ঢাকা, সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১

ডাকসু নির্বাচনে একজন ব্যতিক্রমী আসিফ তালুকদার

আলী আদনান

প্রকাশিত : ০৪:০৯ পিএম, ৯ মার্চ ২০১৯ শনিবার | আপডেট: ০৪:৫৭ পিএম, ৯ মার্চ ২০১৯ শনিবার

দীর্ঘ আঠাশ বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে নয় বরং সারা দেশবাসীর চোখ এখন ডাকসু নির্বাচনের দিকে।

কারা হচ্ছেন আগামীতে ডাকসু কর্ণধার বা কারা আগামীতে দেশের ছাত্র সমাজের দাবি দাওয়া পূরণে নেতৃত্বের ভূমিকায় থাকবে তা নিয়েও জল্পনা কল্পনার শেষ নেই।

প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আলোচনার মূল বিষয় এখন ডাকসু নির্বাচন। তবে সব আলোচনায় ঘুরে ফিরে একটি নাম আসেই। সেই নামটি হলো আসিফ তালুকদার।

আসন্ন ডাকসু নির্বাচনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সমর্থিত (শোভন- রাব্বানী- সাদ্দাম পরিষদে) সম্মিলিত শিক্ষার্থী সংসদ মনোনীত প্রার্থী আসিফ তালুকদার। তিনি লড়ছেন সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে। তার ব্যালট নং - ২ (দুই)। আসিফ তালুকদার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের স্নাতকোত্তর শ্রেণির ছাত্র। তার গ্রামের বাড়ি বাগেরহাট।

ডাকসু নির্বাচনে আলোচনায় থাকা আসিফ তালুকদার কেন ব্যতিক্রম তা নিয়ে ‘ঢাকা  ইউনিভার্সিটি ক্যারিয়ার ক্লাব’- এর সংগঠক ও মার্কেটিং বিভাগের ছাত্রী লুবনা জেরীন লাবনী তার ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘আসিফ তালুকদার ভাইয়াকে ক্যাম্পাসে যে কোনও অসঙ্গতি দেখলেই নির্দ্বিধায় বলা যায়। টিএসসিতে বিশ্বকাপের সময় সব পোলাপান ভুভুজেলা বাজাচ্ছে অথচ সেখানে আমার ইউনিভার্সিটি অথরিটি কোনও স্টেপ নিচ্ছে না, অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভুভুজেলা বাজানো নিষিদ্ধ। এই শব্দে মেজাজ তো খারাপ হয়ই প্লাস যে কোনও অকারেন্স ঘটানোও পসিবল। তো তখন আসিফ তালুকদার ভাইয়া এনশিওর করলো, নেক্সট থেকে আর ভুভুজেলা বাজবে না টিএসসিতে।’

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে কারও কোনও দুর্লভ গ্রুপের রক্ত লাগবে। খবরটা কোনও রকমে আসিফ তালুকদারের কানে পৌঁছালেই হলো। নিজ দায়িত্বে রক্ত সংগ্রহ করার কাজে লেগে যান আসিফ তালুকদার। বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোনও বিভাগের যে কোনও শিক্ষার্থী কোনও রকম বিপদে পড়েছে। আসিফ তালুকদার সেটা জানলে কোনও না কোনভাবে তার পাশে দাঁড়াবেই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইটি সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আবদুল্লাহ আল ইমরান তার ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘রাজনীতি করে ছেলেটি। পাশাপাশি গানও গায়। হলের অনুষ্ঠানে গাওয়া ওর গান শুনলাম। কি সুন্দর ভরাট গলা! কাচুমাচু ভঙ্গিতে একদিন বলল, ‌‘ভাই আমার খুব শখ স্টুডিওতে কোনও মৌলিক গানে কণ্ঠ দেওয়া।’

‘রাজনীতি করা ছেলেটি কোথায় টাকা আয়ের স্বপ্ন বলবে, কোথায় আরও বড় পদ বাগানোর চিন্তায় মশগুল থাকবে, তা না, এই ছেলে গান নিয়ে মায়াবী এক স্বপ্ন বুকে ধরে আছে! 

