ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

মৃত্যুর ডাক যে কোন সময় আসতে পারে

মিয়া মিজানুর রহমান কাজল

প্রকাশিত : ১১:৩৪ এএম, ১১ মার্চ ২০১৯ সোমবার | আপডেট: ০৪:০৮ পিএম, ১২ মার্চ ২০১৯ মঙ্গলবার

সুন্দর এ পৃথিবী, জীবন সংগ্রামে ব্যস্ত আমি, কত স্বপ্ন, কত ভালবাসা কত আশা ভরসা, সবই ত্যাগ করে হৃদয়ের স্পন্দন থেমে যাবে আর থেমে যাবো আমি !!

এই নিথর দেহ শুধু পড়ে রইবে দুনিয়ার বুকে। চারিদিকে এক কান দুই কান করে পৌঁছে যাবে আমার এ খবর। আপনজন ছুটে আসবে। কান্নাকাটির ঢল নামবে। নতুন নতুন পরিচিত ও অপরিচিত জন ধীরেধীরে জানবে আবার হয়ত অনেক পরিচিত জন কোনদিনও জানতে পারবেনা।

আমাকে শেষ গোসল দেওয়া হবে। আলমারি ভরা আমার যত দামী দামী পোশাক আছে তা থেকে শুধু হজ্ব থেকে আনা সেই সেলাইবিহীন সস্তা সাদা কাপড়টি পড়ানো হবে। দ্রুত দেহখানি নিয়ে যাওয়া হবে আমার গ্রামের পথে যেখানে প্রিয় মা-বাবা সহ সকল আপনজন শায়িত আছেন। গ্রামের সকল মসজিদ গুলোতে মাইকিং চলতে থাকবে।

বেশিরভাগ মানুষ সেখানে হয়ত আমাকে চিনবেনা যেহেতু গ্রামে আমার জন্ম বা বেড়ে উঠা কোনটাই না, হয়ত বাপ দাদার পরিচয়ে শতশত মানুষ ছুটে আসবে। কেউবা কবর খুদে মাটি সমান করতে ব্যস্ত থাকবে আবার কেউ থাকবে বাঁশ কেটে দুইভাগ করা নিয়ে। নিশ্চুপ আমি খাটিয়ায় পড়ে থাকবো উঠোনের মাঝে। এরই মাঝে জানাজার সময় হয়ে যাবে। দ্রুত জানাজা নামাজ শেষে আপনজন খাটিয়া কাঁধে নিয়ে ছুটবে আমাকে বাড়ীর আঙ্গিনায় থাকা কবরস্থানে মাটি দিতে।

শূণ্য মাটির ঘরে আমাকে রেখে তার উপরে পা থেকে এক এক করে একটি একটি বাঁশ দিতে দিতে মুখের কাছের শেষ বাঁশটি পর্যন্ত চলে আসবে। শেষ বারের মত তখনো আমাকে দেখা যাবে। এবার শেষ বাঁশটি উপরে দিয়ে আমাকে অন্ধকার বানিয়ে জীবনের ইতি টানা হবে। এরপরেও হয়ত বাঁশের ফাঁক দিয়ে দুনিয়ার আলো পড়বে আমার মাটির ঘরে কিন্তু কিছু সময়ের মাঝে তাও আবার মাটি দিয়ে পূর্ণ করা হবে।

আমাকে অন্ধকারে রেখে সৃষ্টিকর্তার নিকট দু-হাত তুলে সকলে প্রার্থনা করে ধীরেধীরে স্থান ত্যাগ করবে। আমি পড়ে রইব পাহাড় পরিমাণ গোনাহর বোঝা কাঁধে নিয়ে সেই ছোট্ট অন্ধকার কবরে। আমার বিচার শুরু হয়ে যাবে । কাউকে বলতে পারবোনা কে আছো আমাকে বাঁচাও !! কেউই শুনবেনা আমার আহাজারি । দুনিয়ার মোহে অনেক কিছু বুঝে আবার কোনটা না বুঝে পাপ করার সময় গুরুত্ব দেইনি এ কথা কোনদিনও কিন্তু তখন শুধু আফসোস আর আফসোস ছাড়া কোনই উপায় থাকবেনা আমার। আমি পাকড়াও হয়ে যাবো। আমি ধরা খেয়ে যাবো সেই কঠিন মূহুর্তে !!!

সেদিনের সেই কঠিন মূহুর্ত থেকে আমি বাঁচতে চাই। আমি যেন হাজার পাপের ভীড়েও নিজেকে সামলাতে পারি আর সেই চিরবিদায়ের আগে সকল পাপ থেকে তওবা করে বিধাতার ক্ষমা নিয়ে মরতে পারি সেই দোয়া চাই সকলের।

 

টিআর/