ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বাকশাল কার্যকরে উদ্যোগ নিন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:৫৫ পিএম, ২১ মার্চ ২০১৯ বৃহস্পতিবার

মোহাম্মদ ইউসুফ
“বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রবর্তিত শাসনব্যবস্থা (বাকশাল) কার্যকর থাকলে নির্বাচন নিয়ে কোনো বিতর্ক থাকতো না।বাকশাল ছিল সর্বোত্তম পন্থা।আমি বিশ্বাস করি, বঙ্গবন্ধু যে পদ্ধতিটা (বাকশাল) করে গিয়েছিলেন সেটা যদি কার্যকর করতে পারতেন তাহলে এসব (নির্বাচনী অস্বচ্ছতা)প্রশ্ন আর উঠতো না।” বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক আলেচনাসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
বাকশালকে যদি আপনি সর্বোত্তম রাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থা হিসেবে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন, তাহলে এ পদ্ধতি কার্যকর করতে আপনি প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিচ্ছেন না কেন? আপনার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক তিক্ত অভিজ্ঞতার আলোকেই জাতীয় সঙ্কট দুর করতে ১৯৭৫ সালের ২৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিলুপ্ত করে বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল)গঠন করেছিলেন। এ দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও সুশাসন নিশ্চিত করতে তিনি বাকশাল কর্মসূচি হাতে নিয়েছিলেন। শুধু নির্বাচন নয়, একটি জনবান্ধব শোষনহীন শাসনব্যবস্থা কায়েমের জন্যে বাকশাল কর্মসুচির কোনো বিকল্প নেই।বঙ্গবন্ধু বলতেন, “ সারা বিশ্ব দু’ভাগে বিভক্ত। শোষক আর শোষিত, আমি শোষিতের পক্ষে।” বঙ্গবন্ধু তাঁর প্রথম বিপ্লবের মাধ্যমে আমাদের একটি স্বাধীন দেশ উপহার দিয়েছিলেন।অতঃপর তিনি তাঁর হাতেগড়া স্বাধীন বাংলাদেশে দীর্ঘসময় ধরে পরাশক্তি দ্বারা শোষিত-বঞ্চিত- নির্যাতিত এ জনপদের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে দ্বিতীয় বিপ্লব হিসেবে বাকশাল গঠন করেছিলেন।জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ধনিক-বণিক শ্রেণিসহ সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠী বাকশাল কর্মসূচিকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেনি।বাকশালকে একদলীয় শাসনব্যবস্থা হিসেবে অপপ্রচার করা হয়।স্বাধীনতাবিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল অপশক্তি গোলাপানিতে মাছশিকারের সুযোগ পায়।বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পেছনে বাকশাল গঠন-ই অন্যতম কারণ বলে রাজনীতিসচেতন ব্যক্তিরাই মনে করেন।

শ্রদ্ধেয় প্রধানমন্ত্রী
দীর্ঘদিন দেশ পরিচালনা করতে গিয়ে আপনি নিজেও উপলব্ধি করেছেন, শুধু নির্বাচন নয়, এ দেশে সুশাসন ও সুবিচার নিশ্চিত করতে বাকশাল-ই একমাত্র পদ্ধতি ।তাই, আমার প্রশ্ন, আপনার বাবা-ই ছিলেন বাকশালের স্বপ্নদ্রষ্টা।দেশ ও জনস্বার্থে যে রাজনৈতিক দর্শন (বাকশাল)কার্যকর করা দরকার বলে আপনি মনে করেন, তাহলে সেই বাকশাল কর্মসূচিকে কেন অন্ধকারে রাখা হয়েছে।আপনিতো বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছেন।বাকশালের চেয়ারম্যান হিসেবে বঙ্গবন্ধু তো এ স্বপ্ন বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছিলেন।এটি এখন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নে সীমিত নেই, জনস্বপ্ন-এ পরিণত হয়েছে।বাকশাল নিয়ে অতীতে শুধু নেতিবাচক প্রচারণা চালানো হয়েছে। কিন্তু এখন তো বাকশাল নিয়ে ইতিবাচক প্রচারণা চালানোর উপযুক্ত সময়।বাকশাল সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে যে ভ্রান্ত ও বিভ্রান্তকর ধারণা রয়েছে তা দুর করতে জাতীয় প্রচারমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচার চালানো দরকার।স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তকে বাকশালকে পাঠ্যসূচি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা এখন সময়ের দাবী।

সুপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী
গতকালের বক্তৃতায় আপনি বলেছেন, জিয়াউর রহমানই এ দেশের নির্বাচনব্যবস্থা ধ্বংশ করেছেন। কথাটা শতোভাগ সত্যি।শুধু নির্বাচন নয়ই, গোটা রাজনীতিকেই তিনি ঘোষণা দিয়ে জটিল ও কালিমালিপ্ত করেছেন।তিনি বলেছিলেন, “রাজনীতিকে আমি রাজনীতিকদের জন্যে জটিল করবোই।”(I will make politics dificult for the politicians.এখন জিয়াউর রহমানকে দোষারোপ না করে তার সৃষ্ট রাজনৈতিক জটিলতা নিরসনের দায়িত্ব তো আপনারই।আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা বেশি।দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় ও চলমান উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগ ফের রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হোক, আপনি আবার প্রধানমন্ত্রী হোন- এটি দেশের সিংহভাগ মানুষ চেয়েছিল বলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে নানা মহল থেকে প্রশ্ন ওঠলেও বৃহত্তর স্বার্থে দেশবাসী (বিএনপি-জামায়াত ছাড়া) তা মেনে নিয়েছে।কিন্তু স্থানীয় নির্বাচন কেন প্রশ্নবিদ্ধ হবে, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে না।স্থানীয় সরকারের সিংহভাগ প্রতিনিধি যদি বিরোধীদলেরই হয় তাতে তো সরকারের কিছু যায় আসে না।

বিএনপি’র শাসনামলে তো দেশের বেশিরভাগ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের ছিল।এতে ক্ষমতার কিছুটা হলেও ভারসাম্য হয়, প্রতিষ্ঠিত হয় গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ।বর্তমানে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের হাল এতই বেহাল হয়েছে যে, আওয়ামী লীগ সমর্থিত ভোটারেরাও ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে।চলমান উপজেলা নির্বাচনই এর জ্বলন্ত উদাহারণ। ফলে জনগণ ক্রমশ নির্বাচনবিমুখ হচ্ছে, ভাবমূর্তিসঙ্কট ঘনিভূত হচ্ছে সরকার ও আওয়ামী লীগের।আগামীতে স্থানীয়সরকার নির্বাচন যাতে সকল দলের অংশগ্রহণে উৎসবমুখর ও নিরিবিলি পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়, সেই পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিন।বর্তমান নির্বাচনব্যবস্থা কীভাবে ঢেলে সাজানো যায়- তা নিয়ে বাস্তবমুখি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।জনগুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টি নিয়ে উদাসীন থাকলে- সমগ্র জাতিকে এর খেসারত দিতে হবে।
শেষকথা হলো শুধু নির্বাচন-সমস্যা নয়, সকল সমস্যার সমাধান নিহিত রয়েছে বাকশাল কর্মসূচিতে।