ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১

বিজিএমইএ নির্বাচনে ১২ অঙ্গীকার স্বাধীনতা পরিষদের

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৫:০৯ পিএম, ২১ মার্চ ২০১৯ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৫:৪২ পিএম, ২১ মার্চ ২০১৯ বৃহস্পতিবার

দেশের তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র নির্বাচনে ভোটারদের ভোট দেওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে চাই স্বাধীনতা পরিষদ। তাই সংগঠন কুক্ষিগত না রেখে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচনী প্রকৃয়া চালুর চেষ্টা করা হচ্ছে। পরিষদের আহ্বায়ক ডেনিম প্রসেসিং প্ল্যান্টের মালিক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম এ কথা বলেন।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে ‘তৈরী পোশাক শিল্পের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।

তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) পরিচালনা পর্ষদ (২০১৯-২১) নির্বাচন হবে আগামী ৬ এপ্রিল। মতবিনিময় সভায় আগামী নির্বাচনে পোশাক শিল্পের ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনাসহ ১২টি অঙ্গীকার দিয়েছে ‘স্বাধীনতা পরিষদ’।

তিনি বলেন, নির্বাচিত হলে প্রথম কাজ হবে পোশাক শিল্পের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করা। এ জন্য পোশাক শিল্পের ভাবমূর্তি দেশ ও বিদেশে সঠিকভাবে তুলে ধরাই হবে আমাদের প্রথম অঙ্গীকার।

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লক্ষ্য অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছাতে সরকারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে রোডম্যাপ প্রস্তুত করব।

তিনি জানান, পরিবর্তনশীল বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে বহুমুখী পণ্য তৈরি করার জন্য বিজিএমইএতে দেশি-বিদেশিদের সহায়তায় একটি গবেষণা সেল গঠন করা হবে। বিজিএমইএর সব স্ট্যান্ডিং কমিটিকে কার্যকর করা এবং কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি ও সেবার মানসিকতা তৈরি করা হবে। ইউডি ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ আধুনিকায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। উদ্যোক্তাদের সহযোগী কারখানা খুঁজে পাওয়ার জন্য সাব কন্ট্রাকটিংয়ের একটি অ্যাপস তৈরি করা হবে।

জাহাঙ্গীর আলম আরও জানান, কথায় কথায় শ্রমিকরা যেন রাস্তায় বের না হয় সে জন্য ‘শ্রমিক-মালিক ভাই ভাই দেশ গড়তে একসঙ্গে কাজ করতে চাই’-এ স্লোগানকে সামনে নিয়ে কাজ করব।

তিনি জানান, ছোট বড় সব শিল্প যাতে সরাসরি কার্যাদেশ পেতে পারে সে জন্য বিভিন্ন ক্রেতার বিভিন্ন রকম কোড অব কন্ডাক্ট তৈরি করা হবে।বন্ড লাইসেন্স ফায়ার লাইসেন্স ইআরসি, আইআরসিসহ সব লাইসেন্সের মেয়াদ ন্যূনতম তিন বছরে উত্তীর্ণ করতে কাজ করা হবে।

গার্মেন্টস শিল্পে সরাসরি ১০ শতাংশ প্রণোদনা প্রয়োজন উল্লেখ করে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এটি পেতে সরকারের কাছে আবেদন জানাব। এ ছাড়া অনেক সময় রফতানির পর অসাধু ক্রেতারা মূল্য পরিশোধ করে না। এ ধরনের সমস্যা সমাধানে বিজিএমইএর প্রত্যেক সদস্যকে আইনগত সহায়তা করব। পাশাপাশি রফতানি-আমদানিতে সম্পৃক্ত সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যেমন- কাস্টমস ব্যাংক ইন্সুরেন্স এবং পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তিতে বিজিএমইএকে শক্তিশালী মধ্যস্থতাকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হবে।

 

বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, প্রায় পাঁচ বছর পর বিজিএমএমইএর পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন হবে আগামী ৬ এপ্রিল। দুই বছর মেয়াদি পর্ষদের ৩৫টি পরিচালক পদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে ৯টি পদে সরাসরি নির্বাচিত হওয়ায় এবার ২৬টি পরিচালক পদে চির্বাচন হবে। আর নির্বাচিত পরিচালকরা বিজিএমইএর সভাপতি নির্বাচিত করবেন।

স্বাধীনতা পরিষদের আহ্বায়ক ডেনিম প্রসেসিং প্ল্যান্টের মালিক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমসহ ১৮ জন পরিচালক পদে নির্বাচন করছেন।

