‘শিক্ষার্থীরা বলে- আপনি মুক্তিযোদ্ধা, আপনাকে একটু ছুঁয়ে দেখি’
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০১:৩৬ পিএম, ২৭ মার্চ ২০১৯ বুধবার | আপডেট: ০৭:০৫ পিএম, ২৭ মার্চ ২০১৯ বুধবার
মঞ্চ ও ছোট পর্দার শক্তিশালী অভিনেত্রী মোমেনা চৌধুরী মনে করেন পৃথিবীটা সাহসী মানুষের জন্য। সাহস সঠিক ভাবে কাজে লাগাতে পারলে পৃথিবী জয় করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। সম্প্রতি একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন।
২৬ মার্চ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে মোমেনা চৌধুরী অভিনীত একক নাটক ‘লালজমিন’ এর ২০৩তম মঞ্চায়ন অনুষ্ঠিত হয়। ২০১১ সালের ১৯ মে নাটকটির প্রথম মঞ্চায়ন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এত অল্প সময়ে এত বেশিবার কোনো একক নাটক মঞ্চায়ন হওয়া দেশের নাট্যজগতে একটি আলোচিত ঘটনা। কীভাবে এই কঠিন কাজটি সম্ভব হলো সে সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়েই লালজমিন নাটকের একমাত্র চরিত্র মোমেনা চৌধুরী এসব কথা বলেন।
লালজমিন নাটকটি লিখেছেন মান্নান হীরা। নির্দেশনা করেছেন সুদীপ চক্রবর্তী। মোমেনা চৌধুরী নাটকটি মঞ্চায়নের শুরুর দিকে ইতিহাস বলতে গিয়ে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেন তাদের প্রতি। তার মেয়ে নভেরা তাকে প্রতিনিয়ত উৎসাহ জাগিয়েছিল এমন কথাও বলেন।
তিনি বলেন, প্রথম দিন পার্ট করার পরে তিনদিন ভয়ে মোবাইল বন্ধ রেখেছিলাম। পরে নাট্যকার হীরা ভাই, নির্দেশক সুদীপ ও আমার মেয়ে নভেরা আমাকে প্রচুর সাহস দেয়। তাদের সাহসে আমি সাহসী হয়ে উঠি।
গুণী এই অভিনেত্রী ১৯৮৭ সাল থেকে অভিনয় করছেন। মঞ্চ ও ছোট পর্দায় ছিল তার সমান দাপট। ২০১১ সালে এক ঘটনায় তার চিন্তার জগতে প্রভাব ফেলে। তখন তিনি গঠন করেন শুন্যন রোপার্টরি থিয়েটার। এর ব্যানারে মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে লিখিত নাটক ‘লালজমিন’ এখনো পর্যন্ত ২০৩ বার মঞ্চায়ন অনুষ্ঠিত হয়। শুধুমাত্র দেশের বিভিন্ন জায়গায় নয়, দেশের বাইরে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও কোরিয়ায় দর্শক নন্দিত হয়েছে নাটকটি।
মোমেনা চৌধুরী ‘লালজমিন’ এর যাত্রাপথের ইতিহাস বলতে গিয়ে একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে বলেন, ‘ছোট বেলা থেকে আমি সাহসী ছিলাম। কোন কাজের ঝুঁকি নিতে দ্বিধা করতাম না। যা সিদ্ধান্ত নিতাম তা করতাম। যে কোন কাজ শুরু করলে আমি লেগে থাকতাম।’
একক নাটক লালজমিন প্রদর্শনের পর দর্শকদের কেমন প্রতিক্রিয়া পান এমন প্রসঙ্গে মোমেনা চৌধুরী বলেন, ‘একজন অভিনেত্রী হিসেবে দর্শকদের যে আমি দেখতে পাই তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না।’
তিনি বলেন, ‘লালজমিন প্রথম মঞ্চায়ন হয় ২০১১ সালে। তখন দর্শকদের যে প্রতিক্রিয়া পেতাম এখন তার চেয়ে অনেক বেশি প্রতিক্রিয়া পাচ্ছি। তার প্রমাণ, চারদিক থেকে মানুষ ‘লালজমিন’ ডাকছে। সমাজের সবশ্রেণীর মানুষের কাছে লালজমিন এর গ্রহণযোগ্যতা তৈরী হয়েছে। পাটগ্রামে লালজমিন দু’বার মঞ্চায়ন হয়েছে। একটি একক নাটক একই জায়গায় দু’বার মঞ্চায়ন হওয়া দুর্লভ ব্যাপার। কিন্তু লালজমিন সেই দুর্লভ স্বার্থকতা অর্জন করেছে।
মোমেনা চৌধুরী বলেন, ‘গ্রামের সাধারণ মানুষের পাশাপাশি শহুরে মানুষও নাটকটি টানছে। সচিবালয়ের অনেক সচিব লালজমিন দেখেছেন। বিভিন্ন জেলায় দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসকগণ নাটকটি দেখেছেন। কেউ কেউ দু’বার তিনবার দেখেছেন। শুধু দেখছেন না, তারা আমাকে নাটকটি নিয়ে বিভিন্ন জেলায় পাঠাচ্ছেন। যেমন কয়েকদিন আগে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে করলাম। সেখানে ডিএমপি পুলিশ কর্মকর্তা আছাদুজ্জামান মিয়া ছিলেন। তিনি নাটক দেখে বললেন, নাটকটি তিনি অনেক জায়গায় করাবেন।’
মোমেনা চৌধুরী বলেন, ‘নাটকটি শেষ হলে বিভিন্ন বয়ষ্ক মানুষ যেমন কাঁদেন তেমনি এখনকার ছেলে-মেয়েদেরকেও অশ্রুসজল হতে দেখা যায়। ইতোমধ্যে বিশটা কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে নাটকটির মঞ্চায়ন করেছি। যেখানে কোন আলোকসজ্জা ছিল না। দিন এগারোটায় শো করেছি। সেখানেও আমি দর্শককে কাঁদতে দেখেছি। আবেগে অনেক দর্শক আমাকে জড়িয়ে কেঁদেছে। ছেলে-মেয়েরা বলে, ‘আন্টি আপনি মুক্তিযোদ্ধা। আপনাকে একটু ছুঁয়ে দেখি?’
প্রসঙ্গত, লালজমিন মুক্তিযুদ্ধের পেক্ষাপটে রচিত মঞ্চ নাটক। শুন্যন রোপার্টরি থিয়েটারের ব্যানারে নাটকটির ২০৩ তম মঞ্চায়ন মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত হয়। মান্নান হীরা রচিত ও সুদীপ চক্রবর্তী নির্দেশিত নাটকটির একটি মাত্র চরিত্রে অভিনয় করেছেন মোমেনা চৌধুরী।
আআ/এসএ/