ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১৫ ১৪৩১

ড্রয়ের স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৭:৩৬ পিএম, ১১ মার্চ ২০১৯ সোমবার | আপডেট: ০৮:৪৮ এএম, ১২ মার্চ ২০১৯ মঙ্গলবার

প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ২১১ রানের জবাবে রস টেইলরের ডাবল ও হেনরি নিকোলসের সেঞ্চুরিতে ৬ উইকেটে ৪৩২ রানে ইনিংস ঘোষণা করে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড। ফলে প্রথম ইনিংস থেকে ২২১ রানের লিড পায় কিউইরা। তাই ২২১ রানে পিছিয়ে থেকে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে চতুর্থ দিন শেষে ৩ উইকেটে ৮০ রান করেছে বাংলাদেশ। ইনিংস হার এড়াতে ৭ উইকেট হাতে নিয়ে ম্যাচের পঞ্চম ও শেষ দিন আরও ১৪১ রান করতে হবে বাংলাদেশকে। তবে কাল যদি ম্যাচের পুরো দিনটি কাটিয়ে দিতে পারে বাংলাদেশ, তাহলে ওয়েলিংটনের টেস্টটি ড্র’তে শেষ হবে।

বৃষ্টির কারণে ম্যাচের প্রথম দু’দিন ভেস্তে যায়। তৃতীয় দিন মাঠে গড়ায় ব্যাট-বলের লড়াই। টস হেরে প্রথমে ব্যাট করে ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় ৬১ ওভারে ২১১ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। এরপর দিনের শেষভাগে ২ উইকেটে ৩৮ রান করে নিউজিল্যান্ড। ফলে ৮ উইকেট হাতে নিয়ে ১৭৩ রানে পিছিয়ে ছিলো কিউইরা। অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন ১০ ও রস টেইলর ১৯ রানে অপরাজিত ছিলেন।

চতুর্থ দিন সকাল থেকে মারমুখী মেজাজে ব্যাটিং শুরু করেন উইলিয়ামসন-টেইলর। বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান তুলছিলেন তারা। তাই দলীয় স্কোর দ্রুতই দেড়শ’ ছাড়িয়ে যায়। এরমধ্যে দু’জনই হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন। তবে ব্যক্তিগত ৭৫ রানে থেমে যান উইলিয়ামসন। বাংলাদেশের বাঁ-হাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামকে ফিরতি ক্যাচ দেন তিনি। ১১টি চার ও ১টি ছক্কায় ১০৫ বল মোকাবেলা করে নিজের ইনিংসটি দাঁড় করান কিউই দলপতি। টেইলরের সঙ্গে তৃতীয় উইকেটে ১৭২ রান যোগ করেন উইলিয়ামসন। তৃতীয় উইকেট জুটিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান।

দলীয় ১৮০ রানে উইলিয়ামসন ফিরে যাবার পর ক্রিজে টেইলরের সঙ্গী হন নিকোলস। তাকে নিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারের ১৮তম সেঞ্চুরি তুলে নেন অভিজ্ঞ টেইলর। বাংলাদেশের তাইজুলকে ছক্কা মেরে নিজের ৯৭তম বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন টেইলর। তবে বাংলাদেশের বিপক্ষে এটিই তার প্রথম সেঞ্চুরি।
সেঞ্চুরি পূর্ণ করে নিকোলসকে নিয়ে নিউজিল্যান্ডের ইনিংস মেরামতের কাজ করেন টেইলর। নিজের উইকেট টিকিয়ে রেখে যতটা দ্রুত সম্ভব রান তোলার কাজ করেন টেইলর-নিকোলস। বাংলাদেশের উপর রানের বোঝা চাপিয়ে দেয়াই ছিলো নিউজিল্যান্ডের প্রধান লক্ষ্য। দলের সেই লক্ষ্য পূরণ করেন টেইলর-নিকোলস। চতুর্থ উইকেটে ২৪২ বলে ২১৬ রান যোগ করেন তারা। তাই ৫.০৯ গড়ে ৬ উইকেটে ৪৩২ রানের বড় সংগ্রহ দাঁড় করিয়ে নিজেদের প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে নিউজিল্যান্ড।

