ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

রোহিঙ্গা ইস্যু

‘সেফ জোন’ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব বাস্তবসম্মত

ড. দেলোয়ার হোসেন

প্রকাশিত : ০৮:৫৪ এএম, ৫ মার্চ ২০১৯ মঙ্গলবার | আপডেট: ১১:৩৩ এএম, ৫ মার্চ ২০১৯ মঙ্গলবার

রোহিঙ্গা সংকট ইস্যুতে রাশিয়া ও চীনের ভূমিকা শুরু থেকে যা ছিল, এখনও তা-ই আছে। অতএব, যতবারই জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের মাধ্যমে সংকট সমাধানে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ-সংক্রান্ত প্রস্তাব আসবে, ততবারই তা ভেস্তে যাবে। জাতিসংঘে যুক্তরাজ্যের সর্বশেষ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা বয়কট করে চীন ও রাশিয়া মিয়ানমারের সরকারের প্রতি তাদের দুর্বলতা আবারও প্রমাণ করেছে। এ কারণেই আমার মনে হয়, বর্তমান আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বাস্তবতায় রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জাতিসংঘ নিরাপদ পরিষদ সঠিক জায়গা নয়।

বরং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সম্প্রতি ভারত সফরে গিয়ে ভারত, চীন, রাশিয়া ও আসিয়ান দেশগুলোর সমন্বয়ে মিয়ানমারের ভেতরে রোহিঙ্গাদের জন্য `সেফ জোন` বা `নিরাপদ এলাকা` প্রতিষ্ঠার যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তা অনেক বেশি বাস্তবসম্মত। এ প্রস্তাব নিয়ে এগিয়ে গেলে সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কারণ ভারত, চীন, রাশিয়ার সঙ্গে মিয়ানমারের সম্পর্ক বেশ ভালো। আর আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে মিয়ানমারের নিবিড় বাণিজ্যিক ও আঞ্চলিক স্বার্থসংশ্নিষ্ট সম্পর্ক আছে। ফলে ভারত, চীন, রাশিয়াসহ আসিয়ান দেশগুলো কোনো উদ্যোগ নিলে তা মিয়ানমারের পক্ষে এড়ানোর সুযোগ কম।

আমি ভালোভাবেই জানি, রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বহুমাত্রায় কূটনৈতিক তৎপরতার পাশাপাশি চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে অব্যাহতভাবে কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারতে গিয়ে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সরাসরিই ভারতকে পাশে চান, অধিকতর সহায়তা চান এ কথাগুলো বলেছেন। এটাও কিন্তু চীন ও রাশিয়ার কাছে একটি বার্তা পৌঁছে দেয়। রোহিঙ্গা সংকটের দ্রুত ও স্থায়ী সমাধানে বাংলাদেশের গভীর উদ্বেগের বিষয়টি নিশ্চয় সবাই বুঝতে পারছে। অতএব, বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতা খুব ভালোভাবেই চলছে; সরকার এ সংকট সমাধানে সব ধরনের কূটনৈতিক প্রচেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে, সন্দেহ নেই।

এখন দেখতে হবে, এই সেফ জোনের প্রস্তাবে চীন-রাশিয়া কতটা সমর্থন দেবে। কারণ, মিয়ানমার চট করেই সেফ জোন প্রতিষ্ঠা করে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে, এটা ভাবার অবকাশ নেই। এ ক্ষেত্রেও রাশিয়া ও চীনের দৃঢ় ভূমিকার প্রয়োজন হবে। তাদের সেই ইতিবাচক ভূমিকা নিশ্চিত করতেই এখন জোরালো কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো প্রয়োজন। ভারত আমাদের ঘনিষ্ঠতম বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী দেশ। বাংলাদেশের পাশে ভারত সব সময় ইতিবাচক অবস্থান নিয়েই ছিল। চীন ও রাশিয়ার ভূমিকা ইতিবাচক থাকলে এ ক্ষেত্রে ভারতের সমর্থন পেতে সমস্যা হবে না। অতএব, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের উদ্যোগ যা-ই থাকুক, এর বাইরে আঞ্চলিক উদ্যোগের প্রতি জোর দিতে হবে বেশি। রোহিঙ্গা সংকট এখন আন্তর্জাতিক সংকট হিসেবে পুরো বিশ্বের সামনেই বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে পশ্চিমা বিশ্বসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সেফ জোন প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে থাকবে না, এটাও জোর দিয়ে বলা যায়।

লেখক: অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

টিআর/