ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১

কিডনির সুস্থতায় সঠিক খাদ্যাভ্যাস!

সাজেদা কাশেম জ্যোতি

প্রকাশিত : ০১:৩৫ পিএম, ১১ মার্চ ২০১৯ সোমবার | আপডেট: ০২:০১ পিএম, ১১ মার্চ ২০১৯ সোমবার

কিডনি রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ঘন ঘন ইউরিন ইনফেকশন, অস্বাস্থ্যকর খাওয়া-দাওয়া, অনিয়ন্ত্রিত খাওয়া-দাওয়া, অতিরিক্ত ওজন ছাড়া আরো নানা কারণে কিডনি রোগ হতে দেখা যায়। পরবর্তী কালে যা কিডনি বিকলও করে দিতে পারে। তবে আগে থেকে সচেতন হলে এই সমস্যা থেকে অনেকটাই মুক্তি পাওয়া যায়।

আমরা প্রতিদিন যেসব খাবার খাই- শাকসবজি থেকে শুরু করে ফলমূলসহ সব খাবারেই রয়েছে ভেজাল ও বিষাক্ত রাসায়নিকের উপস্থিতি। ভেজালের প্রক্রিয়ায় খাদ্যে বিষাক্ত রাসায়নিক ,নিম্নমানের, ক্ষতিকর, অকেজো ও অপ্রয়োজনীয় বহির্জাত দ্রব্য সরাসরি মেশানো বা যোগ করা হয়। এগুলো সরাসরি কিডনির কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়, পাশাপাশি যকৃত, চোখ, হৃৎপিণ্ড ইত্যাদির উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। তাই বাজারের কেনা শাক সবজি ও ফলাদি কেনার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন ও কেনার পর ভাল করে ধুয়ে রান্না করা উচিত এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা উচিত।

♠কিডনি সুস্থ রাখতে করনীয়ঃ
♦পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করুনঃ

প্রতিদিন অন্তত আট গ্লাস পানি বা তরল খাবার খাওয়া উচিত। তবে অতিরিক্ত ঘাম হলে পানি খাওয়ার পরিমাণ আরো বাড়াতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খেলে কিডনিতে পাথর হয়না এবং এর স্বাভাবিক কার্যক্রম ঠিক থাকে।

♦লবণ কম খানঃ
খাবারে অতিরিক্ত লবন খাওয়া কিডনির স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। মানুষের শরীরে প্রতিদিন মাত্র এক চা চামচ লবণের চাহিদা থাকে। তাই কিডনি সুস্থ রাখতে অতিরিক্ত লবণ খাওয়া পরিহার করার অভ্যাস করুন।

♦অতিরিক্ত প্রাণীজ প্রোটিন খাওয়া থেকে বিরত থাকুনঃ

গরুর মাংস, খাসির মাংস, শুকরের মাংস ইত্যাদি খেলে কিডনির উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। খাবার তালিকায় অতিরিক্ত প্রোটিন থাকলে কিডনির উপর চাপ পড়ে এবং কিডনির দূর্বল কোষগুলোর ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই অতিরিক্ত প্রাণীজ প্রোটিন এড়িয়ে মাছ বা ডাল জাতীয় প্রোটিন রাখুন খাবার তালিকায়।

♦রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখুনঃ
রক্তচাপ ১৪০/৯০ এর উপরে থাকলে কিডনির সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই কিডনি ভালো রাখতে রক্তচাপ সবসময় ১৩০/৮০ অথবা এর কম রাখার চেষ্টা করুন। রক্তচাপ কমিয়ে রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম করা ও লবণ কম খাওয়া জরুরি। পনির, চীপস্‌, আচার, চানাচুর ইত্যাদি লবণ সমৃদ্ধ খাবার ,বিভিন্ন ফ্লেভার মেশানো খাবার, মাখন,পনির, ক্রিম, চকলেট মিল্ক, সসেজ, চিপস, আঁচার, সয়াসস ইত্যাদি যে কোন প্রোসেসড তৈরিকৃত খাবার অতিরিক্ত মাত্রায় গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন।

♦ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুনঃ
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখলে কিডনির রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই নিয়মিত রক্তের সুগারের পরিমাণ পরীক্ষা করান। সুগার বেশি থাকলে মিষ্টি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন।

