ঢাকা, শুক্রবার   ১৫ নভেম্বর ২০২৪,   কার্তিক ৩০ ১৪৩১

আসছে ভালো ঋণগ্রহীতাদের জন্য প্রণোদনা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:১০ পিএম, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ সোমবার

সরকার ভালো ঋণগ্রহীতাদের প্রণোদনা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে পরামর্শ নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। বাংলাদেশ ব্যাংক এ ধরনের গ্রাহকের জন্য একগুচ্ছ আর্থিক ও নৈতিক প্রণোদনা দেওয়ার সুপারিশ করেছে। অনেক ব্যবসায়ী অভিযোগ করে থাকেন, ব্যাংকগুলো সহজ শর্তে ঋণ দেন না। কিন্তু সরকার ভালো ঋণগ্রহীতাদের জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থা করছেন।

উদ্যোক্তারা বলছেন, ঋণের উচ্চ সুদ বিনিয়োগে অন্যতম বাধা। ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ঋণের সুদহার কমানোর বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীও ঋণের সুদহার কমিয়ে আনার আহ্বান জানান। এরপর ব্যাংকগুলো ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ করার ঘোষণা দেয়। কিন্তু সব ব্যাংক তা কার্যকর করেনি। ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আমানতের উচ্চ সুদহার কম সুদে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা। এ ছাড়া ৯ শতাংশ সুদহারে ঋণ বিতরণের সাধারণ ঘোষণা সব গ্রাহকের ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করাও সম্ভব নয়।

ভালো ঋণগ্রহীতাদের জন্য ব্যাংক সুদহারসহ বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে থাকে। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ভালো ঋণগ্রহীতাদের আরও কী ধরনের প্রণোদনা দেওয়া যায়, সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতামত চায়। বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রবিধি ও নীতি বিভাগ সম্প্রতি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে ভালো ঋণগ্রহীতাদের জন্য একগুচ্ছ আর্থিক ও নৈতিক প্রণোদনা দেওয়ার সুপারিশ করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, যারা ভালো ঋণগ্রহীতা হিসেবে বিবেচিত হবেন তাদের আর্থিক ও নৈতিক দুই ধরনের প্রণোদনা দেওয়া যেতে পারে। আর্থিক প্রণোদনার মধ্যে নতুন ঋণের সুদহার নির্ধারণে বিশেষ সুবিধা দেওয়া যেতে পারে। বিশেষ কর সুবিধা দেওয়া যেতে পারে। আর নতুন কারখানা স্থাপন করলে সে ক্ষেত্রে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও টেলিফোন সংযোগ দেওয়ায় অগ্রাধিকার দেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া এ ধরনের গ্রাহকদের ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে বিশেষভাবে রিওয়ার্ড পয়েন্ট ও ডিসকাউন্ট সুবিধা দেওয়া যেতে পারে। আর নৈতিক প্রণোদনা হিসেবে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বিশেষ সম্মাননা, নাগরিক সুবিধায় অগ্রাধিকার, সরকারি পরিবহন ব্যবহারে বিশেষ সুবিধা, ব্যাংক কর্তৃক বিশেষ কার্ড দেওয়া, সিআইবিতে `ভালো ঋণগ্রহীতা` সুবিধা হিসেবে রিপোর্ট করা, ব্যাংক কর্তৃক চিঠি বা এসএমএস পাঠানোর সময় বিশেষ সম্বোধন ব্যবহার এবং ভালো ঋণগ্রহীতাদের নিয়ে ব্যাংকের বিশেষ ম্যাগাজিন বা বুকলেট প্রকাশ করার সুপারিশ করা হয়েছে।

সরকারের এ উদ্যোগ ইতিবাচক বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, অবশ্যই ভালো ঋণগ্রহীতাদের উৎসাহিত করা উচিৎ। সে ক্ষেত্রে ঋণগ্রহীতাদের চাহিদা বিবেচনা করতে হবে। বিশেষ করে দ্রুত ঋণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা, কারখানা সম্প্রসারণে অর্থায়ন সহজ করা, চলতি মূলধন সরবরাহ সহজ করা ও জামানতে ছাড় দেওয়া দরকার। একই সঙ্গে দরকার পরিশোধ পদ্ধতি সহজ করা। তিনি বলেন, ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের সহায়তা করতে হবে। দেখা যায়, বড় প্রতিষ্ঠানের ঋণ সহজে অনুমোদন হচ্ছে, কিন্তু ছোটদের বেলায় তা হয় না।

ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবির চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ভালো গ্রহীতাদের ব্যাংক নানা ধরনের সুবিধা এরই মধ্যে দিচ্ছে। সুদহারে ছাড়, এলসি খোলায় বিশেষ সহায়তা, জামানতে ছাড়সহ বিভিন্ন ধরনের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। হঠাৎ করে টাকা দরকার হলে টাকা দেওয়া হচ্ছে। এমনকি ব্যক্তিগত সেবাও দেওয়া হয়। এ ধরনের সুবিধা আরও বাড়ানোর জন্য খারাপ গ্রাহকদের থেকে ব্যাংকের বের হওয়ার বিষয়ে সরকারের সহযোগিতা দরকার। খেলাপি গ্রাহকদের ক্ষেত্রে সরকারের শক্তিশালী নির্দেশনা দরকার।

এর আগে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক ভালো ঋণগ্রহীতাদের সুবিধা দিতে সার্কুলারও জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলারে বলা হয়, কোনো ঋণগ্রহীতার ঋণ হিসাব ধারাবাহিকভাবে তিন বছর অশ্রেণীকৃত-স্ট্যান্ডার্ড অবস্থায় থাকলে এবং ঋণের মঞ্জুরী বা নবায়ন পত্রের শর্ত অনুযায়ী ওই ঋণ হিসাবের লেনদেন সন্তোষজনক হলে সংশ্নিষ্ট গ্রাহক ভালো ঋণগ্রহীতা হিসেবে বিবেচিত হবেন।

এসএইচ/