টেস্ট ক্যারিয়ারের তৃতীয় ডাবল-সেঞ্চুরি তুলে ২০০ রানেই থেমে যান টেইলর। ২১১তম বলে ডাবল-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি। এর আগে ২০১৩ সালে ডানেডিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অপরাজিত ২১৭ ও ২০১৫ সালে পার্থে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২৯০ রানের ইনিংস খেলেন টেইলর। নিজের তৃতীয় ডাবল-সেঞ্চুরির ইনিংসটি ১৯টি চার ও ৪টি ছক্কায় সাজান তিনি। ২১২ বল মোকাবেলা করেন টেইলর।
টেইলরের ডাবলের আগেই টেস্ট ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি তুলে নেন নিকোলস। ১২২তম বলে সেঞ্চুরি তুলে ১০৭ রানে থামেন তিনি। তার ১২৯ বলের ইনিংসে ৯টি চার ছিলো। এছাড়া কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম অপরাজিত ২৩ ও উইকেটরক্ষক বিজে ওয়াটলিং ৮ রান করেন। বাংলাদেশের আবু জায়েদ ৯৪ রানে ৩ উইকেট ও তাইজুল ৯৯ রানে ২ উইকেট নেন।

২২১ রানে পিছিয়ে থেকে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে দ্বিতীয় বলেই প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। বাউন্ডারি দিয়ে রানের খাতা খোলা তামিম নিউজিল্যান্ডের পেসার ট্রেন্ট বোল্টের বলে বোল্ড হন। হ্যামিল্টনে ৭৪, ১২৪ রানের পর এই টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৭৪ রান করেছিলেন বাংলাদেশের এই ড্যাশিং ওপেনার। এবার ৪ রানে থামতে হয় তাকে। এরপর তিন নম্বরে নেমে নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি বাংলাদেশের বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান মোমিনুল হক। বোল্টের দ্বিতীয় শিকার হবার আগে ১০ রান করেন তিনি। প্রথম টেস্টে ১২ ও ৮ রানের এবার প্রথম ইনিংসে ১৫ রান করেছিলেন মোমিনুল।

এবারও ব্যাট হাতে ভালো শুরু করেছিলেন আরেক ওপেনার সাদমান ইসলাম। কিন্তু নিজের ইনিংসটি বড় করতে পারেননি তিনি। ২৯ রানে বিদায় নেন সাদমান। এবারের সফরে বাকী তিন ইনিংসে তার রান ছিলো- ৩৭, ২৪ ও ২৭।
৫৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে দিনের শেষভাগে চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। দলকে চাপমুক্ত করতে না পারলেও দিনের শেষভাগে আর কোন উইকেট পড়তে দেননি মোহাম্মদ মিথুন ও সৌম্য সরকার। মিথুন ২৫ ও সৌম্য ১২ রানে অপরাজিত আছেন। নিউজিল্যান্ডের বোল্ট ২টি ও নিকোলস ১টি উইকেট নেন।
স্কোর কার্ড :
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস : ২১১/১০, ৬১ ওভার (তামিম ৭৪, লিটন ৩৩, ওয়াগনার ৪/২৮)।
নিউজিল্যান্ড প্রথম ইনিংস : (তৃতীয় দিন শেষে ৩৮/২, ১১.৪ ওভার, উইলিয়ামসন ১০*, টেইলর ১৯*)।
জিত রাভাল ক সৌম্য ব আবু জায়েদ ৩
টম লাথাম ক লিটন ব আবু জায়েদ ৪
কেন উইলিয়ামসন ক এন্ড ব তাইজুল ৭৪
রস টেইলর ক লিটন ব মুস্তাফিজুর ২০০
হেনরি নিকোলস বোল্ড ব তাইজুল ১০৭
কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম অপরাজিত ২৩
বিজে ওয়াটলিং ক সৌম্য ব আবু জায়েদ ৮
অতিরিক্ত (লে বা-৫, নো-১, ও-৭) ১৩
মোট (৬ উইকেট, ডি. ৮৪.৫ ওভার) ৪৩২
উইকেট পতন : ১/৫ (লাথাম), ২/৮ (রাভাল), ৩/১৮০ (উইলিয়ামসন), ৪/৩৯৬ (নিকোলস), ৫/৪২১ (টেইলর), ৬/৪৩২ (ওয়াটলিং)।
বোলিং :
আবু জায়েদ : ১৮.৫-২-৯৪-২।
এবাদত হোসেন : ১৬-২-৮৪-০ (ও-১)।
মুস্তাফিজুর : ১৪-২-৭৪-১ (ও-২, নো-১)।
সৌম্য : ৬-০-৩৫-০।
তাইজুল : ২১-০-৯৯-২।
মোমিনুল : ৯-০-৪১-০।
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস :
তামিম ইকবাল বোল্ড ব বোল্ট ৪
সাদমান ইসলাম ক ওয়াটলিং ব হেনরি ২৯
মোমিনুল হক ক সাউদি ব বোল্ট ১০
মোহাম্মদ মিথুন অপরাজিত ২৫
সৌম্য সরকার অপরাজিত ১২
অতিরিক্ত (-) ০
মোট (৩ উইকেট, ২৩ ওভার) ৮০
উইকেট পতন : ১/৪ (তামিম), ২/২০ (মোমিনুল), ৩/৫৫ (সাদমান)।

এসএইচ/