ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

জীবন সাহিত্যের ছোট গল্পের বই ‘যে তুমি মানুষ খোঁজো’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৮:২৮ পিএম, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ বুধবার | আপডেট: ০৮:৩৫ পিএম, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ বুধবার

যে তুমি মানুষ খোঁজো সাহিত্যের ফর্মূলায় ছোট গল্প নয়, ভিন্নভাবে বললে সাহিত্যের বিষয়বস্তু যদি জীবনের অংশ হয় তবে এই বইয়ের গল্পগুলো জীবন সাহিত্যেরই ছোট ছোট গল্প। যেখানে আছে শব্দে গাঁথা জীবনবোধ,অন্তর্ভেদী অনুভব। আছে প্রেমে বিশ্বাস রাখার আকুলতা, পারিবারিক হৃদ্যতার নিবিড়তা। আছে চিরদিনের চেনা মানুষকে হঠাৎ করে আবিষ্কারের তীব্রতা। আছে অচেনা মানুষকে চেনা আলোয় দেখতে চাওয়ার আকুতি।

লেখক বই প্রকাশে চূড়ান্ত সংযত, পরিশীলিত। এই বইয়ের জন্য তিনি ততোটুকু সময় নিয়েছেন যতোটুকু সময় তিনি জীবনের বোধে সচেতনভাবে অবগাহন করেছেন। এতে পাঠকের লাভ হলো আট বছর ধরে বইতে থাকা যে বারোটা গল্প লেখক সময়ের দামে লিখেছেন পাঠক সেই সুখপাঠ্য একসাথে নিতে পারবেন কোন এক বিকেলের উপভোগ্য চায়ের চুমুকে। আশা করি, পাঠক বইটি পড়ে বুক পকেটে সুখ সঞ্চয়ের ধারনাটি পাবেন। পাবেন পরিচিত মানুষের ভেতরের মানুষের খোঁজ...বলছিলাম জাহান রিমার প্রথম গল্পের বই ‘যে তুমি মানুষ খোঁজো’র কথা। সমগ্র প্রকাশন থেকে প্রকাশ হওয়া গল্পের বইটির দাম রাখা হয়েছে ১৫০ টাকা। প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী মেহেদী হাসান।

বইটিতে ১২টি গল্প রয়েছে। এরমধ্যে কফি-কাপে পুড়ে যায় ঠোঁট, জিয়ন কাঠি, জীবনগাঙের ঢেউ, তোমার বাড়ি কইগো নারী?, প্রিয় বুয়া, এই চিঠি আপনাকে লিখছি, প্রেম মানে পাপ নয়, বিষয় যখন অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ, ভালোবাসায় হেরে যেতে ভালোবাসি, পৃথিবীর সব থেকে প্রাচীন ভোর, কাঁটা সরালেই ফুলের সুবাস, মানবতার আপ্যায়ন, ভালোবাসার অত্যাচার, পুত্রবধূর আয়নায় শাশুড়ি, আমাদের মা, অজ্ঞান পার্টির সদস্য! ও মরুভুমির মরিয়ম যেভাবে চম্পা ফুল হলো।

জাহান রিমা কবি ও কথাশিল্পী। পেশায় ডেন্টাল হাইজেনিস্ট। জন্ম ২১ অক্টোবর ১৯৯০। চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলায়। জীবন সমুদ্রে প্রেম শুধু সাহিত্যের জন্য জাগলো কেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমার বাবা তাঁর ফুলশয্যার রাতে মাকে চিঠি দিয়ে বলেছিলেন; এই তোমার অলঙ্কার! বোধ করি সেই পত্র অনুভব থেকে আজকের এইদিন। পারিবারিক শিল্প সাহিত্যের আবহে আমার কাগজের দিঘীতে শব্দের স্নান।

পেশা এবং নেশার বৈপরীত্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মধ্যরাতে হাসপাতালের করিডরে রোগীর যে স্বজনটি অস্থিরতায় হাঁটে তারও একটা গল্প আছে। একজন লেখক দেখতে পান সে গল্পটা। বরং লিখতে পারা যায় সেই গল্পটা আরো ধারালো করে, কারণ সেই লেখাতে শুধু সাহিত্য নয় বিজ্ঞানও আছে। আর বিজ্ঞানে মন, মানুষ, মনস্তত্ব কী না আছে এই হলো জাহান রিমা। বাংলাদেশের জনপ্রিয় সব পত্রিকায় ব্যতিক্রম ও নতুনধারার গল্প লিখে প্রশংসিত হয়েছেন তিনি। ২০১৪ বইমেলাতে প্রকাশিত হয় তার প্রথম কবিতার সংকলন ‘প্রণয়কাব্য’। ২০১২ সালে রবি আয়োজিত শ্রেষ্ঠ স্বরচিত কবিতা প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়ে প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি পেয়েছেন।

বিচার-বিবেচনার বোধ হবার পর থেকেই লিখছেন তিনি বাংলাদেশের জনপ্রিয় সব প্রিন্ট মাধ্যমে। পাঠক লেখক তাঁকে জেনে নিয়েছে সেই মাধ্যমেই। ব্যতিক্রম ও নব্যধারার গল্প লিখে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছেন তিনি। বাংলাদেশের জননন্দিত বাচিকশিল্পীরা আবৃত্তি করেন তার লেখা কবিতা।

এছাড়াও সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনার সংশ্লেষণ তো আছে। স্ব স্ব স্থানে সুপরিচিত দুটি সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক তিনি। সচেতনভাবে তিনি গদ্য লিখলেও অবচেতন মনে যে তিনি পদ্যের মালা গাঁথেন `জাত কবি` এই নিয়ে তাঁর একটি মিষ্টি দুর্নাম (!) আছে।

সাহিত্যের বিবিধ সমুদ্রে এই যে তাঁর এইসব শব্দের ঢেউ সমগ্র প্রকাশন তা শুনতে পায়, দেখতে পায়। তাইতো সেই ঢেউদের মলাটে বাঁধতে প্রথম বই `যে তুমি মানুষ খোঁজো` প্রকাশের উদ্যোগ। দ্বীপে জন্মগ্রহণ করা জাহান রিমা বিশ্বব্যাপি কতটা মননশীল-সৃজনশীল তা সাক্ষ্য দিবে আপনার কাছে তাঁর রচনাশৈলী।

কেআই/