ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪,   পৌষ ৮ ১৪৩১

অস্ট্রেলিয়ান সেই সিনেটরের মাথায় ডিম ভাঙলো কিশোর

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৫:০৪ পিএম, ১৬ মার্চ ২০১৯ শনিবার

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে বর্বরোচিত হামলা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে সমালোচনার মুখে পড়া সেই অস্ট্রেলিয়ান বর্ণবাদী সিনেটর ফ্রেসার অ্যানিংয়ের মাথায় প্রকাশ্যে ডিম ভেঙেছে এক কিশোর। পরে শুরু হয় হইহুল্লোড়।

হামলার জন্য অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের মুসলিম অভিবাসীদের দায়ী করে বক্তব্য দিয়েছিলেন ‘উগ্রপন্থী’ পরিচিত কুইন্সল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের ডানপন্থী এ সিনেটর। এরপর থেকেই তিনি তীব্র সমালোচনার মুখে। শেষ পর্যন্ত বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তার মাথায় ডিম ভাঙা হলো।

এক হাত দিয়ে সিনেটরের মাথায় ডিম ছুড়ছে, আরেক হাত দিয়ে নিজেই ঘটনাটির আবার ভিডিও করছে এক কিশোর- এমন ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

ভিডিওটিতে দেখা গেছে, অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে সিনেটর ফ্রেসার অ্যানিং সাংবাদিকদের ব্রিফ করছিলেন। তখন পাশ থেকে হঠাৎ করে এক কিশোর তার মাথায় ডিম ছুড়ে মারে। ডিমটি ভেঙে ভেতরের অংশ তার মাথায় লেগে যায়।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বলছে, অপত্তিকর মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে অজ্ঞাতপরিচয় এক কিশোর সিনেটরের মাথায় ডিম ভেঙেছে। সিনেটর তখন ক্ষেপে যান। ওই কিশোরকে পেটানোর জন্য রাগে এগিয়ে যান ফ্রেসার। পরে তার সঙ্গে থাকা সরকারি কর্মকর্তা এবং নিরাপত্তা কর্মীরা তাকে আগলে নেন। যদিও মুহূর্তেই কিশোরকে তিনি কয়েকটি থাপ্পর দিয়েছেন শক্ত হাতে।

পরে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা কিশোরকে আটকে জিজ্ঞাসবাদ করেন। একপর্যায়ে বিপজ্জনক কিছু না পেয়ে তাকে ছেড়ে দেন তারা।

এর আগে শুক্রবার (১৫ মার্চ) ক্রাইস্টচার্চে দুই মসজিদে হামলায় ৪৯ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় পাল্টা মুসলমানদেরই দায়ী করে বিবৃতি দেন ফ্রেসার অ্যানিং।

তাতে তিনি বলেন, মুসলিম অভিবাসীরা অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডবাসীর মধ্যে এক ধরনের ‘ভয়’ সৃষ্টি করছে। যে কারণেই আজকের এ হামলা। ক্রাইস্টচার্চে হামলায় দেশের জাতীয়তাবাদকে দায়ী করা যাবে না। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের অভিবাসী পদ্ধতি এ হামলার দায় এড়াতে পারবে না।

সিনেটর বিশ্বে বিগত হামলার কথা উল্লেখ করে স্পষ্ট বলেন, এখন মুসলিমদের ওপর হামলা হয়েছে। এছাড়া মুসলমানরাইতো সব সময় হামলা করেন। ফ্রেসার অ্যানিং এও বলেন, আমি আমাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে যেকোনো ধরনের সহিংসতার সম্পূর্ণ বিরোধিতা করছি। ওই বন্দুকধারীর এ কর্মকাণ্ডকে পুরোপুরি নিন্দা জানাচ্ছি। তার বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাওয়া হোক।

এ ধরনের সহিংসতা কখনই ন্যায্যতা অর্জন করতে পারে না উল্লেক করে সিনেটর বলেন, এমন সহিংসতা আমাদের প্রতিরোধ করতে হবে। এছাড়া অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড উভয় দেশেই মুসলিম অভিবাসী দিনদিন বাড়ছে, আর আমাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে এক ধরনের ‘ভীতির’ সৃষ্টি করছে। যা এ হামলার বহিঃপ্রকাশ।

ফ্রেসার অ্যানিং বর্বরোচিত এ হামলার নিন্দা জানিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু পুরো বক্তব্যতেই তিনি পাল্টা বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের দোষারোপ করেছেন। আর বিতর্কিত এ বক্তব্যের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন সিনেটর।

শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুর দেড়টার দিকে ক্রাইস্টচার্চে ডিনস অ্যাভ মসজিদ ও লিনউড মসজিদে এবং আরেকটি স্থানে এ হামলা হয়। এতে অন্তত ৪৯ মুসল্লি নিহত হন। এদের মধ্যে তিনজন বাংলাদেশি। আহত হয়েছেন আরও ৪৯ জন। এদের মধ্যেও একাধিক বাংলাদেশি। তবে বর্বরোচিত হামলা থেকে অল্পের জন্য বেঁচে যান দেশটিতে সফররত বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা।