যেভাবে আটক হয়েছিলেন ভারতীয় পাইলট
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৮:৫৪ পিএম, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ বৃহস্পতিবার
ভারতের এয়ারফোর্স পাইলট নাটকীয় ঘটনার মধ্য দিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে আটক হন বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় জানা যাচ্ছে। হোরিয়ান গ্রামের লোকজন পাইলট আভিনন্দন ভার্থামানকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়ে মেরেছিল, সে সময় তিনি কয়েক রাউন্ড গুলি করেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়।
ভারত আর পাকিস্তানি বিমানের আকাশ যুদ্ধের সময় পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ভারতীয় ওই জেট বিমানটিকে গুলি করে নামানো হয়। পাকিস্তান এর মধ্যেই জানিয়েছে যে, তারা শুক্রবার ওই পাইলটকে ছেড়ে দেবে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান দেশটির পার্লামেন্টে বক্তৃতায় এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। তিনি বলেছেন, পাকিস্তান উত্তেজনার অবসান ঘটাতে চায়।
পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের হোরিয়ান গ্রামের প্রধান মোহাম্মদ রাজ্জাক চৌধুরী সেই আটকের কথা বর্ণনা করে বলেন, আমার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল পাইলটকে জীবিত আটক করা। তার প্যারাসুটে আমি ভারতীয় পতাকা দেখতে পেয়েছিলাম, তাই আমি জানতাম তিনি একজন ভারতীয়।
৫৮ বছর বয়সী এই ব্যক্তি বলছেন, তিনি দেখতে পেয়েছিলেন যে, বুধবার সকালে মিগ-২১ ফাইটার জেটে আঘাত লেগেছে এবং সেটি মাটিতে পড়ছে। অন্যসব গ্রামবাসীর মতো তিনিও সেই স্থানের দিকে দ্রুত রওনা হন।
ইমরান খানের পিটিআই দলের এই সদস্য বলেন, আমি ভয় পাচ্ছিলাম, অন্যরা হয়তো তার ক্ষতি করবে অথবা তিনি অন্যদের ক্ষতি করে ফেলতে পারেন।
ঘটনাস্থলে পৌঁছে তিনি শুনতে পান, পাইলট কয়েকজন গ্রামবাসীকে জিজ্ঞেস করছেন, তিনি কি ভারতে নেমেছেন কিনা? তখন উপস্থিতদের মধ্যে একটি ছেলে জবাব দেয়, হ্যা।
তিনি তখন প্যারাসুট থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেন এবং দেশপ্রেমমূলক শ্লোগান দেন। তখন তার আশেপাশে ছড়িয়ে থাকা মানুষজন পাল্টা শ্লোগান দেয়, পাকিস্তান দীর্ঘজীবী হোক। তখন তিনি নিজের অস্ত্রটি বের করে আনেন এবং তাদের ভয় দেখাতে শূন্যে কয়েক রাউন্ড গুলি করেন।
তিনি বলেন, এর ফলে ওই পাইলটের আশেপাশে থাকা ব্যক্তিরা উগ্র হয়ে ওঠেন। তারা তার দিকে পাথর ছুড়ে মারতে শুরু করেন। তখন তিনি শূন্যে গুলি ছুড়তে ছুড়তে দৌঁড়াতে শুরু করেন।
ছেলেগুলো তাকে ধাওয়া করতে থাকে, কিন্তু তিনি একটি নালায় পড়ে যান। তখন আমার একজন ভাগ্নে, যার কাছেও অস্ত্র ছিল, সে তার পায়ে গুলি করে। এরপর আমার ভাগ্নে তাকে বলে, সে যেন তার পিস্তল ফেলে দেয়। তখন তিনি সেটাই করেন। তখন অন্য আরেকজন তাকে ধরে ফেলে এবং চেপে ধরে রাখে, যাতে তার কাছে আর কোন অস্ত্র থাকলেও সেটা যেন তিনি ব্যবহার করতে না পারেন।
তিনি বলেন, পাইলট তখন পকেট থেকে কিছু কাগজ বের করে তার মুখে ঢোকাতে শুরু করেন, যাতে সেগুলো নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু গ্রামবাসীরা তার কাছ থেকে কিছু কাগজপত্র ছিনিয়ে নিতে সক্ষম হয়, যেগুলো তারা পরবর্তীতে সেনাবাহিনীকে দিয়েছে।
আমাদের ছেলেরা ক্ষুব্ধ হয়ে ছিল। তারা তার কাছে গিয়ে ঘুষি আর চড় মারার চেষ্টা করছিল, যদিও তাদের মধ্যে কেউ কেউ আবার এসব ছেলেকে ঠেকিয়ে রাখছিল। আমিও তাদের বললাম যেন, তার কোন ক্ষতি না করে এবং সেনাবাহিনী না আসা পর্যন্ত তাকে একা থাকতে দেয়।
বুধবার সকালে কাশ্মীরের আকাশে বিমান যুদ্ধের পর পাকিস্তান একজন পাইলটকে আটকের দাবি করলেও, ভারত বলেছিল যে, তাদের সব পাইলট ফিরে এসেছে। তবে এরপরে পাকিস্তানের তথ্য মন্ত্রণালয় পাইলটের একটি চোখ বাঁধা ভিডিও প্রকাশ করে, যেখানে তার মুখ থেকে রক্ত ঝরছে। তবে কিছুক্ষণ পরে ভিডিওটি সরিয়ে ফেলা হয়।
পরের ভিডিওতে দেখা যায়, উইং কমান্ডার আভিনন্দন চা খাচ্ছেন। সেখানে তাকে পরিষ্কার পরিছন্ন দেখা যায় এবং তিনি জানান, পাকিস্তানি কর্মকর্তারা তার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করছেন। তার এই আটক হওয়াকে ভারতের জন্য বড় ধরণের বিপত্তি হিসাবে দেখা হয়েছে।
ভারত ও পাকিস্তান উভয়েই বরাবর বলে আসছে যে, তারা কেউ যুদ্ধ চায় না।
সূত্র-বিবিসি
আরকে//