ঢাকা, শুক্রবার   ১৫ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রী দেশকে সোনার বাংলায় পরিণত করতে সক্ষম হয়েছেন: আমু

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:৫১ পিএম, ১১ মার্চ ২০১৯ সোমবার

রাষ্ট্রপতির ভাষণে আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি দলের সিনিয়র সদস্য আমির হোসেন আমু বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলার পর্যায়ে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছেন। গত ৩ ফেব্রুয়ারি সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণে আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর এ আলোচনা শুরু হয়। ওই দিন চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাব উত্থাপন করলে সরকারি দলের সদস্য আ. স. ম ফিরোজ তা সমর্থন করেন।

গত ৩০ জানুয়ারি একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম ও বছরের প্রথম অধিবেশনের শুরুর দিন সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সংসদে ভাষণ দেন।
রাষ্ট্রপতির ভাষণে আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আজ ২৫তম দিনে চিফ হুইপ নুর-ই-আলম চৌধুরী, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সরকারি দলের আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, আবু রেজা মুহাম্মদ নেজাম উদ্দিন ও বিরোধীদলীয় সদস্য বেগম রওশন এরশাদ আলোচনায় অংশ নেন।

আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি দলের সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ ও অপার সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এখন বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে। এতে এখানে কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে। ভবিষ্যতে এদেশে কোন বেকার থাকবে না।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ২০০৫-২০০৬ অর্থবছরে বিএনপি আমলে মাথাপিছু আয় ছিল ৫৪৩ মার্কিন ডলার এখন সেটা হয়েছে ১৭৫১ মার্কিন ডলার, দারিদ্র্যের হার ৪১ দশমিক ৫ ভাগ থেকে ২১ দশমিক ৮ শতাংশে নেমে এসেছে, প্রবৃদ্ধির হার ৫ দশমিক ৪০ শতাংশ থেকে ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, রফতানি ১০ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ৩৬ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে, জিডিপির আকার ৪ লাখ ৮২ হাজার ৩৩৭ কোটি থেকে ২০ লাখ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে, রিজার্ভ ৩ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ৩৩ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে, তখন মূদ্রাস্ফীতি ছিল ৭ দশমিক ১৬ শতাংশ আর এখন ৫ দশমিক ৫১ শতাংশ।

আমির হোসেন আমু বলেন, বিশ্ব যখন বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল বলে তখন আমাদের দেশের তথাকথিত মাঠের বিরোধীদল উন্নয়ন চোখে দেখে না। বিশ্ব যখন এদেশের প্রশংসায় পঞ্চমুখ তখন তারা সরকারের সমালোচনায় ব্যস্ত। তারা সরকারের নেতিবাচক দিক তুলে ধরার চেষ্টা করলেও আজ পর্যন্ত তা পারেনি। সরকার যখন পদ্মা সেতু করে তখন তারা এটাকে আওয়ামী লীগের সেতু মনে করে, এর বিরোধীতাও তারা করে। সরকার বিনা পয়সায় বই দিচ্ছে। তারা সেই বইয়ের ২ কোটি পুড়িয়ে দিয়েছে। তারা মনে করে এই বইগুলো আওয়ামী লীগের সন্তানেরা পড়বে। তারা কমিউনিটি ক্লিনিকের কাজ বন্ধ করে দিয়েছিল।

তিনি বলেন, ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে জিডিপির প্রবৃদ্ধিতে বাংলাদেশ এগিয়ে আছে। ভারতের সাথে ৬৮ বছরের ছিটমহল সমস্যা সমাধান করা হয়েছে। এর ফলে অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ বৈধ নাগরিকত্ব পেয়েছে। বাংলাদেশ এখন বিশাল সমুদ্রসীমা ও ব্লু ইকোনমির অধিকারী। গত ১০ বছরে জিডিপির আকার প্রায় চারগুণের বেশি বেড়েছে। শিশু মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ৪১ থেকে নেমে ২৪-এ দাঁড়িয়েছে। গত ১০ বছরে ১ কোটি ৯৫ লাখ নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে।

দেশের উন্নয়নে সরকার অনেক বড় বড় প্রকল্প গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য দেশের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছে।
তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াতের ওপর এদেশের মানুষের আস্থা নেই বলে জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের প্রতিটি পদক্ষেপ, এদেশের মানুষ আর গণবিরোধী কাউকে ভোট দেবে না। তিনি তার বক্তব্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পটভূমি তুলে ধরেন।

তোফায়েল আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে সম্মানিত করা হয়েছে। যেই বাংলাদেশ ছিল বিশ্বে দরিদ্রতম দেশ তা এখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের রোল মডেল। আমার গ্রাম আমার শহর এই শ্লোগানে এখন বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আগে গ্রামে ছিল অন্ধকার, পুল-কালভার্ট, রাস্তাঘাট কিছুই ছিল না, শিশুরা স্কুলে যেত খালি পায়ে। এখন গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অবকাঠামো ব্যাপকহারে উন্নয়ন হয়েছে। গ্রামের মানুষের আর্থ-সামজিক উন্নয়ন হয়েছে। জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এসেছে।

তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসে মার্চ মাসের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, ৭ মার্চে জাতির পিতা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন, এরই ধারাবাহিকতায় তিনি ২৫ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। এই মাসেই জাতির পিতা বাঙালি জাতির মুক্তির দিশা ঐতিহাসিক ৬ দফা ঘোষণা করেছিলেন এবং এই মাসেই তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতার জন্ম না হলে আমরা এদেশ পেতাম না। তাঁর দীর্ঘ ২৩ বছরের আন্দোলনের ফসল হচ্ছে আজকের বাংলাদেশ।

চিফ হুইপ নূরে আলম চৌধুরী লিটন বলেন, বাজেটের আকার বৃদ্ধি পাওয়ায় কর্মপরিধিও বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার যে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে তার সুফল দেশের মানুষ পাচ্ছে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মও পাবে।
বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাঙালি জাতি যেমন স্বাধীন দেশ পেতো না তেমনি শেখ হাসিনার জন্ম না হলে এদেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন হতো না। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর যেসব সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন, অন্য কারো পক্ষে তা সম্ভব হতো না। তিনি প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন বলে দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন দ্রুততার সঙ্গে হয়েছে, পার্বত্য শান্তি চুক্তি হয়েছে ও পাহাড়ে শান্তি নেমে এসেছে, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করা সম্ভব হয়েছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে, সমূদ্রসীমা নির্ধারণ সম্ভব হয়েছে, ছিটমহল সমস্যার সমাধান হয়েছে, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট আকাশে উৎক্ষেপণ সম্ভব হয়েছে, ১১ লাখ মুসলিম রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়া সম্ভব হয়েছে এবং সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব হচ্ছে।

এসএইচ/