ঢাকা, সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১

‘উচ্চ শিক্ষায় বিদেশ যেতে দরকার পূর্বপ্রস্তুতি ও স্থির পরিকল্পনা’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৮:১৩ পিএম, ৭ মার্চ ২০১৯ বৃহস্পতিবার

বিদেশে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ সিংহভাগ শিক্ষার্থীর স্বপ্ন। প্রতি বছরই তাই বাড়ছে উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশ গমনকারী শিক্ষার্থীদের হার। তবে একজন শিক্ষার্থী ইচ্ছা করলেই উচ্চ শিক্ষায় বিদেশ যেতে পারেন না। তার জন্য থাকতে হয় নির্দিষ্ট যোগ্যতা। মানতে হয় কিছু নিয়ম ও পদ্ধতি। তাই উচ্চ শিক্ষায় বিদেশ গমনেচ্ছুক শিক্ষার্থীদের মাথায় সবার প্রথমেই যে প্রশ্নটা ঘুরপাক খায় ‘কিভাবে বিদেশে পড়তে যাওয়া যেতে পারে? বিদেশে পড়াশোনায় কত সিজিপিএ প্রয়োজন হতে পারে? কিকি সুযোগ সুবিধা পাওয়া যাবে? কি কি বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে হবে? ইত্যাদি।’

উচ্চ শিক্ষায় বিদেশ গমনেচ্ছুক এসব শিক্ষার্থীর প্রশ্ন নিয়ে একুশে টেলিভিশন (ইটিভি) অনলাইন সম্প্রতি মুখোমুখী হয় সবুজ গ্লোবাল’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহিদুল আলম এর সঙ্গে। কেননা তার নির্দেশণায় ‘সবুজ গ্লোবাল’ প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষার্থীদেরকে উচ্চ শিক্ষার জন্য বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্য যাওয়ার ব্যাপারে পরামর্শ ও প্রয়োজনীয় সেবা দিয়ে আসছে। ইটিভি অনলাইন প্রতিবেদক রিজাউল করিম কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে পড়তে যেতে প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা, দীর্ঘমেয়াদি কৌশল ও পূর্বপ্রস্তুতি। দরকার সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ। ভবিষ্যতে কোথায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত রূপে দেখতে চাই, কোন ক্ষেত্রে নিজের পেশাজীবন গড়তে চাই এবং কীভাবে স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে চাই—সেগুলো স্থির করতে হবে।


একুশে টেলিভিশন অনলাইন: বিদেশে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ বাংলাদেশের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর একটা স্বপ্ন। ছাত্র-ছাত্রীদের এই স্বপ্ন পূরণে সহযোগিতা করে আসছে ‘সবুজ গ্লোবাল’। শিক্ষার মতো এমন মহৎকাজে সহযোগিতাকরী প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন?

জাহিদুল আলম: বাংলাদেশ থেকে শিক্ষার্থীরা উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে নানা ধরণের সমস্যার সম্মুখীন হয়। প্রাথমিক অবস্থায় তারা বুঝতে-ই পারেন না যে কি করা উচিত, কিকি কাজ করলে তারা বিদেশে যেতে পারবেন? বা কার কাছে গেলে তারা যাওয়ার বিষয়ে সব ধরণের তথ্য পাবেন? তাদের সেই প্রশ্ন ও কৌতুহলের সমাধান দিতে সবুজ গ্লোবাল গত ২০১০ সালের জুলাই মাস থেকে যুক্তরাজ্যে কাজ শুরু করে। বাংলাদেশে কাজ করেছে ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে। মোট ১৪৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কাজ করছে। যুক্তরাজ্যের রাসেল গ্রুপের খ্যাতিমান বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের লেখা-পড়ার সুযোগ করে দিচ্ছে সবুজ গ্লোবাল। শিক্ষার্থীকে বিমানবন্দর থেকে বাসা, এমনকি সংশ্লিষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের সঙ্গে পরিচয় করে দেওয়ার কাজটাও করছে সবুজ গ্লোবাল।


একুশে টেলিভিশন অনলাইন: একজন শিক্ষার্থীকে যুক্তরাজ্যে যাওয়ার ক্ষেত্রে কি কি করতে হবে?