♦ওষুধ খাওয়ার ক্ষেত্রে সাবধানঃ
কম বেশি প্রায় সব ওষুধই কিডনির জন্য ক্ষতিকর। বিশেষ করে ব্যথা নাশক ওষুধগুলো কিডনির জন্য একেবারেই ভালো নয়। নিয়ম না জেনে নিজে নিজে ওষুধ কিনে খেলে আপনার অজান্তেই কিডনির বড় কোনো ক্ষতি হয়ে যাবে। তাই যে কোনো ওষুধ খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিন।

♦কোমল পানীয় ত্যাগ করুনঃ
অনেকেই পানির বদলে কোমল পানীয় বা বিভিন্ন রকমের এনার্জি ড্রিঙ্কস খেয়ে থাকেন। এ ধরণের পানীয়গুলো কিডনির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই কোমল পানীয় এড়িয়ে চলুন এবং যখনই তৃষ্ণা পায় পানি খেয়ে নিন।

♦ ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ করুনঃ
ধূমপান ও মদ্যপানের কারণে ধীরে ধীরে কিডনিতে রক্ত চলাচল কমে যেতে থাকে এবং এর ফলে কিডনির কর্মক্ষমতাও হ্রাস পায়। ফলে ধূমপায়ী ও মদ্যপায়ী ব্যক্তি এক পর্যায়ে গিয়ে কিডনির রোগে আক্রান্ত হয়।

♦নিয়মিত কিডনীর পরীক্ষা করান
উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, অতিরিক্ত ওজন অথবা পরিবারের কারো কিডনি সমস্যা থাকলে কিডনি রোগ হবার ঝুঁকি বেশি থাকে। যাদের কিডনি রোগের ঝুকি আছে তাদের অবশ্যই নিয়মিত কিডনি পরীক্ষা করানো উচিত।

♠কিডনির স্বাস্থ্য পরীক্ষাঃ
নিয়মিত কিডনির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন, বিশেষত পরিবারে কারও যদি এ রোগের ইতিহাস থাকে তবে এ রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকে; তাই পরিবারের ইতিহাস জেনে এ বিষয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন ও সচেতন হোন।

♦ডায়াবেটিস রোগীদের কিডনিতে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের এ বিষয়ে আরো সচেতন হতে হবে তাহলে ডায়াবেটিস এর কারণে সৃষ্ট বিভিন্ন কিডনি বিষয়ক জটিলতা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

♦অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ কিডনির স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিস্বরূপ, এটি কিডনিকে অকেজো করার পাশাপাশি শরীরের অন্যান্য সমস্যা যেমন- হার্ট ফেইলিউর, স্ট্রোক ইত্যাদি করে থাকে। তাই নিয়মিত ও নিয়ম মাফিক রক্তচাপ পরীক্ষা জরুরী।

♦ব্যায়াম না করা, উচ্চ ক্যালরি যুক্ত খাবার গ্রহণ, অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ , অতিরিক্ত ওজন ইত্যাদি উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের জন্য ঝুঁকি হিসেবে কাজ করে যা কিডনি রোগের জন্য মারাত্মক আকার হিসেবে দেখা দেয়।

♦ধূমপান ফুসফুসের জন্য ক্ষতিকারক। এটি বিভিন্ন কিডনি রোগের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দেয়।
♦অপর্যাপ্ত পানি পান কিডনির উপর চাপ ফেলে। নিয়মিত পর্যাপ্ত পানি পানে কিডনি থাকে সুস্থ ও সবল।

পরিবারের সকল সদস্যদের পাশাপাশি মেয়েদের ও গর্ভবতী মায়েদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা চিন্তা করে বুঝে শুনে ও দেখে খাদ্যাভ্যাস ও নিমকানুন মেনে চলা এখন সময়ের চাহিদা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চলুন প্রয়োজনে একজন অভিজ্ঞ পুষ্টিবিদের পরামর্শ গ্রহণ করুণ।

 

সাজেদা কাশেম জ্যোতি
পুষ্টিবিদ, গণস্বাস্থ্য ডায়ালাইসিস সেন্টার
নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ ডায়েটেটিক্সস এন্ড নিউট্রিশন ট্রাস্ট

 

টিআর/