২৮ বছর পর সচল হচ্ছে ডাকসু
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৮:৫১ এএম, ২৩ মার্চ ২০১৯ শনিবার | আপডেট: ০৯:১৬ এএম, ২৩ মার্চ ২০১৯ শনিবার
দীর্ঘ ২৮ বছর পর সচল হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)। গত ১১ মার্চ নির্বাচনের মাধ্যমে আবারও প্রাণ ফিরে আসে ডাকসুর। আজ শনিবার (২৩ মার্চ) এই মেয়াদের প্রথম কার্যকরী সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে যাচ্ছে। ছাত্রদের অধিকার আদায়ে গঠিত সংগঠন ডাকসু নির্বাচন সর্বশেষ অনুষ্ঠিত হয়েছিলো ১৯৯০ সালে। সেবছর ৬ ডিসেম্বর এরশাদ সরকারের পতনের পর শুধু ডাকসু নয়,কোনও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদের নির্বাচন হয়নি।
এদিকে ডাকসুর কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে কোষাধ্যক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং ও ইন্স্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলামকে এই পদে মনোনীত করেন ডাকসুর সভাপতি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আখতারুজ্জামান। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে, ডাকসুর প্রথম কার্যকরী সভা শনিবার সকাল ১১টায় পুরাতন সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত হবে। সভায় নবনির্বাচিত কার্যকর পরিষদের সদস্যদের সঙ্গে পরিচিতি, শুভেচ্ছা বিনিময় ও দায়িত্ব গ্রহণসহ পরবর্তী করণীয় বিষয়ে আলোচনা হবে।
এদিকে নব নির্বাচিত নেতাদের বরণ করে নিতে সার্বিকভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের কার্যালয় (ডাকসু) ভবন। ভবনটির চারপাশের দেয়ালে ও ভেতর রঙ করা হয়েছে। দেয়ালে করা হয়েছে বিভিন্ন কারুকাজ। নিরাপত্তার জন্য ভবনে সিসি ক্যামেরাসহ দরজায় লাগানো হয়েছে নতুন তালা। তবে দ্বিতলবিশিষ্ট ভবনটির দ্বিতীয়তলার যে আটটি কক্ষ থেকে পরিচালিত হবে ডাকসুর কার্যক্রম সেখানে এখনও রাখা হয়নি কোনও আসবাবপত্র। ডাকসু নেতাদের পছন্দ অনুযায়ী আসবাবপত্র আনা হবে বলে জানিয়েছেন সিনিয়র এডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার আবুল কালাম আজাদ।
তিনি বলেন, ‘সব প্রস্তুতি নেওয়া আছে। শুধুমাত্র আসবাবপত্র আনা হয়নি। কারণ একেকজনের পছন্দ একেক রকম হতে পারে। তাই ডাকসু নেতাদের পছন্দ অনুযায়ী আসবাবপত্র আনা হবে। এছাড়া রংয়ের কাজসহ কাঠামোগত উন্নয়নের কাজ গত একমাসের মধ্যেই শেষ করা হয়েছে।
প্রথম কার্যকরী সভায় ইশতেহারে ঘোষিত প্রস্তাবনা তুলে ধরতে চান এজিএস সাদ্দাম হোসেন। তিনি বলেন, ‘কার্যকরী সভায় আমরা সার্বিকভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে প্রকল্প উপস্থাপন করবো যাতে করে ঢাবি একটি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়। ঢাবি যেন বৈশ্বিক মানের গ্র্যাজুয়েট তৈরি করতে পারে এবং আমরা আমাদের ইশতেহারে যে প্রস্তাবনাগুলো দিয়েছি এবং যারা জয়ী হয়নি তাদের প্রস্তাবনাগুলো নিয়ে একটি দীর্ঘমেয়াদি, স্বল্পমেয়াদি প্রকল্প উপস্থাপন করবো, যাতে ঢাবিকে স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়।
গত ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত নির্বাচনে কেন্দ্রীয় পদের ২৩টিতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ মনোনীত প্রার্থী জয়লাভ করলেও বাকি দুটি পদের মধ্যে ভিপি হিসেবে জয়লাভ করেন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুর এবং সমাজসেবা সম্পাদক হিসেবে জয়লাভ করেন আকতার হোসেন। ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) নির্বাচিত হন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী এবং সহ-সম্পাদক (এজিএস) নির্বাচিত হন ছাত্রলীগের ঢাবি ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন। এছাড়া হল সংসদে ১৮টি হলের মধ্যে ৯টি হলেই ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল জয়ী হয়।
নির্বাচনের দিন অনিয়মের অভিযোগ তুলে পাঁচটি প্যানেল নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়। নির্বাচন বর্জন করে পুননির্বাচনের দাবি জানানোর সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছিলেন ভিপি নুর। তাই কার্যকরী সভার আগের দিন পর্যন্ত দায়িত্ব নেওয়া নিয়ে ধোঁয়াশার মধ্যে রেখেছিলেন তিনি। গত ১৮ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট কমিটির সভা শেষে ডাকসুর প্রথম কার্যকরী সভার তারিখ ২৩ মার্চ ঘোষণা করা হয়। সভার একদিন আগে শুক্রবার (২২ মার্চ) বিকালে এক সংবাদ সম্মেলন করে ডাকসু`র ভিপির দায়িত্ব গ্রহণের ঘোষণা দেন নুর।
এসময় তিনি বলেন,‘শিক্ষার্থীদের চাওয়াকে প্রাধান্য দিয়েই দায়িত্ব নিচ্ছি। শিক্ষার্থীরা পুনর্নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছে। আমরাও তাদের দাবির প্রতি একাত্মতা পোষণ করি। শনিবার যে অভিষেক অনুষ্ঠান হতে যাচ্ছে, সেখানে আমরা শিক্ষার্থীদের চাওয়া-পাওয়াকে প্রাধান্য দিয়েই অংশ নেবো ও দায়িত্ব গ্রহণ করবো। একইসঙ্গে ডাকসুর পুনর্নির্বাচনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য সমস্যা সমাধানে কাজ করবো।
টিআর