গর্ভকালীন খিঁচুনি কি জিন-ভূতের আছর?
তবিবুর রহমান
প্রকাশিত : ০৭:১৪ পিএম, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ রবিবার | আপডেট: ০৫:১০ পিএম, ২৬ মার্চ ২০১৯ মঙ্গলবার
ডা. নুসরাত আফরীন নীলা
গর্ভাবস্থায় সবচেয়ে মারাত্মক ও ঝুঁকিপূর্ণ স্বাস্থ্য সমস্যার নাম অ্যাকলামশিয়া বা খিঁচুনি। এ সমস্যার শুরুতে রোগীর শরীরে পানি আসে, পা ফুলে যায়, বমি হয়, প্রস্রাবে অ্যালবুমিন বেশি বের হয়, রক্তচাপ বেড়ে যায় এবং তীব্র পর্যায়ে খিঁচুনি শুরু হয়। এসব লক্ষণ ও উপসর্গের সঙ্গে আরো কিছু লক্ষণ উপসর্গ মিলে গর্ভবতীর অবস্থা তখন আশঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌঁছে যায়। এমনকি মৃত্যুর মতো ঘটনাও ঘটতে পারে।
তবে, এটি মোটেই জিন-ভূতের আছর নয়। একটু সচেতন হলেই এমন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় অবস্ এন্ড গাইনী বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. নুসরাত আফরীন নীলা।
সম্প্রতি একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি একথা বলেন। সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন একুশে টিভি অনলাইন প্রতিবেদক তবিবুর রহমান।
একুশে টিভি অনলাইন: অ্যাকলামশিয়া বা খিঁচুনি কী?
ডা. নুসরাত আফরীন নীলা: অ্যাকলামশিয়াকে গ্রাম বাংলায় সাধারণত খিঁচুনি বলা হয়। এটা এমন এক পরিস্থিতি যা গর্ভবতী মহিলার উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার কারণে এক বা একাধিকবার কনভালশন হয়ে থাকে, ফলে সন্তান বা মায়ের কোমায় চলে যাওয়া বা মৃত্যুঝুঁকি সৃষ্টি হয়।
একুশে টিভি অনলাইন: কত মাত্রায় উচ্চ রক্তচাপ হলে খিঁচুনি হতে পারে?
ডা. নুসরাত আফরীন নীলা: এক্ষেত্রে রক্তচাপ সংকোচনশীল (sysstolic) অবস্থায় ১৪০ মি.মি এর বেশি এবং প্রসারণ (diastolic) অবস্থায় ৯০ মি.মি ও তার চেয়ে বেশি হবে। এবং অন্তত চার ঘন্টা ব্যবধানে দু’বার মাপতে হবে।
একুশে টিভি অনলাইন: কি ভাবে নির্ণয় করা যাবে?
ডা. নুসরাত আফরীন নীলা: যদি কোন মহিলার গর্ভবতী অবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টি হয় বা গর্ভবস্থার পূর্ব থেকেই উচ্চ রক্তচাপ থাকে এবং প্রস্রাবের সাথে আমিষ/প্রটিন বের হয়ে যায়। এবং ঠিকমত চিকিৎসা নেওয়া না হয় এটাকে প্রি-একলাম্পসিয়া (Pre-eclampsia) বলা হয়। আর Pre-eclampsia আরও খারাপের দিকে যেয়ে convulsion সৃষ্টি হওয়াকে eclamsia বা খিঁচুনি বলা হয়।
একুশে টিভি অনলাইন: এ রোগের লক্ষণ কী? কখন রোগীরা ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করবে?
ডা. নুসরাত আফরীন নীলা: গর্ভবতী অবস্থায় ওজন যদি প্রতি মাসে ২ পাউন্ডের বেশি হয়। এছাড়া মাথা ব্যথা, পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব হওয়া, মাঝে মাঝে বমি হওয়া, চোখে ঝাপসা দেখা, চোখে ঝিকিমিকি দেখা, আলো সহ্য করতে না পারা, কিছু সময়ের জন্য চোখে না দেখা, শ্বাসকষ্ট, অস্থিরতা, প্রস্রাব কমে যাওয়া- উপরোক্ত লক্ষণগুলো দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। চিকিৎসক পরিবেশ বুঝে পরীক্ষা নীরিক্ষা করে পরামর্শ প্রদান করবেন।
একুশে টিভি অনলাইন: কিভাবে খিঁচুনি রোগ প্রতিরোধ করা যাবে?
ডা.নুসরাত আফরীন নীলা: প্রতিদিন রান্না করা খাবারে অল্প পরিমাণ করে লবণ থাকতে হবে। প্রতিদিন ৬-৮ গ্লাস করে পানি পান করতে হবে, তৈল জাতীয় খাবার কম খেতে হবে। দিনে ২ ঘন্টা এবং রাতে ৮ ঘন্টা করে ঘুমাতে হবে। শারীরিক ব্যায়াম করতে হবে, দুপা বারে বারে উঠিয়ে বসতে হবে। অ্যালকোহল, কফি খাওয়া যাবে না। আমিষ জাতীয় খাবার বাড়াতে হবে। খাবারে সবজির পরিমাণ বেশি রাখতে হবে।
একুশে টিভি অনলাইন: সাধারণত এই রোগে কারা বেশি আক্রান্ত হন?
ডা. নুসরাত আফরীন নীলা: একাধিক সন্তান এক গর্ভবস্থায় থাকা, গর্ভবস্থার পূর্ব থেকেই উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হওয়া, ডায়াবেটিস-কিডনি সমস্যা, পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের যেমন- মা খালা ফুফুদের এসব সমস্যা থাকলে। এছাড়া মায়ের বয়স ১৯ বছরেরর নীচে অথবা ৩০ বছরেরর উপরে হলে। স্থুলতা বিএম আই ৩৩ এর উপরে হলে এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
এসি