তারা হলেন- ডিলাক্স অ্যাপারেলসের মো. দেলোয়ার হোসেন, অলিরা ফ্যাশনসের মো. হুমায়ুন রশিদ জনি, নর্দান কর্পোরেশনের রফিক হাসান, এলুরিং ফ্যাশনসের মো. সাইফুল ইসলাম, লিবাস স্টিচের মো. শওকত হোসেন, হানজালা টেক্সটাইলস পার্কের লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) খন্দকার ফরিদুল আকবর, ভ্যান হ্যাপেন ফ্যাশনের মো. জাহাঙ্গীর কবির, জেইন অ্যাপারেলসের মো. জাহিদ হাসান, অ্যাপারেলস বাংলা সোর্সিংয়ের মো. শরিফুল আলাম চৌধুরী, এএস গার্মেন্টেস অ্যান্ড টেক্সটাইলসের কাজী আবদুস সোবহান, টপ টেক্স সোয়েটারসের জহিরুল ইসলাম, জেট এ অ্যাপারেলসের কাজী মাহয্যাবিন মমতাজ, ডিকে গ্লোবাল ফ্যাশনসের মাহমুদ হোসাইন, সাউথ ওয়েস্ট কম্পোজিটের মো. হোসেন সাব্বির মাহমুদ, ওয়েমার্ট অ্যাপারেলসের আয়েশা আক্তার, প্রিয়াংকা ফ্যাশনসের মো. ওয়ালীউল্লাহ এবং গোল্ডেন ডাক অ্যাপারেলসের ওমর নাজিম হেকমত।

নির্বাচনে স্বাধীনতা পরিষদের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরাম। তারা জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করছেন। সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরামের নেতৃত্বে রয়েছেন মোহাম্মদী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবানা হক। নির্বাচনে যৌথ প্যানেল জয়লাভ করলে ফোরামের লিডার হিসেবে বিজিএমইএর প্রথম নারী সভাপতি হবেন রুবানা হক। তিনি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের সহধর্মিণী।

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দেশের রফতানি আয়ের সিংহভাগ অর্জনকারী তৈরি পোশাক শিল্প।সেই শিল্প মালিকদের সর্ববৃহৎ সংগঠন বিজিএমইএ।এ সংগঠনের সঠিক নেতৃত্ব ও সিদ্ধান্তে দেশের পোশাক শিল্পের মর্যাদা বিশ্বের দরবারে সমুন্নত হয়। কিন্তু দু:খের বিষয় হলো প্রতিবারই এ সংগঠনের নেতৃত্ব বাঁছায়ে সমস্যা করা হয়।নির্বাচন বন্ধে নানা উপায় অবলম্বন করা হয়। যার ফলে সংগঠনের সদস্যরা ভোটাধিকার থেকে বঞ্ছিত হয়।দেশ ও দেশের বাইরে পোশাক শিল্পের নেতিবাঁচক প্রভাব পড়ে।তাই স্বাধীনতা পরিষদ ভোটারদের মৌলিক অধিকার আদায়ে সংগঠনের নির্বাচন প্রকৃয়া চালু করতে চাই।

নির্বাচনে বিজয়ের ব্যাপারে স্বাধীনতা পরিষদ কতটুকু আশাবাদী এবং এ প্যানেল সদস্যদের বিজিএমইএ পরিচালনার দক্ষতাইবা কতটুকু আছে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি জানি না। আমার প্যানেল পাশ করবে কি, ফেল করবে। তবে আমি এতোটুকু চাই অনন্ত আমাদের ফেল করার অধিকারটুকু দেওয়া হোক।

এছাড়া আমার প্যানেল সদস্যদের সংগঠন পরিচালনার দক্ষতা অবশ্যই আছে।কারণ তারা যে কারখানার মালিক সেই কারখানায় ৫শ’র বেশি লোককে তাদের পরিচালনা করতে হয়।তাই সুশাসন থাকলে অবশ্যই সবাই তা পারবে।

তিনি বলেন, আমাদের বলা হয়-আমরা ছোট কারখানার মালিক।কিন্তু মনে রাখতে হবে ছোট কারখানার মালিকের সংখ্যাই বেশি।অনেকে বলেছিল আমরা ভোটার হতে পারবো না। আমরা ভোটার হয়েছি।তারা বলেছিল-আমরা নমিনেশন জমা দিতে পারবো না। আমরা তা দিয়েছি।বলেছিল আগামী ৬ তারিখের মধ্যে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করবো। আমরা প্রার্থীতা প্রত্যাহার করি নাই।তাই আমরা আশাবাদী নির্বাচনে ভোটাররা আমাদের পাশে থাকবে।

নমিনেশন পেপার জমা দেওয়ার সময় হামলার বিষয়ে সর্বশেষ জানতে চাইলে তিনি বলেন, নমিনেশন পেপার জমা দিয়ে ফেরার সময় আমাদের উপর হামলা হয়েছিল।যার বিরুদ্ধে আমরা মানববন্ধন করেছি।থানাই জিডি করেছি।নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছি।আমরা বিচার চেয়েছি।এখন বিচারের অপেক্ষায় আছি।ভোটাররাই  প্রকৃত বিচার করবে।

আরকে//