আজ ডাকসু নির্বাচন
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১২:০৪ এএম, ১১ মার্চ ২০১৯ সোমবার
দীর্ঘ ২৮ বছরের প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে আজ সোমবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদের নির্বাচন। সকাল ৮টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত ভোট দেবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মোট ১৮টি আবাসিক হলের ৫১১টি বুথে ভোটগ্রহণ হবে।
দেশের দ্বিতীয় পার্লামেন্ট হিসেবে খ্যাত ডাকসু নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য ইতিমধ্যে নিরাপত্তাসহ ভোট গ্রহণের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। হলে হলে তৈরি হয়েছে পোলিং বুথ।
জানা গেছে, সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে ৩৫টি, শহীদুল্লাহ হলে ২০, ফজলুল হক মুসলিম হলে ৩৫, অমর একুশে হলে ২০, জগন্নাথ হলে ২৫, জসীম উদদীন হলে ২০, মাস্টারদা সুর্যসেন হলে ৩৫, মুহসীন হলে ৩০, রোকেয়া হলে ৫০, কবি সুফিয়া কামাল হলে ৪৫, শামসুন্নাহার হলে ৩৫, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলে ২০, কুয়েত-মৈত্রী হলে ১৯, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে ২২, স্যার এ এফ রহমান হলে ১৬, বঙ্গবন্ধু হলে ২৪, জিয়া হলে ২০ ও বিজয় একাত্তর হলে ৪০টি পোলিং বুথ তৈরির কাজ করছে প্রশাসন।
ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে একজন শিক্ষার্থী কেন্দ্রীয় সংসদে ২৫টি এবং হল সংসদে ১৩টি পদে একটি করে মোট ৩৮টি ভোট দিতে পারবেন। এ জন্য সময় পাবেন ৩ মিনিট। ভোট গ্রহণ চলবে সোমবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত।
দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের ছাত্রসংসদ নির্বাচনে চূড়ান্ত তালিকা অনুযায়ী মোট ভোটার ৪৩ হাজার ২৫৬ জন। কেন্দ্রীয় ও হল সংসদ মিলিয়ে প্রার্থীসংখ্যা ৭৩৮। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদে ২৫ পদের বিপরীতে ২২৯ জন এবং ১৮টি হল সংসদে ১৩টি করে ২৩৪ পদের বিপরীতে ৫০৯ জন প্রার্থী।
এবার ডাকসুতে ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, কোটা আন্দোলন, প্রগতিশীল ছাত্র ঐক্যসহ বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নয়টি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এ ছাড়া স্বতন্ত্রভাবেও জিএসসহ বিভিন্ন পদে প্রার্থী হয়েছেন অনেকে।
ডাকসুতে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে ২১ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ১৪, সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে ১৩, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক পদে ১১, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে ৯, কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে ৯, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক পদে ১১, সাহিত্য সম্পাদক পদে ৮, সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে ১২, ক্রীড়া সম্পাদক পদে ১১, ছাত্র পরিবহন সম্পাদক পদে ১০, সমাজসেবা সম্পাদক পদে ১৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এসব পদের প্রতিটি থেকে একজনকে বেছে নেবেন শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া ডাকসুর ১৩টি সদস্যপদে লড়ছেন ৮৬ জন প্রার্থী। একজন ভোটার সদস্যপদে ১৩ জনকে ভোট দিতে পারবেন।
আর ১৮টি হল সংসদের প্রতিটিতে ১৩টি করে পদে ১৩ জনকে প্রতিনিধি হিসেবে বেছে নেবেন স্ব স্ব হলের শিক্ষার্থীরা।
ঢাবির হলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোটার রোকেয়া হলে- ৪ হাজার ৫৩০ জন। সবচেয়ে কম অমর একুশে হলে- ১ হাজার ৩৪০ জন। এ ছাড়া বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননিছা মুজিব হলে ২ হাজার ২৪০, বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হলে ১ হাজার ৯২০ জন, বিজয় একাত্তর হলে ৩ হাজার ১৪৭, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলে ২ হাজার ৪৬, ফজলুল হক মুসলিম হলে ২ হাজার ৭০, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে ১ হাজার ৯৮২, জগন্নাথ হলে ২ হাজার ৪৩, জাতির জনক শেখ মুজিব হলে ১ হাজার ৯৭৬, জসীমউদ্দীন হলে ১ হাজার ৬২৮, সুফিয়া কামাল হলে ৩ হাজার ৭১০, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে ২ হাজার ২৫৭, , সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে ১ হাজার ৮০১, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে ২ হাজার ২৫৫, শামসুন্নাহার হলে ৩ হাজার ৭৩৭ ও স্যার এ এফ রহমান হলে ১ হাজার ৮৩১ জন ভোটার রয়েছেন।
সকাল আটটা থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত ছয় ঘণ্টায় ৪৩ হাজার ২৫৬ জনের ভোট নেওয়া সম্ভব কি না এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন শিক্ষার্থীরা।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, শিক্ষার্থীরা যাতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভোট দিতে পারেন সেজন্য হলগুলোতে পর্যাপ্ত পোলিং বুথের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে প্রশাসন আন্তরিক।
এদিকে, নির্বাচন উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে সাধারণ মানুষ ও যানবাহন প্রবেশের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
শনিবার ডিএমপির কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া সাংবাদিকদের জানান, আজ (১০ মার্চ) সন্ধ্যা ৬টা থেকে নির্বাচনের দিন সোমবার (১১ মার্চ) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অনুমোদিত ব্যক্তি ছাড়া কেউ ঢাবি এলাকায় প্রবেশ করতে পারবে না। আর যান চলাচলের ক্ষেত্রে শুধু অনুমোদিত স্টিকারযুক্ত গাড়ি ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবে।
এ সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের সাতটি পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করবে পুলিশ। স্থানগুলো হলো শাহবাগ, নীলক্ষেত, শহীদুল্লাহ হল ক্রসিং, রোমানা ক্রসিং, পলাশী, দোয়েল চত্বর ও জগন্নাথ হল ক্রসিং।
ঢাবির শিক্ষক, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের প্রবেশের জন্য আগে থেকে পাস সংগ্রহের অনুরোধ জানান ডিএমপি কমিশনার। ভেতরে কিছু অনুমোদিত রিকশা থাকবে, সেগুলোতে চড়ে চলাচল করা যাবে।
গত ১১ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে তফসিল ঘোষণা করেন ডাকসু নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. এস এম মাহফুজুর রহমান।
তফসিল অনুযায়ী ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মনোনয়নপত্র বিতরণ এবং ২৬ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র জমা নেওয়া হয়। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ছিল ২৮ ফেব্রুয়ারি। যাচাই-বাছাইয়ের পর ৩ মার্চ প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা এবং ৫ মার্চ প্রকাশ করা হয় চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা। ওই দিন থেকে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু হয়।
তিন দশক পর আদালতের নির্দেশে ডাকসু নির্বাচনের উদ্যোগ নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯০ সালে। তারপর আর নির্বাচনের মুখ দেখেনি ডাকসু।
আরকে//