ডায়াবেটিস রোধে খেতে পারেন পনির
ইসরাত জাহান
প্রকাশিত : ০৫:৩১ পিএম, ৪ মার্চ ২০১৯ সোমবার
পনির একটি চর্বিজাতীয় খাবার। তাই এটি ওজন বাড়িয়ে দেবে, এমন একটি ধারণা সবার মাঝে কাজ করে। তাই বিশেষ দিবস বা বিশেষ অনুষ্ঠান ছাড়া তাই পনিরের ব্যবহার খুব বেশি চোখে পড়ে না। অথচ নিয়মিত খাদ্য তালিকায় পনির রাখার পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকেরা। কারণ এই খাদ্য উপাদানে রয়েছে, ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম ও শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ। সুতরাং আর অপেক্ষা না করে এখনই খাদ্য তালিকায় পনির অন্তর্ভুক্ত করুন।
পনির তৈরির মূল উপাদান হলো দুধ। গরু, মহিষ, ছাগল বা ভেড়ার দুধ দিয়ে এটি তৈরি করা হয়। গবেষকেরা জানিয়েছেন, বিভিন্ন ধরনের পনিরের মধ্যে হলুদ রঙের পনির বেশি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। এতে উচ্চমানের প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম রয়েছে, যা স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গবেষণায় দেখা গেছে, পনিরে লাইনোলিক এসিড ও স্পাইনগোলিপিডস নামে এক ধরনের উপাদান রয়েছে যা মরণব্যাধি ক্যান্সার প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর। পাশাপাশি এর ভিটামিন বি শরীরের রোগ প্রতিরোধ মতা বাড়ায়। পনিরে উচ্চমানের ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘বি’ আমাদের হাড়কে শক্তিশালী করে। এ ছাড়া হলুদ পনির শরীরের রক্তের চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সহায়ক ভূমিকা পালন । মাইগ্রেনজনিত মাথা ব্যথা কমাতে পনির বেশ কার্যকরী। এতে থাকা ক্যালসিময়ামও মাইগ্রেনের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
আমেরিকান জার্নাল অফ নিউট্রিশনের এক গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে যে যারা দিনে ২ পিস করে পনির খায় অর্থাৎ ৫০ গ্রাম তাদের ২ টাইপ ডায়বেটিস হওয়ার আশঙ্কা অনেক অংশে কমে যায়। ইন্সুলিনের উৎপাদন ও নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে পনির ফলে ডায়বেটিস হলেও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
পনির কোলেস্টরেল কমাতে সাহায্য করে। অনেকই ভাবেন পনির চর্বি জাতীয় ফলে পনির খেলে কোলেস্টরেল বেড়ে যায়। এই ধারনা একদম সঠিক না। পনিরে প্রোবাইওটিক ব্যাকটেরিয়া আছে যা দেহে কোলেস্টরেল বাড়তে দেয় না। তবে সব সময় খেয়াল রাখতে হবে পরিমান বা প্রয়োজন অনুযায়ী খাওয়া উচিৎ পনির।
পনিরে হাই কোয়ালিটির প্রোটিন থাকে যা বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনাকে আটকে দেয়। লিভার ক্যান্সার, ব্রেস্ট ক্যান্সার ইত্যাদি হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। লাইনোলিক অ্যাসিড ও স্পাইনগোলিপিডস নামে দুই উপাদানে ভরা পনির। যা ক্যান্সার প্রতিরোধক। পনির খান আর ক্যান্সারের মত মারণরোগকে নিজের শরীর থেকে দূরে রাখুন।
পনিরে থাকা উচ্চমানের প্রোটিন গর্ভাবস্থায় থাকা মহিলাদের জন্য খুবই উপকারী। এই সময় মহিলাদের নানা সমস্যা দেখা দেয়। দুর্বলতা, খাবারে অরুচি, রক্তল্পতা, ও নানা সমস্যা। এই সময় পনির খেলে পনিরে থাকা প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন শরীরকে পুষ্টি প্রদান করে। ও বাচ্চার জন্য ভালো প্রমাণিত। মায়ের ওমে থাকা শিশু স্বাস্থ্যবান হয়। প্রসবের পর পনির অবশ্যই মায়েদের খাওয়া উচিত নবজাতকের পুষ্টির জন্য। জন্মের পর প্রথম ৬ মাস শিশু মায়ের বুকের দুধ খায়। ফলে মায়ের শরীরের পুষ্টি শিশুর শরীর দুধের মাধ্যমে যায়। পনিরে থাকা প্রোটিন, পুষ্টি, ক্যালসিয়াম শিশুর শরীরে প্রবেশ করে।
পনিরে সোডিয়াম থাকে। যা মানব শরীরের রক্তনালীর কার্যক্রমকে বাড়িয়ে দেহে পরিষ্কার রক্ত সরবরাহের পথকে প্রশস্ত করে। পনির ত্বকের জেল্লা বাড়াতে সাহায্য করে। পনিরে থাকা ফসফরাস চোখের জন্য ভালো। তবে খেয়াল রাখা উচিৎ, যাদের দুধ বা দুগ্ধ জাতীয় খাবারে এলার্জী তাদের ক্ষেত্রে পনির না খাওয়া উচিৎ।
পনির একদম টাটকা খাওয়া বেশি উপকারী। ফ্রিজে রেখে পনির খাওয়া শরীরের জন্য ভালো না। খেয়াল রাখা উচিৎ পনির যদি ফ্রিজে থাকে তাহলে তা নর্মাল টেম্পারেচারে এনে তারপর তা খাওয়া উচিৎ।
তাই শিশু থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্ক পর্যন্ত সবাই প্রতিদিনের খাবারে কিছুটা হলেও পনির রাখতে পারেন।
লেখক: ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশিয়ানিস্ট, বিআরবি হাসপাতাল, পান্থপথ, ঢাকা।
আআ//এসএইচ/