বাংলাদেশের উন্নতি সবসময়ই ভারতের জন্য আনন্দের: মোদি
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৮:৪৫ পিএম, ১১ মার্চ ২০১৯ সোমবার | আপডেট: ০৯:৪৪ পিএম, ১১ মার্চ ২০১৯ সোমবার
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেছেন, বাংলাদেশের উন্নতি সবসময়ই ভারতের জন্য আনন্দের বিষয় এবং প্রেরণার উৎস।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নতি ভারতের জন্য সবসময়ই একটি আনন্দের বিষয়তো রয়েছেই উপরন্তু আমাদের জন্য প্রেরণার ও উৎস।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ অপরাহ্নে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে একযোগে তাঁর দেশের আর্থিক সহযোগিতায় বাংলাদেশে চারটি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধনকালে প্রদত্ত ভাষণে একথা বলেন।
শেখ হাসিনা গণভবন থেকে এবং নরেন্দ্র মোদী নয়া দিল্লীস্থ তাঁর কার্যালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দেন।
ভারত-বাংলাদেশ সহযোগিতার প্রসঙ্গ টেনে মোদী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য মহত্যপূর্ণ লক্ষ্য স্থির করেছেন। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে তৈরী করা এবং ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলায় তাঁর রূপকল্পকে বাস্তব রূপ দিতে সহায়তা করা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এক সাথে মিলে বিগত ৫ বছরে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের সোনালি অধ্যায়ের জন্য কাজ করতে পারাকে অত্যন্ত সৌভাগ্যজনক আখ্যায়িত করে মোদী বলেন, ‘আমার পুরো বিশ্বাস রয়েছে বিগত ৫ বছর আমাদের জন্য যতটা গৌরবজনক ছিল, তার চাইতে আগামী ৫ বছরে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরো অধিক উচ্চতায় আসীন হবে।’
প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে- ভারত থেকে দোতলা বাস, একতলা এসি ও নন-এসি বাস এবং ট্রাক আমদানি, ভারতীয় আর্থিক অনুদানে পাঁচ জেলায় (জামালপুর, শেরপুর, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া) ৩৬টি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন, ভারতীয় অনুদানে বরিশাল বিভাগের পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়ায় ১১টি পানি শোধনাগার স্থাপন এবং সার্কভুক্ত দেশসমূহে ভারতের ন্যাশনাল নলেজ নেটওয়ার্ক (এনকেএন) সম্প্রসারণের আওতায় বাংলাদেশে উক্ত নেটওয়ার্কের সম্প্রসারণের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন।
ভারত এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীগণ একত্রে সুইচ টিপে প্রকল্পের ফলক উন্মোচন করেন। পরে ৪টি প্রকল্পের ওপরই অনুষ্ঠানে ভিডিও চিত্র প্রদর্শিত হয়।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন এবং ভারতের বিদেশ মন্ত্রী সুষমা স্বরাজ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। এ সময় ভারত সফররত বাংলাদেশের সংসদ সদস্যদের একটি প্রতিনিধি দল নরেন্দ্র মোদীর দিল্লীস্থ কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন।
ভাষণের শুরুতেই মোদি বাংলায় বলেন, ‘আশা করি যে, বাংলাদেশের সবাই ভাল আছেন।’
পুলাওয়ামায় শহীদদের প্রতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সমবেদনা জানানোয় এসময় তাঁর (শেখ হাসিনা) প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে মোদী শেখ হাসিনা ও নৌকার বিপুল বিজয়ে তাঁকে পুনরায় অভিনন্দন জানান।
তিনি বলেন, ‘সর্বপ্রথমে আমি সাধারণ নির্বাচনে আপনাকে বিপুল সমর্থন প্রদান করায় বাংলাদেশের জনগণকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। সঙ্গে বিপুল ভোট নিয়ে বিজয় অর্জন করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমি আন্তরিক মোবারকবাদ জানাচ্ছি।’
এ সময় বাংলাদেশকে সংসদ সদস্যদের একটি দল সম্প্রতি ভারতে আগমন করায় তাঁদেরকেও অভিনন্দন জানান মোদি।
মোদী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আমার এটি ৬ষ্ঠ ভিডিও কনফারেন্স। এতটা সরলতার সঙ্গে এতবার দু’দেশের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের মধ্যে যোগাযোগ সাধন নিজে থেকেই বলে দিচ্ছে আমাদের দু’দেশের সম্পর্ক কতটা গভীর এবং মজবুত।
তিনি এ সময় ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী এবং ২৬ মার্চ ৪৮ তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশের জনগণকে শুভেচ্ছা জানিয়ে এরমধ্যেই দু’দেশের জনগণ হিন্দুদের পবিত্র উৎসব হোলি উদযাপন করবে উল্লেখ করে দু’দেশের জনগণকেই শুভেচ্ছা জানান।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, বন্ধুরা ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে কানেকটিভি জোরদার করার বিষয়ে আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রূপকল্পকে সবথেকে বড় প্রেরণা হিসেবে মনে করছি। আর এজন্য আমার খুবই আনন্দ হচ্ছে যে, আজ আমরা কেবল যানবাহন এবং কানেকটিভিই নয় একসঙ্গে মিলে জ্ঞান বৃদ্ধিরও পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে ভারতের ন্যাশনাল নলেজ নেটওয়ার্ক এখন থেকে বাংলাদেশের মেধাবী এবং গবেষকরাও ভারতের গবেষকদের সঙ্গে মিলিত হতে যাচ্ছে। যা একটি শক্তিশালী বন্ধনের সৃষ্টি করবে।
বাংলাদেশ সরকারের স্বল্প ব্যয়ে জনগণকে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট প্রদান করার প্রচেষ্টায় তাঁর সরকারের বাস এবং ট্রাক প্রদান অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, পানি বিশুদ্ধকরণ প্লান্ট হাজার হাজার বাড়িঘরে বিশুদ্ধ পানির নিশ্চয়তা বিধান করবে। আর কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এরসঙ্গে সংযুক্ত প্রায় দুই লাখ জনগণ সরাসরি উপকারভোগী হবে। যাদের নিজ বাড়ির পাশেই স্বাস্থ্যসেবা মিলবে।
‘এসব প্রকল্পই সোসাসুজিভাবে জনগণের জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত। এই প্রকল্পগুলো দেখাচ্ছে যে, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক আসলে দু’দেশের জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য এক মহত্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে,’ যোগ করেন তিনি।
নরেন্দ্র মোদী বলেন, ‘ভারত এবং বাংলাদেশের জনগণের সম্পর্ক পারস্পারিক আত্মীয়তা এবং পারিবারিক চিন্তা-ভাবনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।’
নরেন্দ্র মোদী এটাকে তাঁর ‘বিশ্বাস’ এবং ‘অঙ্গীকার’ উভয়ই উল্লেখ করে বলেন, ‘আজ আমার এই বিশ্বাস আজ আরো মজবুত হলো। কারণ, আজকে বাংলাদেশকে আসা বেশ কয়েকজন যুব নেতা এবং সংসদ সদস্যেও সঙ্গে আলাপ করার সুযোগ হয়েছে।’
তিনি বাংলাদেশ থেকে আগত সংসদ সদস্যদের প্রতিভা এবং কর্মচাঞ্চল্যে আগামীতে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের উজ্জ্বল ভবিষ্যত দেখতে পাচ্ছেন বলেও উল্লেখ করেন।
তিনি পুনরায় বাংলায় ‘ভারত-বাংলাদেশ বন্ধুত্ব চিরজীবী হোক’ বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।
এসি