ঢাকা, রবিবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪,   পৌষ ৮ ১৪৩১

দানে কল্যাণ ও সমৃদ্ধি

মাসুদ আলম

প্রকাশিত : ০৪:৫১ পিএম, ৭ মার্চ ২০১৯ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৪:৫২ পিএম, ৭ মার্চ ২০১৯ বৃহস্পতিবার

(ফাইল ফটো)

(ফাইল ফটো)

দান সর্বোত্তম মানবীয় গুণ। পবিত্র কুরআন, তাওরাত, যাবুর, পুরান, বেদ, বাইবেল, ত্রিপিটক, গীতা, জিন্দাবেস্তাসহ সব ধর্মগ্রন্থেই দানের গুরুত্ব নানাভাবে বর্ণিত আছে। পরম প্রভু দাতাকে পছন্দ করেন। তাই যুগে যুগে মহামানবরা নিজেরা দান করেছেন, অন্যদের দানে উৎসাহিত করেছেন, চারপাশের মানুষের দানকে সংগঠিত করে সৃষ্টির সেবায় ব্যয় করেছেন।

পবিত্র কুরআনে দান সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘‘নিশ্চয়ই যারা তাদের উপার্জন থেকে রাতে বা দিনে, প্রকাশ্যে বা গোপনে, সচ্ছল বা অসচ্ছল অবস্থায় দান করে, তাদের জন্যে তাদের প্রতিপালকের কাছে পুরস্কার রয়েছে। তাদের কোন ভয় বা পেরেশানি থাকবে না’’।
নিশ্চয়ই যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় দান করে, রাগ নিয়ন্ত্রণ করে এবং মানুষকে ক্ষমা করে, আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন।
‘‘দানশীল পুরুষ ও নারী, যারা অল্লাহকে উত্তম ঋণ দান করে (শুধু অল্লাহর সন্তষ্টির লক্ষ্যে অন্যের জন্য ব্যয় করে), তাদেরকে প্রতিদান দেওয়া হবে বহুগুণ এবং তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার’’।

‘‘যারা নিজেদের ধনসম্পত্তি আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তাদের এই সৎদান এমন একটি শস্যবীজ, যাতে উৎপন্ন হয় সাতটি শিষ আর প্রতিটি শিষে থাকে শত শস্যদানা। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বহুগুণ প্রবিৃদ্ধি দান করেন’’। অর্থাৎ দাতা যা দান করেন, প্রকৃতিক নিয়মেই তা হাজার গুণে ফিরে আসে দাতার কাছে। দান সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে আরও বলা হয়েছে, ‘‘প্রকাশ্যে দান করা ভালো, গোপনে দান করা আরও বেশী ভালো।
দান প্রসঙ্গে বাইবেলে বলা হয়েছে, ‘‘যখন দান করো গোপনে দান করো। ডানহাত কী দিচ্ছে বাম হাত যেন জানতে না পারে। তোমার নীরব দান সদাপ্রভু দেখছেন। তিনি তোমাকে পুরস্কৃত করবেন’’। অতএব দানের কল্যাণ সর্ম্পকে সহজেই অনুমেয়।

প্রিয়নবী (স.) তাঁর সব ধন সম্পত্তি আর্তমানবতার সেবায় অকাতরে দান করে গেছেন। দান ৭০টি অকল্যাণের দরজা বন্ধ করে দেয়। দান উপার্জনকে শুদ্ধ করে, পাপ মোচন করে, দারিদ্র্য বিমোচন করাসহ বিপদ-আপদ, বালা-মুসিবত, রোগ-ব্যাধি, দুঃখ, কষ্ট, ভয়, পেরেশানি দূর করে। দান, দোয়া, ধ্যান, দাওয়াই, মানুষের নিরাময়কে তরান্বিত করে। দানের উদ্দেশ্য হতে হবে একমাত্র আল্লাহর সন্তুস্টি।
মানুষের উপার্জিত ধনসম্পত্তিতে গরিবের হক আছে। একজন মানুষ তার সম্পদ থেকে উক্ত হক আদায় করে সম্পদকে পরিশুদ্ধ করে স্রষ্টার কাছে লাভ করতে পারে অফুরন্ত কল্যাণ। দান করলে কখনই সম্পদ কমে না। মহান আল্লাহপাক এর বিনিময়ে বহুগুণে সম্পদ বৃদ্ধি করে দেন এবং প্রত্যাশিত ও অপ্রত্যাশিত প্রন্থায় রিজিকের ব্যবস্থা করেন।

দান একটি অতী উত্তম ও সম্মানজনক সৎকর্ম। দানকারীর হাত সর্বদা উপরে থাকে, আর যে দান গ্রহণ করে তার হাত থাকে নীচে। শেষ বিচারের দিনে দানকারীর মর্যাদা ও তেমনি আল্লাহর নিকট উঁচুতে থাকবে। দানের বিনিময়ে গ্রহীতার নিকট কিছু পাওয়ার প্রত্যাশা করলে বা দান করে খোঁটা দিলে পুরো দান-ই নষ্ট হয়ে যায়।
দান শুরু করতে হবে নিকটাত্মীয় থেকে পর্যায়ক্রমে এতিম, মিসকিন, মুসাফির, যাঞ্ঝাকারী, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, এতিমখানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতালসহ আর্তমানবতার সেবায় নিয়োজিত সব প্রতিষ্ঠানে। আল্লাহর রহমত, বরকত, কৃপা ও অনুগ্রহ পেতে হলে দান করতে হবে নিয়মিত। দাতা তিনিই যিনি নিয়মিত দান করেন। মহান স্রষ্টার কাছে দাতা হিসেবে পরিচিত হতে চাইলে দানকে প্রতিদিনের অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। প্রতিদিন সকালে দান করে দিনের কাজ শুরু করলে সারাদিন মানুষিক প্রশান্তির মধ্যে কাটে।

কাউকে দানে নিরুৎসাহিত করা গুরুতর অন্যায়। এ ধরনের কাজকে কুরআনে অবিশ্বাসীদের কাজ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। বুদ্ধবাণীতে বলা হয়েছে, ‘‘কেউ যখন কাউকে দান করতে বাধা দেয় তখন সে তিনটি অন্যায় করে। প্রথমত, সে দাতাতে একটি ভালো কাজ থেকে বিরত করে। দ্বিতীয়ত, সে গ্রহীতাকে সাহায্য থেকে বঞ্চিত করে। তৃতীয়ত, নীচতার প্রকাশ ঘটিয়ে সে নিজের সত্তাকেই অপমানিত করে’’।
নিয়মিত দান করার জন্য কোয়ান্টাম মাটির ব্যাংক হতে পারে উত্তম মাধ্যম। মাটির ব্যাংক ঘরে বা কর্মক্ষেত্রেও রাখা যেতে পারে। কোয়ান্টাম মাটির ব্যাংকের দানের সবটাই সমাজের সবচেয়ে সুবিধাবঞ্ছিত, এতিম শিশুদের আলোকিত, সদাচারি মানুষরুপে গড়ে তুলে একটি মহা মানবিক সমাজ বিনির্মাণে আর্তমানবতার কল্যাণে ব্যয় হয়।

এসএইচ/