জাহিদুল আলম: শিক্ষার্থীকে প্রথমে ঠিক করতে হবে কোন দেশে পড়লে লক্ষ্যপূরণ সহজ হবে। তারপর চলতে থাকবে পছন্দের বিষয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের খোঁজ। কোথায়, কোন বিষয়ে এবং কেন পড়তে চাই, সেগুলোর উত্তর মিলে গেলে আবেদন করার প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। অনলাইনে আবেদন করলে খুলতে হবে অ্যাকাউন্ট। দেখতে হবে কী কী শিক্ষাবৃত্তি পাওয়ার সুযোগ আছে সেখানে। এই পুরো ব্যাপারটি অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ ও জটিল। এর জন্য প্রয়োজন বাড়তি মনোযোগ ও সতর্কতা। এই দীর্ঘ সময়ে আবেদনকারীদের শেষ করে ফেলা দরকার প্রয়োজনীয় পরীক্ষাগুলো: টোয়েফল, আইইএলটিএস, জিআরই, জিম্যাটসহ অন্যান্য।
স্বল্প কথায়, যুক্তরাজ্য গমনেচ্ছুক একজন শিক্ষার্থীর প্রয়োজন স্নাতক পর্যন্ত ৬ দশমিক ৫০ গ্রেড পয়েন্ট থাকতে হবে। আইএলটিএস ৬ বা তার উপরে গ্রেড পয়েন্ট থাকতে হবে। ব্যাংক স্টেটমেন্টে ১৪ লাখ টাকা কমপক্ষে ২৮দিন আগে থেকে থাকতে হবে। স্নাতোক সম্পন্ন করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের রেফারেন্স লাগবে। পাসপোর্ট লাগবে।
আনুষঙ্গিক এসব কাগজপত্র জমা দেওয়ার পর সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাস থেকে তার সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে। সাক্ষাৎকারে ইংরেজি দক্ষতার উপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে একজন শিক্ষার্থী যুক্তরাজ্য যেতে পারবেন।


একুশে টেলিভিশন অনলাইন: একজন শিক্ষার্থীকে যুক্তরাজ্য যাওয়ার ব্যাপারে ‘সবুজ গ্লোবাল’ বিশেষ কোন সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে কি না?

জাহিদুল আলম: কেউ যুক্তরাজ্য যাওয়ার ব্যাপারে ‘সবুজ গ্লোবাল’ কে নিশ্চিত করলে মোট খরচ থেকে তার জন্য ২ হাজার পাউন্ড ছাড় দেওয়া হবে। এছাড়া খুব মেধাবী কাউকে পেলে সম্পূর্ণ ফ্রিতে যুক্তরাজ্যে লেখা-পড়া করার সযোগ করে দিব। এরই মধ্যে একজনকে পেয়ে গেছি। তারজন্য সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্রিতে লেখা-পড়া করার জন্য সুপারিশ করবো।
তিনি জানান, আজকে পর্যন্ত ৭৩০০ জন শিক্ষার্থী যুক্তরাজ্যে যাওয়ার ব্যাপারে সবুজ গ্লোবালের কাছে রেজিস্ট্রেশন করেছে। যার মধ্যে ৫৬০ জন্য আইইএলটিএস সম্পন্ন করা স্টুডেন্ট। বাকীরা ইংরেজি শিক্ষার বিভিন্ন পর্যায়ে আছে।


একুশে টেলিভিশন অনলাইন: যুক্তরাজ্যে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের পর একজন শিক্ষার্থীর জন্য কোন চাকুরির ব্যবস্থা আছে কি না?

জাহিদুল আলম: যদি কোন শিক্ষার্থী রাসেল গ্রুপের এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে লেখা-পড়ায় ভালো দেখাতে পারে, তার জন্য বিভিন্ন শিক্ষা বৃত্তির ব্যবস্থা আছে। কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখা-পড়ার পুরো খরচ মওকুফ করা হবে। আবার লেখা-পড়া শেষে ৬ মাস ওয়ার্কিং পাসও দেওয়া হবে। তখন যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করবে সেখানে কাজের দক্ষতা দেখাতে পারলে, সে আরো ৫ বছর যুক্তরাজ্যে থাকার সুযোগ পাবে। যা সংশ্লিষ্ঠ প্রতিষ্ঠানই করে দিবে।


একুশে টেলিভিশন অনলাইন: কোন শিক্ষার্থী আপনাদের সহযোগিতা নিতে চাইলে সে কিভাবে যোগাযোগ করবে?

