকা ও প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য পানির উৎস রাখাও জরুরি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
"ধরুন আপনি বাড়িতে ফায়ার এক্সটিংগুইশার রাখলেন। সেটি যদি বাচ্চাদের নাগালে থাকে। তাহলে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এজন্য অনেক সময় এটা বাসাবাড়িতে না রাখারই পরামর্শ দেয়া হয়"।
তিনি বলেন, বাড়িতে বারান্দা থাকলে দুর্ঘটনায় ক্ষতির আশঙ্কা এমনিতেই একটু কমে যায়, নকশার সময় সেসব বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা উচিত।
একক বাড়ি, ফ্ল্যাট বা অ্যাপার্টমেন্ট, মেস, বোর্ডিং হাউজ, ডরমিটরি ও হোস্টেল, হোটেল, মোটেল, গেস্ট হাউজ, রেস্টুরেন্ট ও ক্লাব অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা সম্পর্কে বেশ কিছু করণীয় বলা হয়েছে বিধিমালায়।
এর মধ্যে কিছু নিচে উল্লেখ করা হলো:
১. ভবনের উচ্চতা ও প্রধান সড়কের প্রশ্বস্থতা এবং প্লটের অভ্যন্তরীণ রাস্তা সংক্রান্ত: সব প্লট ও ভবনের প্রবেশের জন্য প্রবেশ পথ থাকতে হবে এবং আবাসিক বহুতল ভবনের সামনের প্রধান সড়ক কমপক্ষে নয় মিটার প্রশস্ত হতে হবে। একই প্লটে একাধিক ভবন থাকলে দমকল বাহিনীর গাড়ি প্রবেশের সুবিধার জন্য মূল প্রবেশ পথে গেটের উচ্চতা কমপক্ষে পাঁচ মিটার হতে হবে।
২. ওয়েট রাইজার স্থাপন: ভবনে ওয়েট রাইজার থাকতে হবে। প্রতি তলার ছয়শো বর্গমিটার ফ্লোর এরিয়ার জন্য একটি ও অতিরিক্ত ফ্লোর এরিয়ার জন্য আরও একটি রাইজার পয়েন্ট থাকতে হবে।
৩. স্বয়ংক্রিয় স্প্রিংকলার স্থাপন
৪. স্থায়ী অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থার জন্য পানি সরবরাহ সূত্র: এজন্য ন্যূনতম ৫০ হাজার গ্যালন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন আন্ডারগ্রাউন্ড রিজার্ভার থাকতে হবে। রিজার্ভার থেকে পানি যাতে নেয়া যায় সেজন্য ড্রাইভওয়ে থাকতে হবে।
৫. ফায়ার ফাইটিং পাম্প হাউজ এবং এটি অগ্নি নিরোধক সামগ্রী দিয়ে নির্মাণ করতে হবে।
৬. স্মোক ও হিট ডিটেক্টশন সিস্টেম: সব স্মোক ও হিট ডিটেক্টর ও এয়ার ডাম্পার এর অবস্থান নকশায় চিহ্নিত করতে হবে।
৭. ইমারজেন্সী লাইট: জরুরি নির্গমন সিঁড়ি ও ফ্লোর প্ল্যানে এটি থাকতে হবে। এ পথ যাতে সহজে দেখা যায়। ভবনে ৫`শ জনের জন্য দুটি, এক হাজার জন পর্যন্ত তিনটি এবং এর বেশি লোক থাকলে চারটি সিঁড়ি রাখতে হবে। এটা শুধু আপৎকালীন সময়ে ব্যবহৃত হবে।
৮. বিকল্প সিঁড়ি থাকতে হবে এবং তা বেজমেন্ট পর্যন্ত সম্প্রসারিত হবেনা।
৯. একাধিক লিফটের একটি বা চারটির বেশি লিফটের দুটি ফায়ার লিফট হিসেবে নির্মাণ ও নকশায় থাকতে হবে।
১০. রিফিউজ এরিয়া অর্থাৎ আগুন, তাপ ও ধোঁয়ামুক্ত নিরাপদ এলাকা। এটিও নকশায় থাকতে হবে।
১১. রান্নাঘরের চুলার আগুন নির্বাপণের জন্য ওয়েট কেমিক্যাল সিস্টেম থাকতে হবে।
সূত্র-বিবিসি
আরকে//