জর্ডানের পোষাকশিল্পে বাড়ছে বাঙালি কর্মী
অখিল পোদ্দার, জর্ডান থেকে ফিরে
প্রকাশিত : ১২:২৬ এএম, ৭ মার্চ ২০১৯ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ১০:২৩ পিএম, ৮ মার্চ ২০১৯ শুক্রবার
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ জর্ডানের পোষাকশিল্প এখন বাঙালি নারীদের দখলে। দিন দিন সেখানে যাবার আগ্রহ বাড়ছে বাংলাদেশিদের। আশাতীত বেতন, উন্নতমানের বাসস্থান, মানসম্পন্ন খাবার আর স্বাস্থ্যসেবার কারণে জর্ডানে বসবাসরত নারীকর্মীরাও বেজায় খুশি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেখানকার পোষাকশিল্পে প্রচুর কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আর এই সুযোগটি অত্যন্ত যুতসইভাবে কাজে লাগিয়েছে বাংলাদেশিরা। ধারণা করা হচ্ছে, এ বছরের মাঝামাঝিতে জর্ডানে নারীশ্রমিকের সংখ্যা দাঁড়াবে ৩০ হাজারের অধিক। যা মোট প্রবাসী শ্রমিকের ৪৯ শতাংশ। আর এভাবে চলতে থাকলে আসন্ন দশকে বাংলাদেশি শ্রমিকের সংখ্যা দাঁড়াবে ৬০ থেকে ৬২ শতাংশে। আমাদের জন্য রীতিমতো গর্বেরও বিষয় ব্যাপারটি।
বেশ ক’বছর ধরেই দক্ষ শ্রমিক যাচাই-বাছাইয়ের পুরো প্রক্রিয়া দেখভাল করছে জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান বোয়েসেল। এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মরণ কুমার চক্রবর্তী একুশে টেলিভিশনকে বলেন, বোয়েসেল সরকারি ব্যবস্থাপনায় বিদেশে কর্মী পাঠাতে সাহায়তা করে। এখানে নারী কর্মীদের শুধু পাসপোর্ট করে এলেই হয়। এরপর আর কোনো খরচ নেই। মেয়েরা বিনা খরচে জর্ডানে চাকরি পাচ্ছে। প্রতি শুক্রবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কর্মী বাছাইয়ের এই প্রক্রিয়াটি চলমান। এই মুহূর্তে সেখানকার বড় বাজার হলো রাজধানী আম্মান থেকে ৭১ কিলোমিটার দূরে আল হাসান ইপিজেড এলাকার প্রসিদ্ধ পোষাক শিল্প ক্লাসিক ফ্যাশনস এন্ড এ্যাপারেলস। সেখানে প্রতিমাসেই হাজারের কাছাকাছি কর্মী পাঠানো হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে।
আর ক্লাসিক গ্রুপের চেয়ারম্যান স্যানাল কুমার বাংলাদেশের দূতাবাসের মাধ্যমে বোয়েসেলকে জানিয়েছেন, ভারতীয়, নেপালি, পাকিস্তানি, সিরিয়ান, শ্রীলংকান কিংবা জর্ডানিদের চেয়েও বাঙালি মেয়েদের কাজ অত্যন্ত সুক্ষ এবং নিপূণ। ইন্টারন্যাশনাল বাইয়াররাও বাঙালিদের কাজের মুন্সিয়ানায় মুগ্ধ। তাই ক্লাসিক হচ্ছে বাঙালি নারীকর্মীদের স্বাচ্ছন্দের প্ল্যাটফরম। এমনকি কাজ না পারলেও স্যানাল এবং তাঁর টিমের কর্তারা বাঙালিদের ক’মাসের প্রশিক্ষণে কাজের উপযুক্ত করে নিচ্ছেন। এ সময়ের মধ্যে বেতন-ভাতা কিংবা অন্যান্য সুযোগের কোন ঘাটতিও থাকে না।
প্রতি শুক্রবার ঢাকার মিরপুরের বাংলাদেশ-জার্মান টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারে পরীক্ষা দিচ্ছেন পোশাককর্মীরা। জর্ডান থেকে আসা ক্লাসিকের প্রতিনিধি শ্রীজিত কুমার ও বাংলাদেশে ক্লাসিকের অন্যতম কর্মকর্তা স্বপন জালাল মাতব্বর (ফোন: ০১৭৪২ ৬৭৪ ০৩১) একুশে টেলিভিশনকে বলেন, সপ্তাহের একদিনে যে সংখ্যক কর্মীর সাক্ষাতকার ক্লাসিক নিতে পারছে তাতে কোম্পানি পুষিয়ে উঠতে পারছে না। কারণ এই মুহূর্তে ক্লাসিক ফ্যাশনস এন্ড এ্যাপারেলসে প্রয়োজন ১০ হাজার বাঙালি কর্মী।
কথাবার্তায় বেশ জোর দিয়েই শ্রীজিত আমাদেরকে বলেন, বাঙালি নারীর জয়জয়কার জর্ডানের পোষাকশিল্পে। কিন্তু সেই সংখ্যক দক্ষ কর্মী আমরা পাঠাতে পারছি না। যে কারণে বাংলাদেশ যেমন রেমিটেন্সের দিক থেকে পিছিয়ে পড়ছে তেমনি আমাদের প্রতিষ্ঠানেরও কমবেশি ক্ষতি হচ্ছে। আর এসব শ্রমিক বাংলাদেশ থেকে জর্ডান যেতে যতো ধরণের খরচা আছে তার সবই বহন করে ক্লাসিক গ্রুপ। এমনকি, একজন কর্মী জর্ডানে যাবার পর থেকে মাসিক বেতন না পাওয়া অব্দি তার হাত খরচও বহন করে থাকে ক্লাসিক গ্রুপ। একইসঙ্গে থাকা, খাওয়া, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সবই ফ্রি।
(চলমান)