ফিরবে অতীত ঐতিহ্য ও প্রাণচাঞ্চল্য
তোফায়েল আহমেদ
প্রকাশিত : ১০:৩০ এএম, ১১ মার্চ ২০১৯ সোমবার | আপডেট: ১০:৫৯ এএম, ১১ মার্চ ২০১৯ সোমবার
আমি খুবই আনন্দিত যে, দীর্ঘ ২৮ বছর পর ডাকসু নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এটি অবশ্যই একটি ভালো লক্ষণ, আশাপ্রদ বিষয়ও বটে। অনেক আলোচনা-সমালোচনার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ নির্বাচন অনুষ্ঠানের যে উদ্যোগটি নিয়েছে, এটি একটি শুভ উদ্যোগ। এর মধ্য দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ২৮ বছরের প্রতীক্ষার অবসান যেমন ঘটেছে, তেমনি প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই অতীত ঐতিহ্য ও প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসবে বলে আমার বিশ্বাস। এক সময়কার ডাকসুর নির্বাচিত ভিপি হিসেবে এতে আমি নিজেও খুব উৎফুল্ল। অন্য সবার মতো আমিও গভীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় রয়েছি একটি জমজমাট, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন দেখার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে। অত্যন্ত সুচারুভাবেই ডাকসু নির্বাচন সম্পন্ন হবে- এটাই আমার আজকের দিনের প্রত্যাশা।
ডাকসু দেশের দ্বিতীয় পার্লামেন্ট হিসেবে খ্যাত। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ডাকসুর মাধ্যমেই নতুন নেতৃত্ব গড়ে উঠেছে, যারা পরবর্তীকালে নেতৃত্ব দিয়ে দেশ ও জাতিকেও এগিয়ে নিয়ে গেছেন। মানুষের অধিকার রক্ষার সংগ্রামেও ডাকসু ও এর নেতৃত্বের ভূমিকা সব সময়ই গৌরবোজ্জ্বল। ৫২`র ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে পরবর্তী সময়ে ৬২`র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান ও ৭১-এর স্বাধীন বাংলাদেশ নির্মাণের লক্ষ্যে রক্তক্ষয়ী জাতীয় মুক্তিসংগ্রাম এবং পরবর্তীকালে স্বাধীন বাংলাদেশে স্বৈরাচার ও সামরিকতন্ত্রের বিপরীতে দাঁড়িয়ে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে সেই ঐতিহাসিক দায়িত্বটি পালন করেছে ডাকসু।
এ কারণেই ডাকসুকে বলা হয় ভবিষ্যতের জাতীয় নেতৃত্ব তৈরির সূতিকাগার। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আমি আশা করব, ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে আগামী দিনেও যোগ্য নেতৃত্ব সৃষ্টি হবে; যারা অতীত দিনের মতোই দেশ ও জাতিকে নেতৃত্ব দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
ডাকসু ও হল সংসদের নির্বাচন না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যবিমুখতাও গড়ে উঠছে। কেননা, এই ডাকসুকে কেন্দ্র করে এক সময় হলভিত্তিক সাহিত্য-সাংস্কৃতিক কার্যক্রম ছিল। শিক্ষার্থীরা এগুলোতে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে তাদের সাংস্কৃতিক মনন ও মেধার বিকাশ যেমন ঘটাতে পারত, তেমনি তাদের মধ্যে সুস্থ ও প্রতিযোগিতামূলক মনোভাবও তৈরি হতো। আজকের দিনের খ্যাতিমান অনেক সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের প্রাথমিক উন্মেষ ঘটেছিল এই ডাকসু ও হল সংসদকেন্দ্রিক সাহিত্য-সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে। কিন্তু দীর্ঘদিন ডাকসু নির্বাচন না হওয়াতে শিক্ষার্থীদের সেই মনন ও মেধার বিকাশ যেমন বাধাগ্রস্ত হয়েছে, তেমনি ছাত্র রাজনীতিতে অছাত্রদের আধিপত্যও অনেকটা বিস্তার করেছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে আমার প্রত্যাশা, শুধু এবার হয়ে থেমে থাকলেই চলবে না। এখন থেকে প্রতি বছর ও নিয়মিত ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে- এবারের ডাকসু নির্বাচনকে ঘিরে এটাও আমার আন্তরিক প্রত্যাশা।
তবে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, দেশের সব পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ এবং সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়মিত হওয়া উচিত। এভাবে যদি এগিয়ে যাওয়া যায় তাহলে আমাদের দেশের তৃণমূল পর্যায় থেকেও নতুন নতুন নেতৃত্ব এবং উপযুক্ত ও সচেতন নাগরিক সমাজ গড়ে উঠবে বলে আশা করা যায়।
লেখক: আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য এবং ডাকসুর সাবেক ভিপি (১৯৬৮-৬৯)।
টিআর/