জাহিদুল আলম: যুক্তরাজ্য গমনেচ্ছুরা আমাদের দক্ষীণ এশিয় আঞ্চলিক অফিস, শেলটেক বিনা কেনন, ফার্স্ট ফ্লোর, হাউজ নম্বর ৩, রোড নম্বর ১৭, ব্লক-ই, বনানী-১২১৩- এই ঠিকানায় যোগাযোগ করতে পারবেন। শুক্রবার ও শনিবার ছাড়া সপ্তাহের যেকোন দিন আমাদের অফিস খোলা থাকবে।


একুশে টেলিভিশন অনলাইন: আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দিনে দিনে বিদেশী শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। ফলে বিদেশে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রতিবছর দ্বিগুন হারে বাড়ছে। উচ্চ শিক্ষায় বিদেশ আগ্রহের কারণটা আসলে কি?

জাহিদুল আলম: বিদেশে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ একটা স্বপ্নের ব্যাপার। কারণ এটা সম্ভব হলে তার অবারিত সুযোগ-সুবিধার দ্বার উন্মোচিত হয়। যেমন-

আত্মনির্ভরশীল হওয়ার সুযোগ: পরিবারকে ছেড়ে বিদেশে বসবাসের ফলে আত্মনির্ভরশীল হয়ে গড়ে উঠার সুযোগ পাওয়া যায়। নিজের কাজগুলো যেমন- নিজের রুম পরিষ্কার রাখা, হিসাব করে চলা, যে কোন বিপদে পড়লে তা থেকে নিজে নিজে উদ্ধার পাওয়ার চেষ্টা করা ইত্যাদির মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীলতা বৃদ্ধি পায়।

বৈচিত্র্যপূর্ণ নেটওয়ার্ক সৃষ্টি: বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের সাথে মেলামেশার ফলে তাদের মাঝে গড়ে উঠে এক বৈচিত্র্যপূর্ণ নেটওয়ার্ক। দলগতভাবে পড়ালেখা করার মাধ্যমে দলগতভাবে কাজ করার অভিজ্ঞতা হয়। পড়ালেখা শেষ করার পর তাদের সাথে যোগাযোগ গড়ে তুলে পরিচিত মানুষের একটি সমৃদ্ধ নেটওয়ার্ক, যা চাকরি জীবনের এবং জীবনের বিভিন্নক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

কাজের সুযোগ: আমাদের দেশে শিক্ষার্থীদের কাজের সুযোগ অনেকটা নেই বললেই চলে। অন্য দিকে বিদেশে পড়া লেখার পাশাপাশি নিজেকে স্বনির্ভর করে গড়ে তোলার সুযোগ রয়েছে। পার্ট টাইম চাকরি করে তারা নিজেরাই নিজেদের ব্যয়ভার বহন করতে পারে। এছাড়াও আর্থিকভাবে পরিবারকে সহযোগিতা করতে পারে। এর কারণে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই বিদেশ গমনে ইচ্ছুক।

ভালো ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ: বিদেশে শিক্ষাকালীন অবস্থায় নতুন নতুন কাজের সাথে পরিচিত হওয়ার পাশাপাশি অভিজ্ঞতাও অর্জন করা হয়। এতে করে অনেকগুলো পথের মধ্যে নিজের পছন্দের কাজকে অবলীলায় নিজের ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নেয়া যায়। বাংলাদেশে এই সুযোগ কম, কারণ ক্যারিয়ার নির্বাচনের ক্ষেত্রে এরকম উন্মুক্ত সুযোগ নেই বললেই চলে। অপরদিকে বাংলাদেশে বিদেশি ডিগ্রিধারীরা ভালো প্রতিষ্ঠানে সহজেই চাকরির সুযোগ পান এবং পূর্ব অভিজ্ঞতার সঠিক ব্যবহারের ফলে ক্যারিয়ারে দ্রুত উন্নতি করতে পারে।

ভ্রমণের সুযোগ: ভ্রমণ করতে পছন্দ করে না এমন মানুষের সংখ্যা খুব কম। বিদেশে পড়ালেখার পাশাপাশি পাওয়া যায় ওই দেশ ভ্রমণ করার সুযোগ। তাছাড়া বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষা সফরে বিভিন্ন স্থানে গমন করে। এতে করে সেসব স্থান ভ্রমণের সাথে সাথে অনেক কিছু শিখতেও পারা যায়।

দক্ষতা বৃদ্ধির সুযোগ: নতুন পরিবেশে মানিয়ে নেয়ার পাশাপাশি নানারকম কাজের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। বিভিন্ন রকম মানুষের সাথে কাজ করা, তাদের সাথে মানিয়ে চলা, তাদের মধ্যে থেকে নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষমতা, দলগতভাবে কাজ করার অভিজ্ঞতা ইত্যাদি দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

আরকে//