ঢাকা, সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১

যথাযথ ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:০৯ এএম, ২৭ মার্চ ২০১৯ বুধবার | আপডেট: ১২:১৬ এএম, ২৭ মার্চ ২০১৯ বুধবার

যথাযথ ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে সারাদেশে পালিত হয়েছে ৪৯তম স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। মঙ্গলবার সূর্যোদয়ের সাথে সাথে জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর শহীদদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী। তারা কিছু সময় নীরবে দাড়িয়ে থাকেন। এ সময়ে বিউগলে বাজানো হয় করুন সুর।

এরপর স্পিকার ড. শিরীন শারমীন চৌধুরী, মন্ত্রী পরিষদ, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, তিন বাহিনী প্রধান, কূটনৈতিকসহ সর্বস্তরের মানুষ, আওয়ামী লীগ পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মধ্য দিয়ে শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।পরে রাষ্ট্রপতি পরির্দশন বইয়ে স্বাক্ষর করেন।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযোদ্ধারা, বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশী কূটনীতিকগণ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সাধারণ জনগণ জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হওয়ার পরপরই সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া জাতীয় স্মৃতিসৌধের মূল ফটক। পরে বিরোধী দলীয় উপনেতা রওশন এরশাদ বীর শহীদদের প্রতি ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এরপর প্রধানমন্ত্রী ধানমন্ডির ৩২ নাম্বারে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। পরে আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসাবে দলের নেতাদের সাথে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন শেখ হাসিনা। এসময় তার সাথে ছিলেন মন্ত্রী, এমপিসহ দলীয় নেতা কর্মীরা।  এরপর আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষও বঙ্গবন্ধুর প্রতকৃতিতে গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এরপর সকালে প্রধানমন্ত্রী শিশু-কিশোরদের কুচকাওয়াজে যোগ দেন। শিশুদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘তোমরাই গড়ে তুলবে আগামী দিনে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।’ পরে তিনি কুচকাওয়াজ উপভোগ করেন।

বিকেলে বঙ্গভবনে বিশেষ সংবর্ধনার আয়োজন করেন রাষ্ট্রপতি মো.আবদুল হামিদ। এতে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবভনে তাকে স্বাগত জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও তার স্ত্রী রাশেদা খানম। সেখানে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিককর্মীরা উপস্থিত ছিলেন, শিক্ষক,সাংবাদিক, আইনজীবী, চিকিৎসকসহ আমন্ত্রিত বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণে উৎসবমুখর মিলন মেলায় পরিণত হয়। অনুষ্ঠানে শিশুরা দেশের গান উপস্থাপন করে।

এসময় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত অভ্যাগতদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরপর রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী যৌথভাবে স্বাধীনতা দিবসের কেক কাটেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক উপস্থিত ছিলেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গভবনে গেলে লাল-সবুজ রঙের বেলুন ওড়ানো হয়।

স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ,বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর বিভিন্ন হল সমূহ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের হল সমুহ, জাতীয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং এর বিভিন্ন হল সমূহ, আওয়ামী যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, জাসদ, গণবিশ্ববিদ্যালয়, ন্যাপ,গণফোরাম, সাম্যবাদী দল, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, গণতন্ত্রী পার্টি, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম মুক্তিযুদ্ধ ৭১, ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি, মহিলা পরিষদ, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, বাংলা একাডেমিসহ সরকারী-সরকারী বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ফুলেল শ্রদ্ধা জানান বীর শহীদদের প্রতি।

এ সময় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন ও খাদ্যমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, এডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন সিরাজ, এনামুল হক শামীম ও মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, উপদপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপ সুসজ্জিত করা হয় জাতীয় পতাকায়। সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে উত্তোলন করা হয় জাতীয় পতাকা।

জেলা-উপজেলা পর্যায়ে এবং বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনেও স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে আলোচনা সভা ও বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়। বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন আলোকচিত্র প্রদর্শনী, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, সড়কে অলঙ্করণ, আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালন করে উৎসবমুখর পরিবেশে।

দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বাংলাদেশ টেলিভিশন, বেতারসহ বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশনগুলো বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার এবং সংবাদপত্রগুলো বিশেষ সংখ্যা ও নিবন্ধ প্রকাশ করে।

এ ছাড়া সকালে প্রধানমন্ত্রী প্রতিবছরের মতো এবারও স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে মোহাম্মদপুরে শহীদ পরিবার ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের জন্য ফুল, ফল ও মিষ্টি পাঠিয়েছেন। এদিকে বিকেলে গণভবনে একটি স্মারক ডাকটিকিট এবং ডাক অধিদপ্তরের ডিজিটাল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস ‘নগদ’ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।

মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দুই দিনব্যাপী বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সাভারস্থ জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন,বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে এবং টুঙ্গীপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ।

এছাড়া ২৭ মার্চ বিকাল ৩টা ৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা। এতে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করবেন।

উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের এই দিনে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের স্বাধীন অস্তিত্ব ঘোষণা করেছিলেন বীর বঙ্গসন্তান। ৪৯ বছর আগে ২৫ মার্চ মধ্যরাতে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালিকে চিরতরে স্তব্ধ করে দিতে রাজধানী ঢাকা-সহ সারাদেশে অপারেশন সার্চ লাইট নামে নৃশংস সামরিক অভিযানে গণহত্যা সংগঠিত করে। অভিযানের শুরুতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তাঁর ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে গ্রেফতারের আগে বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। যে কোনও মূল্যে তিনি শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধুর সেই বাণী ওয়্যারলেসের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।

কেআই/