ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১

কাশির সঙ্গে যক্ষ্মার জীবাণু অন্যের শরীরে ছড়ায়

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:০০ এএম, ২৪ মার্চ ২০১৯ রবিবার | আপডেট: ১১:১৩ এএম, ২৪ মার্চ ২০১৯ রবিবার

একটা সময় ছিলো যক্ষ্মাকে অনেক ভয়ের বিষয় হিসাবে ধরা হতো। দিনে দিনে চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে প্রচীন সেই প্রবাদ যক্ষ্মা হলে রক্ষা নয় এখন এই কথার আর ভিত্তি নয়। এখন সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে যক্ষ্মা থেকে পুরোপুরি রক্ষা মেলে।

সঠিকভাবে, সঠিক মেয়াদে চিকিৎসা নিতে হবে। যক্ষ্মার ওষুধ তো বিনামূল্যে সব জায়গায় পাওয়া যায়। এবিষয় নিয়ে সার্বিক পরামর্শ দিয়েছেন বারডেম জেনারেল হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ও রেসপিরেটরি মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মো. দেলোয়ার হোসেন।

প্রশ্ন : একসময়, একটি বহুল প্রচলিত কথা ছিল, ‘যার হয় যক্ষ্মা তার নাই রক্ষা’। তবে এখন স্লোগানটি পরিবর্তিত হয়েছে। বলা হয়, যক্ষ্মা ভালো হয় নিয়মিত বা সঠিক চিকিৎসায়। যক্ষ্মা রোগটি কী? এই রোগে একজন মানুষ আক্রান্ত হয় কেন?

উত্তর : যক্ষ্মা হচ্ছে একটি বায়ুবাহিত ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ। মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকুলোসিস নামক একটি জীবাণুর মাধ্যমে এটি ছড়ায়। এখানে রোগী মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকুলোসিস ব্যাকটেরিয়া দিয়ে আক্রান্ত হয়। এটি শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ফুসফুসে ঢোকে। এখান থেকে শরীরের বিভিন্ন অংশে চলে যায়।

যতগুলো যক্ষ্মা রয়েছে, এর মধ্যে ৮০ ভাগই ফুসফুসে হয়ে থাকে এবং এটি গুরুতর। কারণ, অন্য যক্ষ্মা একজনের কাছ থেকে আরেকজনের ভেতর ছড়াবে না। তবে ফুসফুসের যক্ষ্মা একজনের কাছ থেকে আরেকজনের ভেতর ছড়াতে পারে।

প্রশ্ন : একজন মানুষ যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হলে তার কী ধরনের সমস্যা হয়?

উত্তর : সাধারণত যক্ষ্মা হলে কাশি, জ্বর জ্বর অনুভব করা, ক্ষুধামান্দ্য, ওজন কমে যাওয়া-এ ধরনের সমস্যা হয়। এ ছাড়া শরীরের অন্যান্য অঙ্গে আক্রান্ত হলে অন্যান্য ধরনের উপসর্গ হয়। তবে সাধারণত ক্ষুধামান্দ্য, জ্বর, কাশি ইত্যাদি সমস্যা হয়।

প্রশ্ন : যক্ষ্মা হলে যে কাশি হয়, কাশির সঙ্গে কি রক্ত আসতে পারে?
উত্তর : যক্ষ্মা হলে রক্ত আসতে পারে। তবে সব রক্ত আসাই যক্ষ্মা নয়। তবে কাশির সঙ্গে যক্ষ্মার জীবাণুটা আরেকজনের শরীরে ছড়াতে পারে। যেহেতু এটা বের হচ্ছে, তাই বাতাসের মাধ্যমে ছড়াতে পারে।

প্রশ্ন : এখন যক্ষ্মা সঠিক চিকিৎসায় ভালো হয়। এই সঠিক চিকিৎসা কী?
উত্তর : যক্ষ্মা হলে পুরোপুরি রক্ষা আছে। অনেক কারণেই তো রক্ত আসতে পারে। যক্ষ্মা রোগীকে ভালো করার জন্য সঠিকভাবে, সঠিক মেয়াদে চিকিৎসা নিতে হবে। যক্ষ্মার ওষুধ তো বিনামূল্যে সব জায়গায় পাওয়া যায়। একজন যক্ষ্মারোগীকে ওষুধ নির্দিষ্ট মাত্রা অনুযায়ী ছয় থেকে নয় মাস খেতে হয়।

প্রশ্ন : দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা যখন হয়, যেকোনো বিষয়ে হোক, তখন সেটি মেনে চলা অনেকের জন্য কঠিন হয়ে যায়। অনেক সময় মানুষ একে নিয়মিত করে না। যক্ষ্মার বেলায় এ রকম হতে পারে। যদি হয় তাহলে ক্ষতি কী?

উত্তর : যক্ষ্মা দীর্ঘমেয়াদি রোগ। এর জন্য দীর্ঘমেয়াদি ওষুধ খেতে হয়। রোগীকে ওষুধ দেওয়ার দুই থেকে তিন মাস পর সে খুব ভালো অনুভব করে। তার জ্বর চলে যায়, কাশি কমে যায়, ওজন বেড়ে যায়। অনেকে বলে, ‘আমি তো ভালো হয়ে গেছি, ওষুধ কেন খাব।’ এ সময় অনেকে ওষুধ খাওয়া ছেড়ে দেয়। ছেড়ে দিলে পরে আবার যক্ষ্মা হবে। কারণ এই রোগের চিকিৎসায় ছয় থেকে নয় মাস সময় লাগবে পূর্ণ চিকিৎসা হতে হলে। তখন যক্ষ্মার ওই ওষুধের জীবাণুর প্রতি কার্যক্ষমতা কমে যায়। এর থেকে ভয়াবহ হলো, যারা ওষুধ ছেড়ে দেয় সে আরেকজনকে ছড়াতে পারে। এটি তখন অন্যেরও হতে পারে।

প্রশ্ন : ডায়াবেটিস রোগীদের কি যক্ষ্মায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি?

উত্তর : ডায়াবেটিস যাদের থাকে, তাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম থাকে। তার দুই থেকে তিনগুণ যক্ষ্মা হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। যাদের ক্ষেত্রে অনেক সময় রোগের যে তীব্রতা সেটিও বেশি হয়। সেটা নিয়ে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি, জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম, ইউএসএইড ফান্ড-বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়েছি। আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি।


টিআর/