আমার ভালো লাগল। প্রচলিত ছাত্রনেতার খোলস ছেড়ে ভিন্ন এক তরুণকে আবিস্কার করলাম।’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘ছেলেটিকে সেদিনই আমার আলাদা মনে হয়েছিল। যে মানুষ শিল্প-সাহিত্যের চর্চা করে, যার বুকের ভেতর সুরের ইন্দ্রজাল, সে আর যাই করুক, কারও অমঙ্গল চিন্তা করতে পারে না। ছেলেটির প্রতি মুগ্ধতার সেই শুরু।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নিয়মিত ফেসবুক পেজটির এডমিন আসিফ তালুকদার। ছাত্রলীগের সব ধরনের প্রকাশনার দায়িত্বেও থাকেন আসিফ তালুকদার। আলোচিত ফেসবুক গ্রুপ ‘গুজবে কান দিবেন না’- এর এডমিন তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রবিন ঘোষ জানান, কিছুদিন আগে যখন চারিদিকে গুজবের জোয়ার উঠেছিল। প্রতিদিন ছড়াচ্ছিল কোনও না কোনও গুজব। গুজবের কারণে মানুষে মানুষে বিভেদ তখন চরমে। আসিফ ভাই একদিন বললেন, ‘কিছু একটা করতে হবে ভাই। এভাবে চলতে পারে না। এরপর একটা আইডিয়া বের করলেন তিনি। তৈরি করলেন ‘গুজবে কান দেবেন না’ নামক এক ফেসবুক গ্রুপ। যা শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়, সারাদেশে তরুণদের কাছে তুলে ধরছে কোনটি সত্য আর কোনটি গুজব তার সঠিক চিত্র।’

আসিফ তালুকদার সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী। জহুরুল হক হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তবে গতানুগতিক ধারায় অন্য অনেকের মতো শুধু রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে নয়, বরং সাংস্কৃতিক কর্মী হিসেবে রয়েছে তার বহুল পরিচিতি। তার অভিনীত দুটি টিভি নাকট ইতোমধ্যে আরটিভিতে প্রচারিত হয়েছে। নাটক দুটি হলো ‘বাঁদী’ ও ‘ভালবাসার সীমান্তে’। মঞ্জুরুল আলমের পরিচালনায় ভালবাসার সীমান্তে নাটকটিতে একই শিরোনামের গানটিরও কণ্ঠশিল্পী আসিফ তালুকদার।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে বলেন, ‘শিক্ষক হিসেবে সব ছাত্র আমাদের কাছে সমান। আমরা কারও পক্ষে বলতে পারি না। তবে অসিফ তালুকদার ব্যতিক্রম। কোন অর্থে ব্যতিক্রম এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সাধারণত ছাত্রনেতা বলতে আমরা যা বুঝি আসিফ তালুকদার তেমন নন। সে সব সময় হাসিমুখে থাকে। বিনয়ী আচরণ। পরোপকারী একটা মানসিকতা তার আছে।

কথা বললাম আসিফ তালুকদারের সঙ্গে। সাংবাদিক পরিচয় পেয়েই আন্তরিকতার সঙ্গে জড়িয়ে ধরল। প্রশ্ন করলাম, বিজয়ী হলে সাংস্কৃতিক সম্পাদক হিসেবে তিনি কী উদ্যোগ নিবেন। আসিফ তালুকদারের উত্তর, কাম্পাসটি সাধারণ শিক্ষার্থীদের। তাদের দাবিদাওয়ার ভিত্তিতে তাদের উপযোগী করে ক্যাম্পাসকে নতুন করে প্রাণ দেব। তিনি বলেন, দীর্ঘ আঠাশ বছর পর ডাকসু নির্বাচন হচ্ছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের চোখে মুখে অনেক স্বপ্ন। আমরা যারা প্রার্থী আমরা সেই স্বপ্নের জিম্মাদার।

আসিফ তালুকদার বলেন, যদি আমি নির্বাচিত হই, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় সব সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে সক্রিয় করব। তাদের সঙ্গে বসে তাদের দাবি দাওয়া নিয়ে নতুন রূপরেখা তৈরি করব। সাধারণ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ক্যাম্পাসে সুন্দর গলতান্ত্রিক আবহ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখব।

হাসি মুখেই তিনি বলে উঠেন,

যে পথ মিশিছে দুয়ারে তোমার সে পথের পথিক আমি

আমি, তুমি, সে এক প্রাণ হলে স্বপ্ন কিনতে পারি...

আ আ//