ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১৪ ১৪৩১

বেনাপোল-যশোর মহাসড়ক ৬ লেনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৭:১০ পিএম, ১৯ মার্চ ২০১৯ মঙ্গলবার

যশোর-বেনাপোল মহাসড়কে পুরাতন জীর্ণ অকার্যকর গাছ অপসারণ ও সড়কটি ৬ লেনে উন্নতি, বেনাপোলকে স্বতন্ত্র বঙ্গবন্ধু স্থলবন্দরকরণ, রাত ১০টা পর্যন্ত পাসপোর্টযাত্রীদের জন্য ইমিগ্রেশন চালু রাখা, খুলনা-কলকাতা মৈত্রী-বন্ধন ট্রেন সার্ভিসে বেনাপোল স্টেশন হতে ২০০টি সিট বরাদ্দ রাখাসহ বন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়নের দাবিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনসহ বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন সংগঠন।

মঙ্গলবার দুপুর দেড়টায় সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশন মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্টিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বেনাপোল সিএন্ডএফ এসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান স্বজন বলেন, বেনাপোল স্থলবন্দর দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্ববৃহৎ স্থল বন্দর। ভারতের সাথে অসম বাণিজ্যে বেনাপোল বন্দরের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিবছর দেশের সিংহভাগ শিল্প কলকারখানা ও গার্মেন্টস ইন্ডাষ্ট্রির মালামাল আমদানি হয় এই বন্দর দিয়ে এবং সার্বিকভাবে এখানে ৩০ হাজার কোটি টাকার মালামাল আমদানি-রফতানি হয় এবং ৫ হাজার ৫’শ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়ে থাকে।

ইতিমধ্যে এ বন্দরটি এশিয়ান হাইওয়ের সাথে সংযুক্ত হয়েছে এবং ৪ দেশীয় ট্রানজিট কোরিডোর এই বেনাপোল-পেট্রাপোল। ভারতের কোলকাতা থেকে বেনাপোল অত্যন্ত সন্নিকটে বিধায় কম সময়ে এ বন্দর দিয়ে মালামাল আমদানি করা সম্ভব। প্রতিদিন এই পথে ৮/১০ হাজার পাসপোর্ট যাত্রী ভারত-বাংলাদেশ যাতায়াত করে থাকে। দু-দেশের প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবির কথা বিবেচনা করে কোলকাতা-বেনাপোল-খুলনা রুটে সরাসরি যাত্রীবাহী ট্রেন চালু হয়েছে। আন্তদেশীয় ঐতিহাসিক ট্রানজিট চুক্তি বাস্তবায়ন হয়েছে বেনাপোল বন্দর দিয়ে।

যশোর-বেনাপোল সড়ক আন্তর্জাতিক মানের প্রশস্তকরন এবং পরবর্তীতে ৬ লেন করার লক্ষ্যে পুরাতন জীর্ন এবং অকার্যকর গাছ (যা প্রতিনিয়ত কাভার্ড ভ্যান, দূরপাল্লার পরিবহন এবং মালবাহী ট্রাক পাশের গাছ সহ উপরের ডালের সাথে ধাক্কা খেয়ে প্রতিনিয়ত দূর্ঘটনার শিকার হচ্ছে এমনকি ঝড় হলেই গাছ সড়কের এবং বাড়ির উপরে উল্টে পড়ছে) অপসারন জরুরি। উল্লেখ্য যে, ইতিমধ্যে চাঁচড়া হতে পালবাড়ি মোড় যশোর-খুলনা রোডে সড়ক প্রশস্তকরণের লক্ষ্যে অনেক গাছ কেটে ফেলা হয়েছে।

