ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

অবহেলিত মোড়ক দিয়ে উচ্চ মানের শিল্পকর্ম

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৩:২৬ পিএম, ২২ মার্চ ২০১৯ শুক্রবার

পার্সেল বা অন্যকোনও বাক্সের মধ্যে মোড়কসহ কত রকম উপকরণই পাওয়া যায়৷ প্যাকেজিং-এর এই সব মালমশলা দিয়ে ওলন্দাজ এক শিল্পী অপূর্ব শিল্পকর্ম সৃষ্টি করছেন৷ সেইসঙ্গে চলছে ফটোগ্রাফি৷

বাবল ব়্যাপ দিয়ে তৈরি ড্রেস, কম্পিউটারের মনিটরের আবরণ দিয়ে তৈরি মাথা ঢাকার কাপড়- এগুলো কি প্রাচীন মাস্টারপিস, নাকি আধুনিক শিল্প?

সুসান ইয়োংমান্স-এর শিল্পকর্মের উপাদান হলো প্যাকেজিং সামগ্রী৷ নেদারল্যান্ডসের ব্রেডা শহরে নিজের স্টুডিওতে এই শিল্পী প্যাকেজিং-এর জন্য প্রয়োজনীয় যাবতীয় বস্তু মজুত করে রাখেন৷ তার মতে, এই সব উপাদান আরও অনেক টেকসই পদ্ধতিতে ব্যবহার করা উচিত৷

শিল্পীর মনে নানা আইডিয়া ঘোরাফেরা করে৷ তিনি বলেন, ‘এটা দেখলেই মনে হয় হেডস্কার্ফ হতে পারে৷ আর এটা জামার হাত হতে পারে৷ এটা দেখলে মনে হয় কারও মাথার উপর কলার হতে পারে৷ ঠিক এ রকম৷’

শিশু হিসেবেই সুসান বাবা-মার সংগ্রহে রাখা শিল্পের বই দেখে মুগ্ধ হতেন৷ আজও তিনি পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতাব্দীর নেদারল্যান্ডসের শিল্পকর্ম থেকে প্রেরণা পান৷ বিশেষ করে রোখির ফান ডেয়ার ভাইডেন অথবা ইয়ান ফান আইক-এর ছবি তাকে নাড়া দেয়৷ সুসান কিন্তু সেই সব ছবির অবিকল নকল করেন না, বরং নতুন করে ব্যাখ্যা করেন৷

সেই কাজে স্টাইরোফোম বিডস অথবা স্বচ্ছ প্লাস্টিকের আবরণ ব্যবহার করেন তিনি৷ সুসান বলেন, ‘যারা আমাকে প্রেরণা জুগিয়েছেন, আমি তাদের সঙ্গে সংলাপ চালাতে চাই৷ তা থেকে নিজস্ব কাহিনি সৃষ্টি করতে চাই৷ মূল চিত্রের মতো দেখতে হলেও আরও কাছ থেকে লক্ষ্য করলে বোঝা যাবে সেটি সমসাময়িক শিল্পকর্ম৷ অর্থাৎ কিছুটা এ কাল, কিছুটা সে কালের ছোঁয়া রয়েছে৷’

এবার ফটোশুট-এর পালা৷ মাথার পেছনে আলোকবৃত্ত হিসেবে স্টাইরোফোম বিডস ব্যবহার করা হচ্ছে৷ প্যাকিং বাক্সের ফাঁক ভরতে যা ব্যবহার করা হয়, সেগুলো দিয়ে গয়না তৈরি হয়েছে৷

শুটিং-এর সময় একটি মাত্র নিখুঁত ছবি তোলাই লক্ষ্য নয়৷ সুসান ইয়োংমান্স কয়েক’শ ছবি তোলেন৷ প্রত্যেকটির ফোকাস আলাদা, নানারকম খুঁটিনাটি বিষয় তাতে ফুটে ওঠে৷ সুসান ইয়োংমান্স মনে করেন, ‘বলতে গেলে এটা আমার চিত্রকর্ম৷ অনেক ছবি তুলে কম্পিউটারের মধ্যে সেগুলো একত্র করি৷ কোনও নির্দিষ্ট মুহূর্ত নয়, বরং প্রত্যেক ফ্রেমের সেরা অংশগুলো একত্র করি৷ একজন চিত্রকার যেমনটা করেন৷’

আমস্টারডাম থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণে ব্রেডা শহরে ৪১ বছর বয়সী এই শিল্পী সপরিবারে বসবাস করেন৷ শিল্প নিয়ে উচ্চশিক্ষার পর ২০০৭ সাল থেকে তিনি প্যাকেজিং-এর উপাদান নিয়ে কাজ করছেন৷ সুসান বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘আমি আসলে কোনও কিছুর খোঁজ করি না, বরং পেয়ে যাই বলা চলে৷ যেমন বাজারে ফল কিনতে গিয়ে কী পেয়েছি দেখুন৷ ফল খাবার পর আমি হয়তো এই মোড়ক দিয়ে কিছু একটা করবো৷’

সুসান ইয়োংমান্স-এর বড় ক্যানভাসের ফটোগ্রাফির দাম প্রায় ৫ হাজার ইউরো৷ আধুনিক এই সব মাস্টারপিস দেখিয়ে দিচ্ছে, কীভাবে প্লাস্টিক দিয়ে শিল্প সৃষ্টি করা সম্ভব৷

সূত্র: ডয়চে ভেলে

একে//