যশোর জেলার সবচেয়ে বড় স্থাপনা বেনাপোল স্থলবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানের উন্নয়ন করার লক্ষ্যে দীর্ঘদিনের যশোরবাসীর চাওয়া বেনাপোলকে পৃথক এবং পুর্ণাঙ্গ স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষ (স্বতন্ত্র বঙ্গবন্ধু স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ) করা প্রয়োজন। উল্লেখ্য যে, ভারতবর্ষের ব্যবসায়ীরা বেনাপোল বন্দরের জায়গা এবং মালামাল উঠানামার ইকুইপমেন্টসের স্বল্পতার কারণে এ বন্দর ব্যবহারে তারা খুবই অসন্তষ্ট। পূর্নাঙ্গ স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষ হলে (চিটাগং, মংলা, পায়রা বন্দরের ন্যয়) বন্দরের প্রশাসনিক এবং অবকাঠামগত সার্বিক সুবিধা বিদ্যমান থাকবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, বাংলাদেশের বেনাপোল এবং ভারতের পেট্রাপোল একটি আন্তর্জাতিক আগমন এবং বর্হিগমন পথ। এ পথে ব্যবসায়ী চিকিৎসার্থী এবং ভারতীয় বিভিন্ন প্রদেশের শিক্ষার্থীসহ হাজার হাজার পাসপোর্টযাত্রী যাতায়াত করে । এ বন্দরের কার্যক্রম ২৪ ঘন্টা চালু থাকলেও সকাল ৭ টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ইমিগ্রেশন কার্যক্রম খোলা থাকে। সার্বিক দিক বিবেচনায় কমপক্ষে সকাল ৬টা হতে রাত ১০টা পর্যন্ত ইমিগ্রেশন কার্যক্রম চালু রাখা জরুরী। সেক্ষেত্রে একদিকে যেমন ব্যবসায়িরা সুবিধা পাবেন, অন্যদিকে প্রত্যেক যাত্রী এর সুফল ভোগ করবে।

এছাড়া বাংলাদেশ হতে প্রতিদিন প্রায় ৮০ থেকে ১০০টি পরিবহনের যাত্রীরা ভারতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে সরাসরি বেনাপোলে আসে, যা বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দরের মাধ্যমে যাতায়াত করে। উল্লেখ্য যে, প্রতিদিন প্রায় ৮/১০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করে। যেহেতু বেনাপোল স্টেশনে খুলনা এবং যশোরের যাত্রীদের ইমিগ্রেশন কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়, সেহেতু বেনাপোল হতে যাত্রী ইমিগ্রেশন করে ট্রেনে উঠলে কোনো প্রকার সমস্যা হওয়ার কথা নয়, একই সাথে যশোরের যে সিট বরাদ্দ আছে এখান থেকে যদি কেউ টিকিট কেটে বেনাপোল ষ্টেশনে ইমিগ্রেশন কার্যক্রম করে কলকাতা যেতে চাই সেখানেও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। এমতাবস্থায়, বন্ধন এক্সপ্রেসটি যাহাতে পুরাপুরি প্যাসেঞ্জার পূর্ণ অবস্থায় খুলনা-কলকাতা চলাচল করতে পারে সেজন্য বেনাপোল ষ্টেশনে ২০০টি সিট বরাদ্দ করা প্রয়োজন বলে তারা জানান।

বেনাপোল বাইপাস সড়কের সামনে (ফায়ার সার্ভিসের) ট্রাফিক আইল্যান্ড রেখে বাইপাসের সাথে মেইন সড়কে ২০ গজ জয়েন্ট সড়ক নির্মান জরুরী। নাভারন ব্রীজের পশ্চিম পাশে কমপক্ষে ১০/১২ ফিট সড়ক চওড়া করা আবশ্যক (যেহেতু সেখানে পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে)। গদখালি ব্রীজের পশ্চিম পাশে এবং বেনেয়ালি বাকে (টার্নিং পয়েন্ট) দক্ষিণ পাশে সড়কটি ৫/৭ ফিট চওড়া করা জরুরী। যশোর চাঁচড়া মোড়ে গোল চত্বরটি ছোট করা এবং দৃষ্টিনন্দন করাসহ সড়কটি চওড়া করা প্রয়োজন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বৃটিশ ভারতের প্রথম জেলা যশোর। মুক্তিযুদ্ধের প্রথম স্বাধীন জেলা যশোর। আর যশোরকে আরও সমৃদ্ধ করেছে উপমহাদেশের অন্যতম বৃহৎ স্থলবন্দর ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম ঐতিহাসিক স্থান এই বেনাপোল। ১৯৭৪ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এখানে এসে বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দরকে একটি আধুনিক বন্দরে পরিনত করার স্বপ্ন দেখেছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় আমাদের এ অদম্য চেষ্টা, সে কারণে আমাদের এই লড়াইয়ে আপনারাও প্রথম সারির সৈনিক। আমরা আপনাদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে সমস্যা সমাধানের জোর দাবি জানাচ্ছি।

সংবাদ সম্মেলনে এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি শামছুর রহমান, সিনিয়র সহ-সভাপতি নুরুজ্জামানসহ কার্যকরী কমিটির নেতৃবন্দ, যশোর প্রেসক্লাব সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, লোক সমাজের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আনোয়ারুল কবির নান্টুসহ যশোর ও বেনাপোলের বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকার প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

কেআই/